চেন্নাই: রোদ ঝলমলে আকাশ৷ ঠিকরে বেরোচ্ছে সূর্যের আলো৷ প্রথর রৌদ্রে দাঁড়িয়েই ছবি এঁকে চলেছেন তিনি৷ ভাবছেন তো, হঠাৎ কেন খোলা আকাশের নীচে এভাবে ছবি আঁকছেন শিল্পী? আসলে ছবি আঁকার জন্য এটুকুই যথেষ্ট তাঁর৷ কারণ, তাঁর কাছে সূর্যের আলোই হচ্ছে রং, আর তুলি হচ্ছে তাঁর হাতে ধরা আতস কাঁচ৷ তাই দিয়েই দিব্যি ছবি এঁকে ফেলেন তামিলনাড়ুর চিত্রশিল্পী আর. ভিগনেশ৷ শিল্পীর দাবি, দেশে একমাত্র তিনিই এই ভাবে ক্যানভাসে ছবি ফুটিয়ে তুলতে পারেন৷
সূর্যের আলো এসে পড়ছে আতস কাঁচের উপর৷ সেই আলোর তাপে পুড়ে কাঠের উপর তৈরি হচ্ছে চমৎকার সব ছবি৷ এই সকল ছবির স্রষ্ঠা তামিলনাড়ুর ভিগনেশ৷ শুরুটা হয়েছিল কাঠের উপর নিজের নাম লিখে৷ পরে অভিনব রং-তুলিতে ফুটিয়ে তোলেন নানা রকমের ছবি৷ তাঁর কথায়, ‘‘বাড়ির ভিতর বসে ছবি আঁকাটা অনেক সহজ৷ এভাবে রোদে তেতেপুড়ে ছবি আঁকাটা বেশ কষ্টকর৷ কাঠের ক্যানভাসে ছবি ফুটিয়ে তুলতে প্রকৃতির সঙ্গ লাগে৷ আবহাওয়া খারাপ থাকলে ঠিক মতো ছবি আঁকা যায় না৷ আবার সূর্যের নীচে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেও ক্লান্ত লাগে৷ অনেক সময় হাত ব্যথা করে৷’’ ভিগনেশ জানান, একটি ছবি আঁকতে অন্তত চার পাঁচ ঘণ্টা সময় লেগে যায়৷ কিন্তু কী ভাবে আঁকেন এমন ছবি?
শিল্পী জানান, একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় এই ছবি আঁকা হয়৷ সবটাই সূর্যের আলোর খেলা৷ এর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ধৈর্যের৷ তবে স্বীকৃতি পাওয়ার আশায় সূর্যের রং হাতে মাখেননি তিনি৷ বরং তাঁর এই শিল্পকর্মরে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান ভিগনেশ৷ ছবি আঁকার জন্য বেশ সকাল সকাল বাড়ি থেকে বেরতে হয় তাঁকে৷ সকাল ৯টার মধ্যে ছবি আঁকার সরঞ্জাম যেমন-কাঠের ফলক, আসত কাঁচ, গ্লাভস এবং টুপি নিয়ে রওনা দেন তিনি৷ কী শুরু হয়ছিল এই সফর?
২০১৭ সালের কথা৷ আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার ভিগনেশ৷ প্রায় ৩০ দিন শয্যাশায়ী থাকতে হয় তাঁকে৷ সেই সময় ইনস্টাগ্রামে সময় কাটাতে কাটাতেই তাঁর কাছে খুলে যায় শিল্পের নতুন দিগন্ত৷ শিল্পই হয়ে ওঠে সমস্যা ভুলে ঘুরে দাঁড়ানোর উপায়৷ সেই সঙ্গে খুলে যায় অর্থ উপার্জনের একটি দিশা৷ অনলাইন ভিডিয়ো দেখে ছবি আঁকা শিখলেও ভিগনেশ নিজেকে আবিষ্কার করেন লকডাউনের সময়৷
তিনি বলেন, “আমি সেলিব্রিটি, বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্র তারকাদের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে শুরু করি৷ ভালো সাড়াও মেলে। লকডাউনের সময় একটি প্রাইভেট কেবল চ্যানেল ছোটদের বিভাগের জন্য আমার কাছ থেকে ২৫টি ভিডিয়ো অঙ্কন টিউটোরিয়াল কিনেছিল। প্রথমবার, আমি শিল্প থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা উপার্জন করি। আমি রোমাঞ্চিত ছিলাম৷”
নিজের জীবনের কঠিনতম দিনগুলির কথা স্মরণ করে ভিগনেশ বলেন, “আমি একজন সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলাম। এর জন্য আমাকে প্রায়ই অনেক দূরে দূরে সফর করতে হত৷ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হতো৷ ২০১৭ সালে আমি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ি৷ আমার পক্ষে হাঁটাচলা করাটাও কঠিন হয়ে ওঠে।’’ শিল্পী আরও বলেন, ‘‘সেই সময় আমি আমেরিকার জনপ্রিয় সানলাইট উড বার্নিং শিল্পী মাইকেল পাপাডাকিস এর ইনস্টাগ্রামে আপলোড করা একটি ভিডিও দেখতে পাই৷ যা আমীর কাছে একটি স্ফুলিঙ্গ হিসাবে ধরা দিয়েছিল। সেটা দেখার পরই আমি এই ধরনের ছবি আঁকার সিদ্ধান্ত নিই৷ গত কয়েক বছরে নিজেকে একটু একটু করে গড়ে তুলেছি৷ দক্ষতা অর্জন করেছি৷”
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>