মৃত স্বামীর ঋণ শোধ দিতে ধরেছিলেন ‘হাল’, এখন মাসে লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করেন সবিতা

মৃত স্বামীর ঋণ শোধ দিতে ধরেছিলেন ‘হাল’, এখন মাসে লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করেন সবিতা

c40d0701522509b92042d30b3186106f

নাসিকা:  চড়াই উতরাইয়ে ভরা মানুষের জীবন৷ নিজের নিজের মতো সংগ্রাম করে বেঁচে থাকেন প্রতিটি মানুষ৷ সেই লড়াই করেত করতেই কেউ কেউ হয়ে ওঠেন অনুপ্রেরণা৷ সমাজের কাছে গড়ে তোলেন দৃষ্টান্ত৷ যেমন সবিতা লাভাড়ে। নাসিকের বাসিন্দা সবিতা মাত্র অষ্টম শ্রেণি পাশ৷ বিয়ের পর স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখেই সংসার করছিলেন তিনি৷ কিন্তু ভাগ্যের ফেরে কম বয়সেই স্বামীকে হারান। ২০০৮ সালে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় আত্মারামের। স্বামীর মৃত্যুর পর সংসারে বোঝা এসে পড়ে তাঁর একার ঘাড়ে৷ স্বামীহারা সবিতার জীবনে তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার৷ কী করবেন কোনও দিশা খুঁজে পাচ্ছিলেন না৷ কী ভাবে মানুষ করবেন ছোট ছোট দুই সন্তানকে? কী ভাবে চালাবেন  সংসার? 

আরও পড়ুন- লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল নিশানা, দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা DRDO-র

আত্মারামের মৃত্যুর পর কোনও মতে টিমটিম করে চলছিল তাঁর সংসার৷ যে সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়৷ এভাবেই এক বছর পেরিয়ে যায়৷ ইতিমধ্যে তাঁর বাড়িতে এসে পৌঁছয় ব্যাঙ্কের নোটিস৷ তাঁর স্বামী নাকি সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে রেখেছিলেন। সেই ঋণ শোধ করার সময় ফুরিয়ে আসছে৷ ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়, ঋণের পরিমাণ সাত লক্ষ টাকা৷ যে শোধ দিতে হবে সবিতাকে। একথা শোনার পর যেন মাথায় একেবারে বাজ ভেঙে পড়ে৷  এসব যে কিছুই জানা ছিল না তাঁর৷ এবার কী করবেন তিনি? 

সাত লক্ষ টাকা মুখের কথা নয়৷ যেখানে দু’মুঠো আহার জোটে না, সেখানে এত টাকা কী ভাবে জোগাড় হবে? সম্পত্তি বলতে ছিল আড়াই একরের একটি আঙুরক্ষেত এবং একটি সোনার চেন। সেগুলি বিক্রি করলেও এত টাকা মিলবে না৷ বেশিদূর পড়াশোনাও শেখেননি সবিতা যে মোটা বেতনের চাকরি পাবেন। তাহলে উপায়? অনেক ভেবে নিজের জমিতে সব্জি চাষ শুরু করেন সবিতা৷ নিজেই তা বিক্রি করা শুরু করেন। কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হল না। সবজি বিক্রি করে মাসের শেষে ১০ হাজার টাকাও হাতে এল না সবিতার। বুঝলেন এতে হবে না৷ রোজগারের  বিকল্প পথ খুঁজতে শুরু করেন তিনি৷ কারণ সেই সময় সবিতার জীবনের দু’টি লক্ষ্য। এক স্বামীর নেওয়া ঋণ শোধ করা এবং দুই, সংসারের চালিয়ে ছেলেমেয়েদের প্রতিষ্ঠিত করা। সবিতা যখন বিকল্প পথ খুঁজছেন, তখন নতুন মোড় নিল তাঁর জীবন৷ 

মশলা তৈরির জন্য একটি বিশেষ যন্ত্রের খোঁজ পান সবিতা। এক বন্ধুর কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ওই যন্ত্রের দাম ৬৫ হাজার টাকা। সেটি কিনতে তাঁর শেষ সম্বল সোনার হারটাও বিক্রি করে দেন তিনি। সেই সঙ্গে জমানো পুঁজিও যোগ করেন৷ মশলা তৈরিও ওই মেশিনই তাঁকে নতুন সকাল এনে দেয়৷ মশলা তৈরি করে মাসে ৫০ হাজার টাকা রোজগার করেন সবিতা। পাশাপাশি অতিরিক্ত উপার্জনের জন্য সোয়াবিন ও গমের চাষও শুরু করেন। কঠোর পরিশ্রম করে ছ’বছরের মাথায় ব্যাঙ্কের সাত লক্ষ টাকার ঋণ শোধ করে দেন। এক সাক্ষাৎকারে সবিতা বলেছিলেন, ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রতি মাসে ৬০ হাজার টাকা আয় হয় তাঁর৷

তবে এখানেই থেমে যাননি সবিতা৷ যখন মশলা তৈরির কাজ থাকত না, তখন রোজগারের পথ খোলা রাখতে মেয়ের নামে মুদি দোকান খোলেন তিনি৷ সেই সঙ্গে চলতে থাকে নানা ধরের সবজি চাষ৷ ২০১৮ সালে শুধু আখ চাষ করে  মাসে ৫৪ হাজার টাকা রোজগার করেন তিনি৷ 

সবিতার ছেলে ধীরজ এখন প্রতিষ্ঠিত৷ ইলেকট্রনিক্স নিয়ে পড়াশোনা করে চাকরি করছেন। মেয়ে সাধনা রাজ্য পুলিশের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁর কথায়, বিপদের দিনে কোনও আত্মীয়ও পাশে থাকে না৷ নিজের লড়াইটা নিজেকেই করে জিততে হয়৷