উদয়পুর: কিছু না বুঝেই বিজেপি নেত্রী তথা দলের প্রাক্তন মুখপাত্র নুপুর শর্মার বক্তব্যকে সমর্থন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেছিলেন রাজস্থানের উদয়পুরের বাসিন্দা পেশায় দর্জি কানহাইয়া লাল। আর তারই প্রতিবাদে ওই দর্জির মুন্ডচ্ছেদ করে খুন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উদয়পুরে হওয়া এই নৃশংস ঘটনায় রীতিমতো উত্তাল গোটা দেশ। এমনকি ওই যুবকের হত্যার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে। আর তারপরেই সমগ্র উদয়পুর জুড়ে জ্বলে উঠেছে সাম্প্রদায়িক অশান্তির আগুন। এদিন সন্ধ্যায় এই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই হিন্দু এবং মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের কট্টরপন্থী নেতারাই একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নামে বিশাল পুলিশবাহিনী। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাতে আর কোন উত্তেজনা না ছড়ায় তার জন্য এলাকার ইন্টারনেট সংযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যেই এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে রাজস্থান পুলিশ। কিন্তু তারপরেও অশান্তির আঁচ কোনওভাবেই কমছে না। আর তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে এবার আসরে নামলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর মতো বিরোধী নেতা নেত্রীরাও। এই ঘটনা প্রসঙ্গে বুধবার সকালেই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করে একটি টুইট করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের কান্ডারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সকলকে শান্তির পরিবেশ বজায় রাখার আর্জি জানিয়েছেন বলে খবর।
অন্যদিকে একই ভাবে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে টুইট বার্তা দিতে দেখা গিয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকেও। বুধবার সকালে কেজরিওয়াল একটি টুইট বার্তা দিয়ে বলেন, ‘উদয়পুরের ঘটনাটি ভয়াবহ ও বীভৎস। সভ্য সমাজে এই ধরনের নৃশংসতার কোনও স্থান নেই। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। ঘটনায় অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।’ উদয়পুরের এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধীও। এই ঘটনা প্রসঙ্গে রাহুল নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘উদয়পুরের ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডে আমি স্তম্ভিত। ধর্মের নামে বর্বরতাকে মেনে নেওয়া যায় না। যারা এইভাবে নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে সন্ত্রাস ছড়িয়েছে, তাদের অবিলম্বে শাস্তি দিতে হবে। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে মিলেই ঘৃণাকে হারাতে হবে। আমি সকলের কাছে অনুরোধ করছি, শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখুন।’
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার দুপুর ২:৩০ নাগাদ উদয়পুরের ধানমন্ডি এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটেছে। ওই এলাকার স্থানীয় এক দর্জির দোকানে ঢুকে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয় বলে খবর। ইতিমধ্যেই মৃতের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে এবং তাতে জানা গিয়েছে মৃত ওই দর্জির শরীরে মোট ২৬ বার ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। তার জেরে ব্যাপকভাবে রক্তপাত হওয়ার কারণেই মৃত্যু হয়েছে কানহাইয়া লালের। এই গোটা ঘটনার একটি ভিডিও মঙ্গলবার রাতেই ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। ওই ভিডিওতে আবার বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতা এমনকি দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। এরপরেই গোটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে কার্যত উত্তাল হয়ে ওঠে উদয়পুর। সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মঙ্গলবার রাত থেকেই উদয়পুরের ওই এলাকায় জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। এলাকা পাহারার দায়িত্বে রয়েছেন বিশাল পুলিশবাহিনী। একইসঙ্গে যাতে কোনরকম উস্কানিমূলক মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরে ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য বন্ধ করা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাও।