শিলচর: একদিকে যখন তীব্র তাপপ্রবাহ এবং দাবদাহে রীতিমতো প্রাণ ওষ্ঠাগত অবস্থা দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানসহ উত্তর ভারতের একাধিক রাজ্যের ঠিক তখনই প্রবল বৃষ্টি এবং বন্যা পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে কেরল, অসমের মতো একাধিক রাজ্য। গতকাল অর্থাৎ রবিবারই জানা গিয়েছিল, একটানা কয়েকদিন ধরে চলা প্রবল বৃষ্টিপাতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে অসমের একাধিক জেলায়। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি জেলায় পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়েছে যে বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ঠাই নিতে বাধ্য হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। বেশ কয়েক জন নিখোঁজ বলেও জানা গিয়েছে। এমতাবস্থায় সোমবার খবর মিলছে, আকস্মিক এই বন্যা পরিস্থিতির কারণে এই মুহূর্তে বন্যা কবলিত এই রাজ্যে আটকে বহু পর্যটক। এমনকি ভিন রাজ্য থেকে আসা একাধিক এক্সপ্রেস ট্রেনও মাঝপথে আটকে পড়েছে ট্রেন লাইন জলমগ্ন হয়ে যাওয়ার কারণে। সোমবার ভোরে এমনই একটি আটকে পড়া ট্রেন শিলচর-গোয়াহাটি এক্সপ্রেসের ১১৯ যাত্রীকে ট্রেন থেকে উদ্ধার করল ভারতীয় বায়ুসেনা। জানা যাচ্ছে এই এক্সপ্রেস ট্রেনটি বন্যার কারণে কাচার এলাকায় আটকে পড়ে। যেহেতু ওই এলাকার পর থেকে সমস্ত ট্রেন লাইন ইতিমধ্যেই বন্যার জলে ডুবে গিয়েছে তাই ট্রেনটি আর এগোতে পারেনি। এইভাবে মাঝপথে ট্রেনটি আটকে থাকে কয়েক ঘন্টা। শেষমেষ বহুক্ষণ ট্রেনের মধ্যে আটকে থাকা যাত্রীদের উদ্ধারে নামে ভারতীয় বায়ুসেনা এবং বায়ুসেনা আধিকারিকদের তৎপরতায় ওই ট্রেন থেকে ১১৯ যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়।
অন্যদিকে জানা যাচ্ছে অতিবৃষ্টির কারণে ইতিমধ্যেই অসমের বহু জায়গায় আকস্মিক বন্যায় এবং ভূমিধস হয়েছে। ফলে অন্য রাজ্যের সঙ্গে রেল ও সড়ক যোগাযোগ অনেক ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অসম রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, অসমের যে সমস্ত অঞ্চলগুলি ভূমিধসের কারণ সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেই জায়গাগুলি হল নিউ কুনজুং, ফিয়াংপুই, মৌলহোই, নামজেউরাং, দক্ষিণ বাগেতার, মহাদেব টিল্লা, কালিবাড়ি, উত্তর বাগেতার, জিওন এবং লোদি পাংমৌল গ্রাম। বন্যাকবলিত এই সমস্ত জায়গায় প্রায় ৮০টি বাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়াও অসমের এই বন্যার ক্ষয়ক্ষতি প্রসঙ্গে ASDMA-এর তরফ থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, এই বন্যা এবং ভূমি ধসের কারণে অসমের পাঁচটি জেলা জুড়ে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ এই মুহূর্তে গৃহহীন। এছাড়াও জাটিঙ্গা-হারাঙ্গাজাও এবং মাহুর-ফাইডিং-এ রেললাইনের মতো একাধিক রেললাইন ভূমিধসের কারণে অবরুদ্ধ রয়েছে। অন্যদিকে গেরেমলামব্রা গ্রামে মাইবাং টানেলে পৌঁছানোর আগে রাস্তার উপরে ধ্বস নেমেছে। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে ওই এলাকার সড়কপথ এই মুহূর্তে অবরুদ্ধ রয়েছে।
গতকাল, রবিবারই খবর পাওয়া যায় তুমুল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত অসমে ইতিমধ্যেই এক মহিলাসহ মোট তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় দুই হাজার হেক্টর কৃষিজমি। এছাড়াও বন্যা পরিস্থিতিতে অসমের পাঁচ জেলার প্রায় ২৫ হাজার মানুষ এই মুহূর্তে গৃহহীন। তাঁদের উদ্ধারে সেনা এবং আধা সেনাবাহিনী ইতিমধ্যেই শুরু করেছে উদ্ধারকাজ। আবহাওয়া দপ্তর আধিকারিকদের মতে ঘূর্ণিঝড় আসানির প্রভাবেই অসমের বিভিন্ন জেলায় এই ব্যাপক ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়। এর সঙ্গেই জানা যাচ্ছে অতিবৃষ্টির কারণে ইতিমধ্যেই জল বাড়তে শুরু করেছে অসমের একাধিক নদীতে। বহু নদী ইতিমধ্যে বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। ফলে নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষজনদের ইতিমধ্যেই সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। অতিবৃষ্টি এবং বন্যার কারণে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসমের ডিমা হাসাও জেলা। ওই জেলাতেই অধিকাংশ ভূমিধস এবং আকস্মিক বন্যার ঘটনা ঘটেছে বলে খবর।