কলকাতা: এই কাহিনীতে প্রেম আছে, রোম্যান্স আছে, রয়েছে সম্পর্কের মাদকতা৷ তবুও তা অনন্য৷ সকলের চেয়ে আলাদা৷
আরও পড়ুন- মধ্যরাতে নবতিপর পদ্মশ্রী প্রাপককে ঘরছাড়া করল কেন্দ্র
সত্যি, কিছু ভালোবাসার সম্পর্ক লেখা হয় স্বর্গে৷ আর সেটাই প্রমাণ করল সমকামী এই জুটি৷ মাস খানেক আগের ঘটনা৷ সমকামী দুই চিকিৎসকের প্রেমকাহিনী ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়৷ সুরভী মিত্র আর পারমিতা মুখোপাধ্যায়ের বাগদানের অনুষ্ঠান নজর কাড়ে নেটিজেনদের৷ তাঁদের অন্তরঙ্গ অনুষ্ঠানের ছবি ছড়িয়ে পড়ে অন্তর্জালে৷ তবে তাঁদের কথায়, এটা ছিল ‘কমিটমেন্ট রিং সেরিমনি’৷
কিন্তু, কী ভাবে হয়েছিল সম্পর্কের সূত্রপাত? নিজের মুখেই সে কথা জানান ডা. পারমিতা মুখোপাধ্যায়৷ তিনি জানান, কী ভাবে কোথায় সুরভীর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তাঁর৷ কী ভাবে কাছে এলেন একে অপরের৷ পারমিতা জানান, কলকাতায় মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত একটি কনফারেন্সে সুরভীকে প্রথম দেখেন তিনি৷ ওই কনফারেন্সে সুরভী ছিলেন অন্যতম বক্তা৷ আর তিনি ছিলেন শ্রোতার আসনে৷
প্রথমবার সুরভীর কথা শোনার পর, তাঁকে দেখার পর, মুগ্ধ হয়েছিলেন পারমিতা৷ আরও বেশি করে সুরভীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু সুরভী থাকতেন নাগপুরে৷ ফেরার তাড়াও ছিল তাঁর৷ কী ভাবে যোগাযোগ করবেন সুরভীর সঙ্গে? তখন পারমিতাকে নিজেদের ইনস্টাগ্রাম আইডি দেন সুরভী৷ শুরু হয় কথা বলা৷
পারমিতা জানান, এটা ঠিক লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট ছিল না৷ বলা যেতে পারে ভালোলাগা৷ ইনস্টাগ্রামে এক সপ্তাহ কথা বলার সুরভীর কাছ থেকে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চেয়ে নেন তিনি৷ পারমিতার কথায়, ‘‘আমি ঠিক করি আমরা দু’জনে আমাদের বন্ধুদের সঙ্গে কোনও সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যাব। এবং সেখানে গিয়ে ওঁকে প্রোপজ করব৷ আমি ওঁকে আমার প্ল্যানিংয়ের কথা জানাই৷ জিজ্ঞাসা করি, যদি আমি তোমাকে সকলের সামনে বিয়ের প্রস্তাব দিই, তাহলে কি তুমি আমাকে প্রত্যাখ্যান করবে?’’ পারমিতা বলেন, আমার এই কথা শুনে সুরভী বলেছিল, ‘না, আমি কেন এটা করব?’ ওঁর এই কথাতেই আমি আমার উত্তর পেয়ে যাই৷ গোয়া বা মুম্বাইয়ের সমুদ্র সৈকতে যে অনুষ্ঠান হওয়ার কথায় ছিল, সেটা এতটাই গ্র্যান্ড হয়ে যায় যে, তা কমিটমেন্ট সেরিমনি হয়ে ওঠে৷
পেশায় মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সুরভী মিত্র বলেন, সৌভাগ্যবশত পরিবারের তরফ থেকে কোনও বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়নি তাঁকে৷ জানান, শীঘ্রই গোয়ায় পারমিতার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধবেন তিনি৷ আংটি বদল অনুষ্ঠানের মতো এই জুটি তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠানের নাম দিয়েছেন “সিভিল ইউনিয়ন।”
তবে তাঁদের এই সম্পর্ক সহজে মেনে নিতে পারেনি পারমিতার পরিবার৷ তিনি বলেন, ‘‘বাবা আমার সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন বা যৌন প্রবৃত্তি সম্পর্কে জানতেন৷ কিন্তু সম্প্রতি মাকে যখন এই বিষয়টা জানাই, তখন তিনি রীতিমতো হতবাক হয়ে যান৷ এই সম্পর্ক নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতেও পড়েন৷ পরে আমার সুখের কথা ভেবে সম্মতি জানান৷’’
দুই পরিবারের সম্মতিতে পারমিতা-সুরভী এখন হ্যাপি কাপল৷ শেষ পর্যন্ত হয়েছে প্রেমেরই জয়৷ যেখানে ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ কোনটাই এখানে বড় নয়৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>