নয়াদিল্লি: বৈবাহিক ধর্ষণ অপরাধ নাকি অপরাধ নয়, এই প্রসঙ্গে সহমত হতে পারলেন না দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি রাজিব শাকদার এবং বিচারপতি হরিশঙ্কর। জানা যাচ্ছে, বিবাহের পরে স্ত্রীর সঙ্গে বলপূর্বক সহবাস ফৌজদারি মামলার অধীন কিনা এবং এক্ষেত্রে কোনও স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলে তাতে স্বামীর সাজা হবে কিনা সে বিষয়ে আজ অর্থাৎ বুধবার রায় ঘোষণার কথা ছিল দিল্লি হাইকোর্টের। এই মামলা প্রসঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন শুনানিরত দিল্লি হাইকোর্টের দুই বিচারপতি। আর তাই মামলাটি বৃহত্তর বেঞ্চ অর্থাৎ তিন সদস্যের বেঞ্চের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ওই বেঞ্চই আবেদনটিকে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার অনুমতি দিয়েছে বলে খবর।
প্রসঙ্গত এই মামলা প্রসঙ্গে বিচারপতি রাজীব শাকধের এবং বিচারপতি সি হরিশঙ্কর গত ২১ ফেব্রুয়ারি আদেশ সংরক্ষণ করার রায় ঘোষণা করে। কিন্তু এই মামলা প্রসঙ্গে দুই বিচারপতি সহমত পোষণ করতে না পারায় দিল্লি হাইকোর্ট পরে সিনিয়র এডভোকেট রেবেকা জন এবং রাজ শেখর রাওকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করে। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ না হওয়ায় আজ বুধবার মামলাটি বৃহত্তর বেঞ্চের হাতে তুলে দেওয়া হল। সূত্রের খবর, বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধের পর্যায়ে রাখার পক্ষে ছিলেন বিচারপতি রাজীব। অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে বিচারপতি রাজীবের সঙ্গে সহমত পোষণ করতে পারেননি বিচারপতি হরিশঙ্কর। বুধবারের মামলার শুনানিতে বিচারপতি রাজীব জানান, বিনা অনুমতিতে স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে স্বামীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হওয়া উচিত। কিন্তু তাতে সম্মত হননি বিচারপতি হরিশঙ্কর।
উল্লেখ্য এই মামলা নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি থেকে ব্যাপক চাপানউতোর চলছে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার বৈবাহিক ধর্ষণ প্রসঙ্গে পূর্ব আইনের পক্ষে সায় দিলেও পরবর্তীতে আইন পরিবর্তনের পক্ষেই সওয়াল ওঠায়। গত ফেব্রুয়ারীতে এক শুনানিতে সলিসিটর জেনারেল মেহেতা আদালতকে বলেছিলেন, সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জগুলোর পাশাপাশি সামাজিক এবং পারিবারিক জীবনে কি প্রভাব ফেলছে এই মামলা তা নিয়ে আগে গবেষণা করার প্রয়োজন। এর সঙ্গেই বলা হয় আইন, সমাজ, পরিবার ও সংবিধান সংক্রান্ত এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের মতামত জানারও প্রয়োজন রয়েছে। সমস্ত পক্ষের যুক্তি শোনার পরে গত ২১ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালত দ্বারা এই মামলাটি সংরক্ষিত হয়।
উল্লেখ্য, ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে অনুযায়ী দেশে এখনও ২৯ শতাংশেরও বেশি নারী স্বামীর দ্বারা শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হন। গ্রাম এবং শহর উভয় এলাকাতেই এই অপরাধের ঘটনা উত্তরোত্তর বাড়ছে। সমীক্ষা বলছে গ্রামে ৩২ শতাংশ এবং শহরে ২৪ শতাংশ এই ধরনের মহিলা রয়েছে যারা প্রায় প্রতিদিনই স্বামীর হাতে আক্রান্ত হন। এরপরেই একজন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, সঙ্গে আক্রান্ত বেশ কয়েকজন মহিলা আদালতের দ্বারস্থ হন বৈবাহিক ধর্ষণ প্রসঙ্গে আইন পরিবর্তনের দাবি নিয়ে। সেই মামলা সম্পর্কেই আজ রায় ঘোষণার কথা ছিল দিল্লি হাইকোর্টের।