‘বিশ্বে সর্বাধিক করোনায় মৃত্যু হয়েছে ভারতে’, নয়া দাবি WHO-র

‘বিশ্বে সর্বাধিক করোনায় মৃত্যু হয়েছে ভারতে’, নয়া দাবি WHO-র

নয়াদিল্লি: পৃথিবীর উপর করোনাভাইরাসের মত মহামারী আছড়ে পড়ার পর থেকেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে এমন অভিযোগ ২০২০ সাল থেকেই বিভিন্ন সংস্থার তরফ থেকে তোলা হচ্ছে। এবার তাতেই যুক্ত হল খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তথা হুয়ের নাম। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দাবি করেছে, ভারতে করোনা আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যার যে পরিসংখ্যান দেওয়া হচ্ছে তা যথেষ্ট বিভ্রান্তিকর এবং বাস্তবতা থেকে বহু অংশে দূরে। ওই রিপোর্টেই বলা হয়েছে, ভারতে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করোনার বলি হয়েছেন প্রায় ৪৭ লক্ষ মানুষ। অন্যদিকে কেন্দ্রের পরিসংখ্যান বলছে, দেশে এই মুহূর্তে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৫ লক্ষ ২৪ হাজার দুজন। অর্থাৎ কেন্দ্রের দেওয়া তথ্যের প্রায় নয় গুণ বেশি মানুষ করোনার বলি হয়েছেন শুধুমাত্র ভারতেই, এমনটাই দাবি হুয়ের। খুব স্বাভাবিক ভাবেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফ থেকে পরিসংখ্যান সামনে আসায় অস্বস্তিতে পড়েছে কেন্দ্র। সেই সঙ্গে এই পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও পাল্টা প্রশ্ন তোলা হয়েছে ভারত সরকারের তরফ থেকে।

বিতর্কের সূত্রপাত বৃহস্পতিবার রাতে। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির একটি প্রতিবেদন জানিয়েছে, বিশ্বে করোনায় মৃত্যু নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে বিশ্বে ৫৪ লক্ষ নয়, অন্তত দেড় কোটি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। অর্থাৎ হিসেবের বাইরে অন্তত ১ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে বিশ্বের অধিকাংশ দেশই। অন্যদিকে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৭ শতাংশ মহিলা।

অন্যদিকে ৫৩ শতাংশের মধ্যে অধিকাংশই আবার মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত বলে দাবি হুয়ের। এর সঙ্গেই ওই বিবৃতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্বে করোনায় মৃতের সংখ্যার নিরিখে প্রথম স্থানে রয়েছে ভারত। এখনও পর্যন্ত শুধু ভারতেই করোনায় সর্বাধিক মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে ভারতসহ অন্যান্য দেশগুলো করোনায় মৃতের যে পরিসংখ্যান দিচ্ছে তা অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর এবং দুঃখজনক। এই প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বিভাগের আধিকারিক সামিয়া আসমা বলেছেন, ‘বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের সম্মান জানানো আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু সেক্ষেত্রে যদি আমরা সঠিক মৃত্যুর সংখ্যার হিসাব না রাখে তাহলে পরবর্তী সময় করোনার বিরুদ্ধে আরও কঠোর মোকাবিলা করার জন্য যে প্রস্তুতির প্রয়োজন সে প্রস্তুতির সুযোগ হারাবো আমরা।’

অন্যদিকে হুয়ের দেওয়া এই বিবৃতির পরই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যানকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে ভারত সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে এই পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। ভারত সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, যে সমীক্ষা এবং মডেলগুলি ব্যবহার করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে ভারতে করোনায় মৃতের সংখ্যার পরিসংখ্যান দিয়েছে তার বৈধতা, দৃঢ়তা এবং ডেটা সংগ্রহের পদ্ধতি প্রশ্নসাপেক্ষ। ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। তাদের দাবি, ভারতে করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয় সিভিল রেজিস্ট্রেশন সিস্তেম দ্বারা। এক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য এবং দায়বদ্ধ সূত্র ব্যবহার করা হয় সংখ্যাগুলি সংগ্রহ করার জন্য। এই পরিসংখ্যানকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য কিছু ম্যাথমেটিক্যাল মডেল ব্যবহার করে কেন্দ্র দ্বারা প্রকাশিত মৃতের সংখ্যাকে ভুল বলা কখনই উচিত নয়। সেই সঙ্গেই ভারত সরকারের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে হুয়ের প্রকাশিত এই রিপোর্ট, বাস্তবসম্মত একেবারেই নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × two =