চিনে চোখ রাঙাচ্ছে করোনা, কতটা প্রভাব পড়বে ভারতে? তাহলে কি আবার লকডাউন? আবার রুটি রুজিতে টান?

চিনে চোখ রাঙাচ্ছে করোনা, কতটা প্রভাব পড়বে ভারতে? তাহলে কি আবার লকডাউন? আবার রুটি রুজিতে টান?

নিজস্ব প্রতিনিধি:  তবে কি আবারও ফিরে এল সেই অভিশপ্ত ডিসেম্বর মাস! তিন বছর আগে এমনই এক ডিসেম্বরে চিনে করোনা ভাইরাসের খোঁজ মেলে। বর্তমানে সেই চিন থেকেই আবার আতঙ্কের করোনা ভাইরাস নতুন করে ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। সেখানে ভাইরাসের যে নতুন রূপ দেখা যাচ্ছে তার সংক্রমণের হার এতটাই বেশি যাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ ফের আক্রান্ত হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে করোনা রুখতে দেশবাসীকে ফের মাস্ক পরার আবেদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৃহস্পতিবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপরই তিনি সবাইকে মাস্ক পরার বার্তা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে প্রত্যেকটি রাজ্য যাতে দৈনিক করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ায় সেটাও জানিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, কারও শরীরে করোনার হদিস মিললে সেটির যাতে জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয় সেই বার্তাও দিয়েছেন মোদি। এছাড়া আগের মতোই করোনা রুখতে দূরত্ব বিধি মানা ও স্যানিটাইজার ব্যবহারের উপর জোর দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। 

বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি ভারতে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গোটা দেশে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা দু’শোরও কম হচ্ছে। এছাড়া করোনায় মৃত্যু হচ্ছে না বললেই চলে। কিন্তু চিনে করোনা ভাইরাসের নতুন উপরূপ যেভাবে সবার চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে তাতে চিন্তিত ভারত। চিন্তা আরও  এই কারণে বেড়েছে যে সম্প্রতি ভারতে চারজনের দেহে করোনা ভাইরাসের ওই নতুন উপরূপের খোঁজ মিলেছে। এটির নাম দেওয়া হয়েছে ওমিক্রন বিএফ.৭। ভারতে যে চারজনের দেহে এই প্রজাতির খোঁজ মিলেছে তাঁরা ওড়িশা এবং গুজরাটের বাসিন্দা। গুজরাটের বায়োটেকনোলজি রিসার্চ সেন্টারে এই উপরূপের খোঁজ মিলেছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত একজন রোগী ১৫ থেকে ২০ জনকে সংক্রমিত করতে পারেন বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন। সেখানে ভারতে করোনার ডেল্টা রূপ যখন ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছিল তখন তার সংক্রমণের ক্ষমতা পাঁচের কাছাকাছি ছিল।

এরপরই নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। দেশের করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও চিনের সাম্প্রতিক ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে উপযুক্ত নজরদারির কথা জানিয়েছে কেন্দ্র। নতুন আক্রান্ত, করোনা ভাইরাসের নতুন প্রজাতি ও ভাইরাসের প্রকৃতির দিকে যাতে বাড়তি নজর দেওয়া হয় সেই নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে দৈনিক করোনা পরীক্ষা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে। কেন্দ্রের অনুমোদিত পরীক্ষাগারে যাতে সংগৃহীত নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য পাঠানো হয় সেই নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এতে করোনা ভাইরাসের নতুন প্রজাতির সন্ধান মিলছে কিনা তা স্পষ্ট হবে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ রাজ্যগুলিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, জাপান, আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল এবং চিনে যেভাবে করোনা বাড়ছে তাতে সংক্রমিতদের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য পাঠাতে হবে। এরপরই দেশবাসীর আশঙ্কা ফের লকডাউন চালু হবে না তো? কারণ লকডাউন মানেই রুটি রুজিতে টান পড়া। যদিও এখনই এই ধরনের সম্ভাবনা নেই বলে কেন্দ্র জানিয়েছে।

চিনে প্রতিদিন বিপুল  সংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। আর করোনার সেই প্রজাতির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে আমেরিকা, ব্রিটেন, বেলজিয়াম, জার্মানি, ফ্রান্স-সহ বহু দেশে। স্বাভাবিকভাবেই নতুন করে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে করোনা। যখন গোটা বিশ্ব করোনার ভয়াবহতাকে পিছনে ফেলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছিল, তখন নতুন করে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে চিন। তবে এর মধ্যে আশার কথা একটাই যে করোনা ভাইরাসের এই নতুন রূপের মারণ ক্ষমতা মারাত্মক কিছু নয়। গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তি ছাড়া এই প্রজাতির দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর আশঙ্কা খুবই কম বলে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন। সেই সঙ্গে ভারতের অধিকাংশ মানুষ করোনার দুটি টিকার ডোজ নিয়েছেন। তাঁদের একটা বড় অংশ আবার বুস্টার ডোজ নিয়েছেন। এছাড়া দেশের বহু মানুষ করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় সবার মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়েছে। এই সমস্ত ফ্যাক্টর ভরসা জোগাচ্ছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের। তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার ঢিলে দিতে চাইছে না। চিনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রথম থেকেই করোনা যাতে নতুন করে দেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেদিকে কড়া নজর রাখছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 + 14 =