নিজস্ব প্রতিনিধি: সম্প্রতি বহু ওষুধের দাম অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। জ্বালানি তেল, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, শাকসবজির পাশাপাশি ওষুধের দাম বৃদ্ধিতে নাজেহাল সাধারণ মানুষ। এই পরিস্থিতিতে এবার দাম বাড়তে চলেছে রক্তেরও। যা জেনে প্রমাদ গুনছেন সাধারণ মানুষ। রক্ত জীবন বাঁচায়। আর এক ইউনিট রক্ত কিনতে গিয়ে যদি বাড়তি টাকা খরচ হয়ে যায় তবে দরিদ্র মানুষ কীভাবে তার মোকাবিলা করবেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পরিসংখ্যান বলছে ২০০৮ সালে এক ইউনিট রক্তের দাম ছিল ৮৫০ টাকা। ২০১৪ সালে তা বেড়ে হয় ১৪০০ টাকা। অর্থাৎ এক ধাক্কায় সাড়ে পাঁচশো টাকা বেড়ে গিয়েছিল প্রতি ইউনিট রক্তের দাম। এবার তা বেড়ে দেড় হাজার টাকা হতে চলেছে। এমনটাই প্রস্তাব পাঠিয়েছে ন্যাশনাল ব্লাড ট্রান্সফিউশন কাউন্সিল। এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ-সহ সব রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে চিঠি পাঠিয়েছে কাউন্সিল।
বিষয়টি নিয়ে কাউন্সিলের যুক্তি গত আট বছরে পেট্রোপণ্যের দাম আড়াই গুণ বেড়েছে। রক্ত এবং রক্তজাত সামগ্রী যে প্যাকেটে রাখা হয় তা পেট্রোলিয়ামজাত পলি ভিনাইল ক্লোরাইড বা পিভিসি দিয়ে তৈরি। এর পাশাপাশি পরিবহণ খরচ, সার্জ চার্জ এবং সংরক্ষণের জন্য খরচ থাকে। রক্ত থেকে বিভিন্ন উপাদান আলাদা করাটাও যথেষ্ট খরচসাপেক্ষ। তাই সব রাজ্যগুলির কাছে দাম বৃদ্ধির পক্ষে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
তবে এটা শুধুমাত্র প্রস্তাব নয়, আগামী দিনে রক্তের এই দামই কার্যকর হবে বলে মনে করছেন পশ্চিমবঙ্গের স্টেট ব্লাড সেলের নোডাল অফিসার ডা. নিতাইচন্দ্র মণ্ডল। এর ফলে সরকারি ব্লাডব্যাঙ্কের উপর চাপ না পড়লেও বেসরকারি ব্লাডব্যাঙ্কগুলিতে প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। মেডিক্যাল কলেজের এক চিকিৎসকের কথায়, “রক্ত ও রক্তজাত দ্রব্যের দাম যদি বাড়াতেই হয় তবে ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল কাউন্সিলের মাধ্যমেই তা করা উচিত। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটা করা হয়নি।”
নতুন দাম চালু হলে আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে এক ইউনিট রক্তের দাম ২ হাজার টাকায় পৌঁছতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিশেষজ্ঞ মহল। আর তা নিয়েই চিন্তা বাড়ছে। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে মূলত সমস্যাটা বাড়বে বেসরকারি কেন্দ্র থেকে রক্তের ইউনিট কিনতে গেলে। সরকারি ক্ষেত্রগুলি দাম বাড়লেও সেই চাপ সামলে নিতে পারবে। কিন্তু প্রতিদিন রাজ্য জুড়ে হাজার হাজার মানুষের যে রক্তের প্রয়োজন হয় তা শুধুমাত্র সরকারি হাসপাতাল সামাল দিতে পারবে না। সেখানে বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক না থাকলে রোগী তথা তাঁদের পরিবার প্রবল সমস্যার মধ্যে পড়ে যাবেন।
দিন দিন বাজার দর বাড়ছে। সার্বিকভাবে মূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত। দেশজুড়ে নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে করোনা। তাতে আর্থিক বৃদ্ধি নতুন করে ধাক্কা খাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এই অবস্থায় রক্তের দাম বেড়ে গেলে সমস্যায় পড়বেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। কারণ সব রোগীর যে এক বা দুই ইউনিট রক্ত লাগে তা নয়। থ্যালাসেমিয়া বা হিমোফিলিয়া রোগীদের নিয়মিত রক্তের প্রয়োজন। এছাড়াও বিভিন্ন গুরুতর রোগে অসুস্থ রোগীর প্রচুর রক্তের প্রয়োজন হয়। আর প্রতি বছর গরমকালে দেশজুড়ে রক্তের সংকট দেখা দেয়। এই অবস্থায় রক্তের দাম যাতে না বাড়ে সেই আবেদন আসছে সংশ্লিষ্ট মহল থেকে। তবে রক্তের দাম তাতে সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে থাকে সে ব্যাপারে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর-সহ সংশ্লিষ্ট মহল বিশেষ উদ্যোগ নেবে বলে জানা যাচ্ছে।