‘কোথায় যাবেন? প্লিজ কাম ইন ম্যাডাম’, অটো চালকের ইংরেজি শুনে থ যাত্রী

প্লিজ কাম ইন ম্যাম

বেঙ্গালুরু: এদিন সকালে অফিস যাওয়ার পথে হাইওয়ের মাঝে হঠাৎই উবেরে আটকে পড়েছিলেন তিনি৷ কী ভাবে সময়ে অফিস পৌঁছবেন? বাড়ছিল টেনশন৷ স্বভাবতই তাঁর চোখে মুখে ফুটে উঠেছিল উদ্বেগ৷ তাঁকে দেখে সামনে এসে দাঁড়ায় এক অটোরিক্সা৷ এক বৃদ্ধ জিজ্ঞাসা করেন, কোথায় যেতে চান? 

আরও পড়ুন- বছরে দু’বার বেতন বৃদ্ধি, বিয়ে করলেই কর্মচারীদের মোটা উপহার দিচ্ছে এই সংস্থা

 ওই মহিলা তাঁকে বলেন, ‘‘শহরের অন্যপ্রান্তে আমার অফিস৷ সেখানেই যেতে হবে৷ ইতিমধ্যেই অনেক দেরি করে ফেলেছি৷’’ তাঁর কথা শুনেই অসাধারণ ইংরেজিতে বৃদ্ধ অটো চালক বলেন, ‘প্লিজ কাম ইন ম্যাম৷ আপনি এর জন্য যা দিতে চান দিতে পারেন৷’’ বৃদ্ধ অটোচালকের এহেন আচরণে তিনি কিছুটা হতবাক হয়েছিলেন বটে৷ কিন্তু এর পরের ৪৫ মিনিট তাঁর কাছে ছিল অনুপ্রেরণার৷ সমৃদ্ধ হয়েছিলেন তিনি৷ 

একজন গবেষক হিসাবে, ওই মহিলা তাঁর কৌতূহল চেপে রাখতে পারেননি৷ বৃদ্ধ অটো চালককে জিজ্ঞাসা করে বসেন, কী ভাবে এত ভালো ইংরেজি বলেন তিনি? জবাবে তিনি জানান, তিনি একজন ইংরেজি লেকচারার৷ ইংরাজিতে এমএ এবং এমএড করেছেন! পরবর্তী প্রশ্ন কী হতে পারে তা আগে থেকেই আন্দাজ করে ফেলেছিলেন তিনি৷ ওই মহিলাকে নিজেই জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘আপনি হয়তো জানতে চাইবেন তাহলে কেন আমি অটো চালাচ্ছি?’’ প্রশ্ন শুনে ওই মহিলা বলেন ওঠেন, অবশ্যই, আমাকে বলুন না প্লিজ।

ওই বৃদ্ধ জানান, এখন তাঁর বয়স ৭৪৷ গত ১৪ বছর ধরে তিনি অটোরিক্সা চালাচ্ছেন। এর আগে তিনি মুম্বইয়ের একটি কলেজে ইংরেজির লেকচারার হিসাবে কর্মরত ছিলেন৷  কারণ কর্ণাটকে কোনও চাকরি জোটোনি তাঁর। তাঁকে একটাই প্রশ্ন করা হয়েছিল, “তোমার জাত কি?” জবাবে তিনি বলেছিলেন,  তাঁর নাম পতাবি রমন৷ নাম শোনার পরই তাঁরা বলেছিল, ‘‘আমরা আপনাকে জানাব।’’ এমনটা বহুবার হয়েছে৷ এর পর বিরক্ত হয়ে তিনি চাকরি খুঁজতে মুম্বই চলে যান৷ সেখানে তাঁকে স্বাগত জানানো হয়৷ স্বনামধন্য পাওয়াই কলেজে চাকরিও পান৷ যেখানে ২০ বছর অধ্যাপনার কাজ করেন৷ ৬০ বছর বয়সে অবসর নেন এবং কর্ণাটকে ফিরে আসেন। তাঁর কথায়, “শিক্ষকদের খুব একটা ভাল বেতন হয় না। খুব বেশি হলে ১০ থেকে ১৫ হাজার উপার্জন হয়৷ যেহেতু এটি বেসরকারি কলেজ ছিল, তাই  আমার পেনশনও নেই।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এখন রিক্সা চালিয়ে দিনে ৭০০-১৫০০ টাকা পাই। যা আমার এবং আমার বান্ধবীর জন্য যথেষ্ট৷” বলেই হেসে ওঠেন বৃদ্ধ৷ 

প্রাক্তন অধ্যাপকের কথা শুনে তখন ওই মহিলাও হেসে ওঠে৷ এর পরেই কিছু অসাধারণ কথা বলেন তিনি৷ প্রাক্তন লেকচারার জানান, ‘‘আসলে ও আমার স্ত্রী৷ কিন্তু আমি ওঁকে আমার বান্ধবী বলি৷ কারণ আমি মনে করি স্ত্রীর সমান অধিকার রয়েছে। আপনি যে মুহূর্তে কোনও নারীকে স্ত্রী বলে পরিচয় দেন,  তখনই স্বামীরা মনে করবেন সে একজন ক্রীতদাস৷ তাঁকে আপনার সেবা করতেই হবে৷ কিন্তু তিনি কোনভাবেই নিকৃষ্ট নয়। বরং আমি মনে করি ও আসলে আমার চেয়েও অনেক বেশি উঁচুতে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ওঁর বয়স এখন ৭২৷ আমি যখন দিনে ৯-১০ ঘণ্টা কাজ করি, তখন ও বাড়ির যত্ন নেয়। আমরা কাদুগোডিতে ১ কামরার ঘরে থাকি৷ ঘর ভাড়া ১২ হাজার টাকা৷ আমার ছেলে ভাড়ার টাকা দিতে সাহায্য করে৷ কিন্তু এর বাইরে, আমরা আমাদের সন্তানদের উপর নির্ভরশীল নই। তাঁরা তাঁদের মতো করে জীবনযাপন করে এবং আমরা আমাদের মতো সুখে দিন যাপন করি৷ এখন আমি আমার রাস্তার রাজা, আমি যখন খুশি আমার অটো নিয়ে যেতে পারি এবং যখন খুশি কাজ করতে পারি।”

আসলে জীবন আমাদের অনেক কিছু শেখায়৷ জীবন নিয়ে একটাও অভিযোগ নেই তাঁর। নেই কোনও আফসোস৷