ভোপাল: রাস্তার ধারে পা ছড়িয়ে বসে রয়েছে বছর আটের ছোট্ট একটি শিশু। তার কোলের ওপর শোয়ানো সাদা চাদরে মোড়া একটি মৃতদেহ। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে হৃদয়বিদারক এই মর্মান্তিক ছবিটি। রবিবার মধ্যপ্রদেশের এক চিত্র সাংবাদিকের হাত ধরে প্রকাশ্যে আসে ছবিটি। এরপর থেকেই মাথাচাড়া দেয় একগুচ্ছ প্রশ্ন। কেন শিশুটি এইভাবে রাস্তায় বসে রয়েছে? তার কোলের উপর রাখা মৃতদেহটিই আসলে বা কার? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই সামনে এল আরও এক মর্মস্পর্শী কাহিনী। যা রীতিমতো নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশের মানুষকে।
রবিবার বিকেল থেকে যে ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় কয়েক হাজার বার শেয়ার করা হয়েছে সেই ছবিটির পিছনে আসলে রয়েছে একটি মর্মান্তিক কাহিনী। ঘটনাটি মধ্যপ্রদেশের মোরেনা জেলার। ছবিতে যে আট বছরের শিশুটিকে দেখা যাচ্ছে তার নাম গুলশান। গুলশানের কোলে শোয়ানো তারই ভাই দু’বছর বয়সী রাজার মৃতদেহ। এই দুই ভাই তাদের বাবা পুজারামের হাত ধরে মোরেনার সরকারি হাসপাতালে এসেছিল রাজার চিকিৎসার জন্য। গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বেশ কয়েকদিন ধরে রাজার চিকিৎসা চলার পরেও তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ার কারণে রবিবার সকালেই দুই ছেলেকে সাথে করে শহরের বড় হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন পুজারাম। কিন্তু তারপরেও হয়নি শেষরক্ষা। রবিবার দুপুরেই চিকিৎসা চলাকালীন রাজা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এদিকে শহর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাদফরা গ্রামের বাসিন্দা পুজারাম কিভাবে ছেলের মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরবেন বুঝতে পারছিলেন না।। কারণ হাজার চেষ্টার পরেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা দিতে রাজি হয়নি। তাই কোন উপায়ান্তর না দেখে বড় ছেলে গুলশানকে রাস্তার ধারের একটি পরিতক্ত জায়গায় বসিয়ে এবং তার কোলে ছোট ভাইয়ের মৃতদেহ শুইয়েই হন্যে হয়ে গাড়ি খোঁজার চেষ্টা শুরু করেন। ফলে ৮ বছরের ঐ শিশুটির কাছে ভাইয়ের মৃতদেহ পাহারা দেওয়া ছাড়া আর কোন রাস্তাই খোলা ছিল না সেই সময়।
এদিকে মৃতদেহ কোলে এত ছোট একটি শিশুকে এমন অঝর নয়নে কাঁদতে দেখার বিষয়টি চোখ এড়ায়নি স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাদের মধ্যে কেউ নিকটবর্তী থানায় গিয়ে গোটা বিষয়টি জানালে ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশ আধিকারিকরা এবং শেষ পর্যন্ত পুলিশের মদতেই কোন মতে একটি অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করে ছেলের মৃতদেহ গ্রামে নিয়ে ফেরার সুযোগ পান পুজারাম। তবে ততক্ষণে স্থানীয় এক সাংবাদিকের চেষ্টায় গোটা বিষয়টি মধ্যপ্রদেশ তো বটেই বরং গোটা দেশের মানুষ জানতে পেরেছে। ভাইরাল হয়েছে ছোট গুলশানের কান্না ভেজা অসহায় মুখের বেশ কিছু ছবিও। ছোট এই শিশুটির এমন মর্মান্তিক অবস্থা থেকে রীতিমত বাকরুদ্ধ সমগ্র দেশের মানুষ। তবে একইসঙ্গে পুলিশ অফিসারের মদতে যে তারা শেষমেষ নিরাপদে অ্যাম্বুলেন্সে চেপে গ্রামে ফিরতে পেরেছেন পরে সেই খবর জানতে পেরে অনেকেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। জানা যাচ্ছে পুলিশ অফিসার যোগেন্দ্র সিংয়ের হস্তক্ষেপে পরবর্তীতে অ্যাম্বুলেন্স এর ব্যবস্থা হয় এবং সেই অ্যাম্বুলেন্সে করেই দুই ছেলেকে নিয়ে গ্রামে ফেরেন পুজারাম।