এই পাঁচ ভারতীয় সেনার সামনে হাঁটু গেড়েছিল শত্রু শিবির

এই পাঁচ ভারতীয় সেনার সামনে হাঁটু গেড়েছিল শত্রু শিবির

নয়াদিল্লি:  ভারতের উপর যখনই কোনও হামলা হয়েছে, তখনই নিজেদের জীবনের বাজি রেখে রুখে দাঁড়িয়েছেন দেশের বীর সেনারা৷ নিজেদের জীবন বিপন্ন করে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন শত্রু শিবির৷ তাঁদের বীরত্বের সামনে বারবার বিভ্রান্ত হয়েছে বিপক্ষ সেনা৷ রইল এমনই কিছু বীর সেনার কাহিনী৷ 

সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট অরুণ ক্ষেত্রপাল

সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট অরুণ ক্ষেত্রপাল- মাত্র ২১ বছর বয়সে শহিদ হয়েছিলেন পুনার ছেলে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট অরুণ ক্ষেত্রপাল৷ ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে তাঁর নাম৷ ভারতের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান মরণোত্তর পরমবীর চক্র পান তিনি৷

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে শকরগড় সেক্টরে হামলা চালায় সশস্ত্র পাক সেনা৷ অন্য স্কোয়াড্রনের জওয়ান হলেও পাক আক্রমণ প্রতিহত করতে ছুটে আসেন ক্ষেত্রপাল৷ নিজের ট্যাঙ্ক নিয়ে এগিয়ে যান শত্রুশিবিরের দিকে৷ পাক পদাতিক সৈন্যদের বন্দি করে তাদের অস্ত্রশস্ত্র কাবজা করে নেন ১৭ পুনা হর্স রেজিমেন্টের এই সাহসী যোদ্ধা৷ ভারতীয় আক্রমণে সাময়িকভাবে পিছু হটে পাকিস্তান৷ কিন্তু ফের তৈরি হয়ে রণক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে সশস্ত্র পাক সেনা৷ ক্ষেত্রপাল যে সেক্টরে ছিলেন, সেই সেক্টর লক্ষ করে শুরু হয় আক্রমণ৷ গুরুতর জখম হন ক্ষেত্রপাল৷ সেই অবস্থাতেও ১০টি পাকস্তানি ট্যাঙ্ক উড়িয়ে দেন তিনি৷ একটা সময় ট্যাঙ্ক ছাড়তে বলা হয়েছিল তাঁকে৷ কিন্তু তিনি পিছু হটেননি৷ এর পরে পাক সেনারা উড়িয়ে দেয় তাঁর ট্যাঙ্কটি৷ শহিদ হন ক্ষেত্রপাল৷  

মেজর সোমনাথ শর্মা

মেজর সোমনাথ শর্মা- চতুর্থ কুমাওন রেজিমেন্টের এই বীর জওয়ান শদিহ হন মাত্র ২৪ বছর বয়সে৷ ১৯৪৭ সালের ৩০ অক্টোবর তাঁদের যখন বিমানে করে শ্রীনগরে নিয়ে যাওয়া হয়, তার আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন মেজর সোমনাথ শর্মা৷ হকি খেলতে গিয়ে হাত ভেঙেছিল তাঁর৷ তা সত্ত্বেও হাতে প্লাস্টার অবস্থায় জোড় করেই কোম্পানির সঙ্গে শ্রীনগরে যান শর্মা৷

৩ নভেম্বর বদগাম গ্রামে টহল দেওয়ার সময় অতর্কিতেই গুলমার্গের দিক থেকে ধেয়ে আসে প্রায় ৭০০ লস্কর জঙ্গি৷ তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলা হয় তাঁদের৷ শুরু হয় বোমাবাজি৷ লস্করের হামলায় একের পর এক ভারতীয় সেনারা যখন মৃত্যু হচ্ছে, তখন বাম হাতে প্লাস্টার নিয়েই লাইট  মেশিনগান চালানো জওয়ানের ম্যাগাজিন ভরতে শুরু করেন তিনি৷ এক হাত নিয়েই শুরু করেন যুদ্ধ৷ সেই সময় তাঁর সামনে একটি মর্টার শেল বিস্ফোরণ হয়৷ সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর৷ মরণোত্তর পরমবীর চক্রে সম্মানিত করা হয় তাঁকে৷ তিনিই ভারতের প্রথম পরম বীর চক্র প্রাপক৷  

নায়েক যদুনাথ সিং

নায়েক যদুনাথ সিং- ১৯৪৭-৪৮ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের শরিক ছিলেন নায়েক যদুনাথ সিং৷ তিনি ভারতের চতুর্থ পরম বীর চক্র প্রাপক৷  ১৯৪৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি৷ ওই দিন টেইনধরে ফরওয়ার্ড পোস্টে ছিলেন সিং৷ ওই পোস্টে ছিলেন ৯ ভারতীয় জওয়ান৷ পাকিস্তানি সেনারা এই পোস্টটি দখল নেওয়ার জন্য হামলা চালায়৷ কিন্তু সিং-তাঁর অসাধারণ নেতৃত্বে ছোট্ট বাহিনী নিয়েই এমন রনকৌশল নেন যে, হকচকিয়ে যায় পাক সেনা৷ এর পর চার জখম সেনাকে নিয়ে আরও একটি হামলার জন্য নিজের বাহিনী তৈরি করে ফেলেন সিং৷ জখম অবস্থাতেই আহত সহযোদ্ধাদের নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যান৷ আগুনের গোলার মতো বন্দুক থেকে গুলি ছুঁড়তে থাকেন সিং৷ তাঁর পাল্টা আক্রমণে পিছু হটে পাক সেনা৷ দ্বিতীয়বারের জন্যও পোস্ট রক্ষা করতে সক্ষম হন তিনি৷ ইতিমধ্যে তাঁর সহযোদ্ধারা সকলেই মারা গিয়েছেন৷ এর মধ্যে তৃতীয়বার হামলা চালাল পাকিস্তান৷ এবার স্টেন গান নিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় একাই লড়াই শুরু করেন নায়েক যদুনাথ সিং৷ তাঁর দাপটে আরও একবার বিভ্রান্ত হয়ে ময়দান ছেড়ে পালায় পাক সেনা৷ কিন্তু তাঁর মাথায় এবং বুকে এসে বেঁধে শত্রুপক্ষের গুলি৷ সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর৷ 

সুবেদার করম সিং

সুবেদার করম সিং- পঞ্জাবের এই বীর জওয়ান দেশের প্রথম অ-মরণোত্তর পরম বীর চক্র প্রাপক৷ ১৯৪৮ সালে ভারতীয় সেনার সাম্মানিক ক্যাপ্টেন হিসাবে অবসর নেন তিনি৷ ১৯৯৩ সালে ৭৭ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তাঁর৷ তিনিই একমাত্র ভারতীয় যিনি ব্রিটিশ এবং ভারত সরকারের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মানে সম্মানিত৷ 

১৯৪৮ সালের ১৩ অক্টোবর, কাশ্মীরের রিচমার গালি দখল নিতে হামলা চালায় পাকিস্তান৷ পাকিস্তানের আগ্রাসী হামলায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল ভারতের প্রায় সবকটি পোস্ট৷ এমনকী কমান্ডারদের মধ্যে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ সামান্য কিছু সেনা নিয়েই লড়তে থাকেন সিং৷ পাক সেনার গুলিতে আহত হন তিনি৷ কিন্তু থেমে থাকেনি তাঁর বন্দুক৷ পোস্ট আগলে রাখেন প্রবল বিক্রমে৷ পাক সেনারা তাঁর পোস্টের দিকে এগিয়ে এলে, তিনি সামনে ঝাঁপিয়ে পড়েন৷ দুই পাক সেনাকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলন৷ তাঁর সাহসিকতার সামনে পরাজিত হয়েছিল শত্রু শিবির৷ 

মেজর রামাস্বামী পরমেশ্বরণ

মেজর রামাস্বামী পরমেশ্বরণ- ১৯৮৭ সালে ভারত-শ্রীলঙ্কা যুদ্ধে শহিদ হন মুম্বইয়ের ছেলে মেজর রামাস্বামী পরমেশ্বরণ৷ মধ্যরাতে শ্রীলঙ্কায় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে ফেরার সময় তাঁদের উপর অতর্কিতে হামলা চালায় একদল জঙ্গী৷ আতঙ্কিত না হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় পাল্টা আক্রমণ হানেন পরমেশ্বরণ৷ শত্রুপক্ষকে বিভ্রান্ত করে তাদের পিছন থেকে ঘিরে ফেলেন তাঁরা৷ মুখোমুখি সংঘর্ষে এক জঙ্গি তাঁর বুকে গুলি ছোড়ে৷ আহত অবস্থাতেই তার কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে পাল্টা গুলি করে নিকেশ করেন ওই জঙ্গীকে৷ এই সংঘর্ষে খতম হন তিন জঙ্গী৷ মৃত্যু হয় পরমেশ্বরণেরও৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভারতের রিয়্যাল হিরো এই পঞ্চপাণ্ডব! যাঁরা গুঁড়িয়ে দিয়েছিল শত্রুশিবির

ভারতের রিয়্যাল হিরো এই পঞ্চপাণ্ডব! যাঁরা গুঁড়িয়ে দিয়েছিল শত্রুশিবির

নয়াদিল্লি: নিজেদের পরিবার, প্রিয়জনদের থেকে বহু দূরে সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরায় থাকা সেনা জওয়ানরা নিজেদের জীবন দিয়ে রক্ষা করছে আমাদের দেশ৷ হাসতে হাসতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করছে, যাতে শান্তিতে ঘুমোতে পারি আমরা৷ শত্রুর পথে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই লৌহ পুরুষরা৷ হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা কিংবা কাট ফাটা রোদ, সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে নিজেদের কর্তব্যে তাঁরা অবিচল৷ তাঁদের কড়া নজর রয়েছে শত্রুপক্ষের উপর৷ তাঁরাই দেশের রিয়্যাল হিরো৷ অমর হয়ে রয়েছে এমনই কিছু রিয়্যাল হিরোর বীরত্বের কাহিনী৷ 

ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রা

ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রা- ১৩ জে অ্যান্ড কে রাইফেলসের ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রা ছিলেন কার্গিল যুদ্ধের অন্যতম হিরো৷ কার্গিল যুদ্ধে যাঁর অসামান্য বীরত্বের সাক্ষী পাকিস্তানিরা তাঁর নাম রেখেছিল শেরশাহ। তাঁর জন্ম হিমাচলপ্রদেশের পালামপুরে৷ মাত্র ২৪ বছর বয়সে শহিদ হন তিনি৷ 

ভূস্বর্গের বুকে কার্গিলের কঠিন লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রা৷ কার্গিল যুদ্ধ ভারতীয় সেনার কাছে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল৷ কারণ পাকিস্তানি সেনারা বসেছিল ১৬,০০০ ফুট উঁচুতে৷ নতিমাত্রা ছিল ৮০ ডিগ্রি৷ কিন্তু বীর বিক্রমে ১৭ হাজার ফুট উঁচুতে ৫,১৪০ নম্বর পিক দখল করে নেন বাত্রা৷ এই অভিযানে গুরুতর জখম হন তিনি৷ কিন্তু থেমে থাকেননি৷ মুখোমুখি লড়াইয়ে তিন পাক সেনাকে খতম করার পর এগিয়ে যান ৪,৮৭৫ নম্বর পিকের দিকে৷ সেই সময় এক ফাঁকে বাড়িতে ফোন করে বাবাকে কার্গিলের পরিস্থিতির কথা জানিয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু তখনও কেউ জানত না সেটাই হবে তাঁর শেষ ফোন কল৷ 

এই অভিযানেই গুরুতর জখম হন এক অফিসার৷ তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন বাত্রা৷ সেই সময় এক সুবেদার তাঁকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলে, তিনি তাঁকে সরিয়ে দেন৷ বলেন, ‘‘তোমার সন্তান আছে, তুমি এখান থেকে সরে যাও৷’’ ওই সহযোদ্ধাকে বাঁচাতে পারলেও, মৃত্যু হয় তাঁর৷ এলওসি কার্গিল ছবিতে ফটে উঠেছিল বাত্রার সাহসিকতার এই কাহিনী৷ তাঁর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অভিষেক বচ্চন৷

 

মেজর জেনারেল ইয়ান কার্ডোজো

মেজর জেনারেল ইয়ান কার্ডোজো- ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে উঠে আসে জেনারেল ইয়ান কার্ডোজোর নাম৷ সেই সময় তিনি ছিলেন ৫ নং গোর্খা রাইফেলস-এর টগবগে তরুণ মেজর৷ মুক্তি যুদ্ধ চলার সময় একটি ল্যান্ডমাইনের উপর পা পড়ে যায় তাঁর৷ গুরুতর জখম হন তিনি৷ ডাক্তার যখন তাঁর পা কাটতে পারছিলেন না, তখন খুকড়ি (গোর্খা ছুরি) আনতে বলেন মেজর জেনারেল ইয়ান৷ তারপর সেই ছুরি দিয়ে নিজেই নিজের পা কেটে বাদ দিয়ে দেন৷ এর পরেও দেশসেবা থেকে সরে আসেননি তিনি৷ ইচ্ছাশক্তি আর দৃঢ় সংকল্পে নিজের দায়িত্ব পালন করে চলেন৷ তিনিই ভারতের প্রথম প্রতিবন্ধী অফিসার৷ 

ব্রিগেডিয়ার মহম্মদ উসমান

ব্রিগেডিয়ার মহম্মদ উসমান- ১৯৪৭-৪৮ সালে ভারত-পাক যুদ্ধের সময় ব্রিগেডিয়ার উসমান জম্মু-কাশ্মীরের দুটি অত্যন্ত কৌশলগত অবস্থান নওশেরা এবং ঝংগরের উপর ভয়াবহ আক্রমণ প্রতিহত করেন৷ এই বীরত্বের জন্য তাঁর সহযোদ্ধারা ব্রিগেডিয়ার মহম্মদ উসমানের নাম দিয়েছিলেন ‘নওশেরার সিংহ’৷ ১৯৩৪ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি৷ দেশভাগের সময় পাক সেনাবাহিনীর প্রধান হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে৷ কিন্তু তিনি ভারতকেই বেছে নেন৷ পাকিস্তানের বালৌজ রেজিমেন্ট ছেড়ে যোগ দেন ভারতের ডোগরা রেজিমেন্টে৷ ওই যুদ্ধে মহম্মদ উসমানের হাতে নাস্তানাবুদ হওয়ার পর, পাক সেনা তাঁর মাথার দাম দিয়েছিল ৫০ হাজার টাকা৷ ১৯৪৮ সালের ৩ জুন ঝংগর রক্ষা করার সময় শহিদ হন তিনি৷ মরনোত্তর মহাবীর চক্র দেওয়া হয় তাঁকে৷ 

 

সুবেদার যোগেন্দ্র সিং যাদব

সুবেদার যোগেন্দ্র সিং যাদব- সবচেয়ে কনিষ্ঠ অফিসার হিসাবে সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান পরম বীর চক্র পান এই বীর সেনা৷ কার্গিল যুদ্ধের সময় তাঁর বীরত্বের জন্য মাত্র ১৯ বছর বয়সে এই সম্মান পান তিনি৷ ১৯৮০ সালে উত্তরপ্রদেশের ঔরঙ্গাবাদ আহির গ্রামে জন্ম সুবেদার যোগেন্দ্র সিং যাদবের৷ 

১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধে ১৬,৫০০ ফুট উঁচুতে বরফে ঢাকা তিনটি বাঙ্কার দখল করার কাজে এগিয়ে যায় তিনি৷ দড়ি বেয়ে উপড়ে ওঠার সময় তিনটি গুলি লাগে তাঁর কাঁধ ও কুঁচকিতে৷ গুলি লাগার পরেও তিনি এগিয়ে যান৷ ঢুকে পড়েন পাকিস্তানি বাঙ্কারে৷ চার পাক সেনাকে খতম করে বাঙ্কারের দখল নেন যাদব৷ এর পর বাঙ্কারে উঠে আসে ভারতীয় সেনা৷ কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি৷ রক্তাক্ত অবস্থাতেই এগিয়ে যান দ্বিতীয় বাঙ্কারের দিকে৷ আরও দুই জওয়ানকে সঙ্গে নিয়ে দখল করে নেন পাকিস্তানের দ্বিতীয় বাঙ্কারটিও৷ সেখানে শুরু হয় পাকিস্তানি সেনার সঙ্গে হাতাহাতি৷ এই সময় ফের গুলিবিদ্ধ হন তিনি৷ এর পরেও পাক সেনাদের মেরে দখল নেন বাঙ্কারের৷ শোনা যায় ১৬টি গুলি লেগেছিল তাঁর৷ কিন্তু তিনি বেঁচে যান৷ তাঁর এই লড়াইয়ের জেরেই টাইগার হিল দখল করে নিয়েছিল ভারতীয় সেনা৷ 

রাইফেলম্যান যশবন্ত সিং রাওয়াত

রাইফেলম্যান যশবন্ত সিং রাওয়াত- ১৯৬২ সালে ভারত-চিন একাই চিনা ফৌজের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছিলেন রাইফেলম্যান যশবন্ত সিং রাওয়াত৷ ৭২ ঘণ্টা একা একটি পোস্ট আগলে রেখেছিলেন তিনি৷ রণক্ষেত্রে একার হাতে ৩০০ চিনা সেনাকে খতম করেছিলেন বীর সৈনিক৷ 

এই যুদ্ধে যশবন্তের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় দুই মনপা যুবতী৷ নুরা আর সেলা৷ দুই বোন যোগ্য সঙ্গে দেন তাঁকে৷ ক্রমাগত রাইফেলের ম্যাগাজিন লোড করতে থাকেন তাঁরা৷ আর একা তিনটি বাঙ্কার থেকে গুলি চালাতে থাকেন যশবন্ত সিং৷ এই কৌঁশলে ধোকা খায় চিনা ফৌজ৷ তারা ভাবে তিনটে বাঙ্কারেই প্রচুর ভারতীয় সেনা মজুত রয়েছে৷ ইতিমধ্যে যশবন্ত সিংকে খাবার জোগান দিতেন যে ব্যক্তি, তাঁকে আটক করে ফেলে চিন সেনা৷ তাঁর কাছ থেকেই লাল ফৌজ জানতে পেরে যায় তিনটি বাঙ্কার মিলিয়ে মাত্র একজন ভারতীয় জওয়ান আছেন। তিনি একাই তিনটি বাঙ্কার ঘুরে ঘুরে নিপুণ নিশানায় নিকেশ করছে চিনা সেনাদের। তবে চিনা সেনার হাতে ধরা পড়ার আগেই ম্যাগাজিনের শেষ বুলেটে নিজেকে খতম করে দেন যশবন্ত৷ মারা যান সেনা আর নুরাও৷ 

যশবন্ত সিং রাওয়াতকে এখনও ভগবান বলেই পুজো করে স্থানীয় মানুষ৷ যে জায়গায় যশবন্ত শহিদ হয়েছিলেন তাঁর নাম যশবন্তগড়৷ সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে একটি মন্দির৷ সেখানে আজও তাঁর ঘর পাহারা দেয় ৪ নং গাড়োয়াল রেজিমেন্টের পাঁচ জওয়ান৷ প্রদর্শিত হয় তাঁর জিনিস৷ তাঁর জুতো প্রতিদিন পালিশ করা হয়৷ শুভাকাঙ্খীদের লেখা চিঠি প্রতিদিন যশবন্তের সামনে রাখা হয়৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *