সরকারি সুবিধা ছাড়াই ৬০ দিনে ১৪৫ ফুট দীর্ঘ সেতু গড়লেন ৩ গ্রামের মানুষ

সরকারি সুবিধা ছাড়াই ৬০ দিনে ১৪৫ ফুট দীর্ঘ সেতু গড়লেন ৩ গ্রামের মানুষ

ইটানগর: কথায় বলে ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়৷ সেই ইচ্ছা শক্তি দিয়েই দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান করে ফেললেন অরুণাচল প্রদেশের নামসাই জেলার তিনটি প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ৷ তৈরি করে ফেললেন ১৫৪ ফুট দীর্ঘ কাঠের সেতু৷ 

এই জেলায় রয়েছে ৫,২০০ চকমা উপজাতি মানুষের বাস৷ স্বতন্ত্র পরিচিতি থাকা সত্ত্বেও তাঁরা বিভাজন নীতির শিকার৷ স্যার ক্রিল রেডক্লিফের নেতৃত্বাধীন বেঙ্গল বাউন্ডারি কমিশন তাঁদের স্বভূমি পার্বত্য চট্টগ্রামকে পূর্ব পাকিস্তানের হাতে তুলে দিয়েছিল৷ যা এখন বাংলাদেশের অংশ৷ ধর্মীয় নিপীড়ন এবং কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের ফলে রাষ্ট্রহীন ও গৃহহীন হয়ে পড়েছিলে এই অঞ্চলের চকমা উপজাতির মানুষরা৷ ভারত সরকার এই ভুলটি শুধরে নিয়ে ডেফিনিট প্ল্যান অফ রিলিফ অ্যান্ড রিহ্যাবিলেশন প্রকল্পে ৩৫ হাজার চকমা বৌদ্ধকে অরুণাচল প্রদেশে স্বাগত জানায়৷

আরও পড়ুন- লকডাউনে স্যানিটারি প্যাডের সংকট, ১৪ হাজার মহিলার পাশে দাঁড়ালেন এই তরুণী

এখন রাজ্যের তিনটি জেলা পাপুম্পের, চ্যাংলং এবং নামসাই জেলায় রয়েছে চাকমা উপজাতির বাস৷ অধিকাংশ চকমাই কৃষিকাজ ও হর্টিকালচারের উপর নির্ভরশীল৷ ধান, সরষে, বাজরা, সবজি বিক্রি করে আর ছোটখাটো দোকান দিয়েই চলে তাঁদের সংসার৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, এই ঐতিহাসিক ভুলের পাঁচ দশক পরেও তার ফল ভুগতে হচ্ছে চকমা উপজাতির মানুষদের৷ তাঁদের কাছে আজও নাগরিকত্ব নেই৷ ভোটদানের অধিকার থেকেও তাঁরা বঞ্চিত৷ নেই পঞ্চায়েতি রাজ বা সরকারি চাকরির সুযোগ৷ মূল ভূখণ্ড থেকে দূরত্বও গ্রামগুলিকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে৷ তার উপর প্রতি বছর বর্ষায় বেরেং নদীর জলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এই তিন গ্রাম৷ 

আরও পড়ুন- করোনা রোগীর সুরের মূর্ছনায় স্তব্ধ কোভিড হাসপাতালের শূন্যতা, দেখুন

২০০৪ সালের আগে বেরেং নদীর উপর একটি সেতু ছিল৷ যা সাত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শহর গুণানগরের সঙ্গে এই গ্রামগুলিকে যুক্ত করত৷ বন্যায় জলের তোড়ে পুরনো সেতুটি ভেঙে পড়ার পর থেকে আরও বেশি করে অন্ধকারে ডুবে যায় এই তিনটি গ্রামের মানুষ৷ এর পর বহু দুর্ঘটনা ঘটেছে৷ হয়েছে প্রভূত ক্ষয়ক্ষতি৷

আরও পড়ুন- ভারত ও ভুটান ভূখণ্ডে দাবি জানিয়ে সমগ্র বিশ্বকে ‘যাচাই’ করছে চিন, দাবি আমেরিকার

ওষুধ না পাওয়ায় প্রতি বছর বহু মানুষকে বিনা চিকিৎসায় মরতে হয়েছে৷ যোগাযোগের পথ না থাকায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়নি রোগীদের৷ স্কুলে পৌঁছতে পারেনি ছেলেমেয়েরা৷  নদী পার করা ছাড়া গ্রামবাসীদের কাছে শহরে পৌঁছনোর অন্য কোনও উপায়ও ছিল না৷ যাবতীয় প্রয়োজনের জন্য নিকটতম শহর গুণানগরের উপরই নির্ভর করতে হয় তাঁদের৷ বছরের পর বছর সরকারি সাহায্যের অপেক্ষা করেছেন তাঁরা৷ কিন্তু কোনও লাভ হয়নি৷ অগত্যা সব আশা ছেড়ে নিজেরাই সেতু তৈরির উদ্যোগ নেয় এই তিন গ্রামের বাসিন্দারা৷ 

আরও পড়ুন- বাবা টোটো চালক, মেধাবী কন্যার চিকিৎসক হওয়ার পথে বাধা দারিদ্র

এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য চাকমা ইয়ুথ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে একটি কনস্ট্রাকসন কমিটি গঠন করেন তাঁরা৷ এই কমিটির সভাপতি বলেন, ‘‘এই কাজটি শেষ করতে পেরে আমি সন্তুষ্ট৷’’ এই কাজের জন্য প্রতিবেশী খাম্পতি ভাইদের কাছ থেকে ৫১ হাজার টাকার অর্থ সাহায্যও পান তাঁরা৷

আরও পড়ুন- এত টাকা দিল কে? রিয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখছে পুলিশ

এই রাজ্যে খামতি এবং চকমা, এই দুটি সম্প্রদায়ের মানুষই রয়েছে৷ চলতি বছর মার্চ মাসেই নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়৷  তবে লকডাউনের জেরে কাজের গতি কমে যায়৷ সোশ্যাল ডিস্টেনসিং মেনে কাজ করার পরও মে মাসের শেষে ১৫৪ ফুট লম্বা কাঠের সেতু তৈরি করে ফেলেন গ্রামের মেহনতি বাসিন্দারা৷ ফের শহরের সঙ্গে জুড়ে যান তাঁরা৷ সেতু তৈরিতে মোট খরচ হয় ৪.৮৫ লাখ টাকা৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *