220 crore
কলকাতা: বিশ্ব উষ্ণায়নের অভিশাপ ক্রমেই ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে আমাদের এই পৃথিবীকে৷ ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা যেন গিলে খেতে চাইছে নীলগ্রহকে৷ যার থেকে নিস্তার পাবে না ভারত৷ প্রভাব পড়বে পড়শি পাকিস্তানের উপরেও৷ তীব্র দাবদাহে জল শুকিয়ে ফুটিফাটা হবে দুই দেশের মাটি৷
বিগত কয়েক দশক ধরেই মানুষের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাপপ্রবাহ৷ এর জেরে প্রাণ গিয়েছে কয়েক হাজার মানুষের৷ আগামী কয়েক দশকে ভারতের একাধিক জায়গায় তাপপ্রবাহ এত তীব্র হয়ে উঠবে যে, কার্যত ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়াবে নাগরিক জীবন। তাপমাত্রা সহনশীলতার সীমা পাড় করবে। ভয়ঙ্কর তাপপ্রবাহের কবলে পড়তে হবে পাকিস্তানকেও। এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন প্রায় ২২০ কোটি মানুষ।
পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের রাসায়নিক গঠন একশ বছরের পূর্বের অবস্থা থেকে এমন এক অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে যেখান থেকে পূর্বের অবস্থানে ফিরে যাওয়া কখনওই সম্ভব নয়। গত একশ বছরে তাপমাত্রা প্রায় ০.৬০° বৃদ্ধি পেয়েছে। কম্পিউটার প্রযুক্তি প্রয়োগে জলবায়ুগত পরিবর্তন সম্পর্কে যে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে তাতে, ২১ শতকের সমাপ্তিকালের মধ্যেই বিশ্ব তাপমাত্রায় আরও অতিরিক্ত ২.৫° থেকে ৫.৫°সে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে৷ যা সঙ্কটের মুখে এনে ফেলবে বিশ্ববাসীকে৷
মাস দুয়েক আগে রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং আন্তর্জাতিক রেড ক্রস সোসাইটি যৌথ ভাবে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে৷ সেখানে বিশ্ব উষ্ণায়ন সম্পর্কে ভয়ঙ্কর তথ্য তুলে ধরা হয়েছে৷ দক্ষিণ এশিয়া-সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তাপপ্রবাহের আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷ ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের কিছু এলাকায় তাপমাত্রা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছবে, যার সঙ্গে কোনও ভাবেই মানিয়ে নিতে পারবে না মানুষ। একই সঙ্গে, তীব্র খরা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কাও করা হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, হর্ন অব আফ্রিকা তথা আফ্রিকার মূল মহাদেশীয় ভূখণ্ডের পূর্বতম অঞ্চল, উত্তর আফ্রিকা এবং পশ্চিম এশিয়াকে নিয়ে গঠিত সাহিল অঞ্চল এবং দক্ষিণ ও পশ্চিম এশিয়ায় তাপপ্রবাহের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে সবচেয়ে বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশ ভারতের পরিস্থিতিও আশঙ্কার উর্ধ্বে নয়। তাপপ্রবাহের আগুনে পুড়বে পাকিস্তানও।
আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের কথায়, বিশ্ব উষ্ণায়ণের জেরে জলবায়ুর ব্যপক পরিবর্তনই আসন্ন সঙ্কটের মূল কারণ। এমন দাবদাহের জন্য দায়ী দূষণ, গাছ কেটে নগরোন্নায়ন ও অত্যধিক তেজস্ক্রিয় বিকিরণ। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে, ঋতুচক্র থেকে কোথায় যেন উধাও হয়ে গিয়েছে ছ’টা ঋতু৷ এরই মধ্যে বলা হচ্ছে, ২০২৪ সালে ফের দেখা দিতে পারে এল নিনো৷ সেই ধাক্কায় আবার পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়বে হু হু করে। তীব্র তাপপ্রবাহে রুক্ষ হবে মাটি, শুকোবে জল৷ তীব্র খরার সম্মুখীন হবে বিশ্ববাসী। প্রশান্ত মহাসাগরের চিলি ও পেরু উপকূল এবং মহাসাগরের মধ্যাঞ্চলে তৈরি হওয়া ‘এল নিনো’র প্রভাবে ওলটপালট হয়ে যেতে পারে ভারতের বর্ষার মরসুম। উল্লেখযোগ্য ভাবে কমতে পারে বৃষ্টি।
কেমন থাকবে কলকাতার আবহাওয়া? বিজ্ঞানীরা বলছেন, খরা বা কম বৃষ্টিপাতের জন্য একমাত্র এল নিনো দায়ী নয়৷ যথেচ্ছ গাছ কেটে নগরোন্নয়ন কলকাতা সহ গোটা বাংলার আবহাওয়াকে খামখেয়ালি করে তুলেছে। ক্রমেই কলকাতা হয়ে উঠেছে হিট-আইল্যান্ড৷ আসন্ন দিনে যদি এই উষ্ণায়ণের মোকাবিলা করা না যায়, তাহলে আরও চরম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে৷ সতর্ক করা হয়েছে৷