স্মৃতিতে থাকবে ভয়ঙ্কর ২০২০! কিছু বিষয় লেখা থাকবে ইতিহাসে

স্মৃতিতে থাকবে ভয়ঙ্কর ২০২০! কিছু বিষয় লেখা থাকবে ইতিহাসে

নয়াদিল্লি: ‘এ তো কিছুই নয়..আমাদের সময় তো…’ বাবা-মায়েদের এই কথাগুলো শুনতে শুনতে অনেকেই ক্লান্ত৷ কিন্তু ২০২০-তে এমন এক ইতিহাস লেখা হল, যার উদাহরণ আমরাও হয়তো আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এই ভাবেই শোনাব৷ এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, ইতিহাসের এক কলো অধ্যায় হয়ে থাকবে ২০২০৷ করোনার করাল গ্রাসে বিশ্বজুড়ে চলছে মৃত্যু মিছিল৷ 

লকডাউন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি বাড়ির বাইরে যেন অদৃশ্য লক্ষণরেখা টেনে দেওয়া হয়েছিল৷ দেড় মাস হয়ে গিয়েছে এখনও সেই বন্দি দশা ঘোঁচেনি৷ সারা বিশ্ব দেখছে করোনার রক্তচক্ষু৷ যে কঠোর নিয়মের মধ্যে দিয়ে আমরা চলেছি, তা লেখা থাকবে ইতিহাসের পাতায়৷ আজকের অভিজ্ঞতাই একদিন নাতিনাতনিদের কাছে হয়ে উঠবে গল্পকথা৷ কমেডিয়ান অভিমন্যুর কথায়, ‘‘ইয়ে সব বাতেঁ তো বাদ মে ইয়াদ আয়েঙ্গি৷’’ এই স্মৃতি মমনে গেঁথে থাকবে সারা জীবনের তরে৷ 

স্পর্শের ভয়- বন্দুক কিংবা বুলেট নয়, মানুষ এখন ভয় পায় স্নেহের পরশে কিংবা আদরের স্পর্শে৷ চুম্বন বা আলিঙ্গন যেন এঁকে দেবে বুলেটের ক্ষত৷ পরিবার-বন্ধুবান্ধব কিংবা অফিসের কলিগ, দূরত্বই এখন বেঁচে থাকার মন্ত্র৷

অনলাইন কনসার্ট- করোনা রুখতে  নিষিদ্ধ হয়েছে জনসমাবেশ৷ সারা বিশ্বের সঙ্গীত শিল্পীরা তাই অনলাইনেই আয়োজন করছেন মিউজিক কনসার্ট৷

পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে জুম পার্টি- নো ক্লাব, নো ডিজে! আজকাল পার্টি হচ্ছে ভিডিও কলেই৷ জুম অ্যাপেই পার্টির আনন্দ উপভোগ করছেন ঘর বন্দি মানুষ৷ বন্ধু সমাগম হয়তো নেই৷ কিন্তু কিছুটা হলেও তো কমছে একাকীত্ব৷ 

ধন্যবাদ জানাতে হাততালি, ঘণ্টা বা বাসন বাজানো- শুধু ভারতেই নয়, ব্রিটেন সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ বিরোধী লড়াইয়ে সামিল স্বাস্থ্যকর্মীদের উৎসাহ দিতে একযোগে হাততালি দিয়েছে সারা বিশ্বের মানুষ৷ ২২ মার্চ জনতা কারফিউয়ের দিন বাড়ির ব্যালকনি কিংবা দরজায় দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়েছিল আপামর দেশবাসী৷ অনেকেই আবার সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে চলা স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিল ঘণ্টা বা বাসন বাজিয়ে৷ 

ভিডিও কলে বিয়ে- করোনাভাইরাসের দাপটে বিয়েতেও লেগেছে অভিনত্বের ছোঁয়া৷ অনেকেরই আগে থেকে বিয়ের দিন ঠিক হয়েছিল৷ তাই বিয়ের দিনক্ষণ না পিছিয়ে তাঁরা অনলাইনেই সেরে ফেলেছেন বিয়ের পর্ব৷ 

পুলিশের অদ্ভুত সাজা- লকডাউন লঙ্ঘন করে বাড়ির বাইরে পা রাখা মানুষদের বিচিত্র ও মজাদার সাজা দিয়েছে পুলিশ৷ কোথাও লকডাউন লঙ্ঘনকারীদের আরতি করা হয়েছে, তো কোথাও আবার কান ধরে ওঠবস করানো হয়েছে তাঁদের৷ কোথাও আবার করানো হয়েছে ফ্রগ জাম্প৷  

প্রিয়জন ছাড়াই শেষকৃত্য- লকডাউন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও শেষকৃত্যে ২০ জনের বেশি লোক উপস্থিত থাকতে পারবে না৷ আর করোনায় মৃত্যু হলে শেষকৃত্যের অনুমতি পাবেন মাত্র ৫ জন৷ প্রিয়জনদের ছেড়েই পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছে মানুষ৷ 

চিকিৎসকদের উপর হামলা- করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করা চিকিৎসক এবং নার্সদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে৷ অমানবিকভাবে আক্রমণ চালানো হয়েছে তাঁদের উপরে৷ 

থুতু ছোঁড়া- লাঠিসোটা নিয়ে হামলা নয়, লকডাউন ভঙ্গকারীরা পুলিশের উপর হামলা করেছে থুথু ছুঁড়ে৷ 

ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে উৎসাহ- ইতালির দেখানো পথে হেঁটে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে উৎসাহ জুগিয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের৷ 

অনলাইন ক্লাসরুম- লকডাউনের জেরে বন্ধ স্কুল কলেজের পঠনপাঠন৷ শুরু হয়েছে অনলাইনে ক্লাস৷ স্কুল না থাকায় পড়ুয়াদের এখন ঘুম ভাঙছে ৮টায়৷ আর ঘুম থেকে উঠেই তারা বসে পড়ছে কমপিউটারের সামনে অনলাইন ক্লাসে৷ 

উদ্ভট দাবি-  চুল কাটাতে কিংবা ম্যানিকিউর করাতে চান? লকডাউনে সে সব নৈব নৈব চ৷ মার্কিন মুলুকে তাই উঠেছে চুল কাটানোর দাবি৷ চুল কাটানোর দাবি তুলে প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় নেমেছে আমেরিকানরা৷ 

মদের দোকানের সামনে দীর্ঘ লাইন- তৃতীয় দফার লকডাউন কিছুটা শিথিল হয়েছে৷ খুলেছে মদের দোকান৷ আর মদের দোকান খুলতেই হুড়মুড়িয়ে ভিড় জমিয়েছেন সুরাপ্রেমীরা৷ দোকান খোলার কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা৷ এই অবস্থায় মদের উপর ৭০ শতাংশ বাড়তি দাম চাপিয়েছে দিল্লি সরকার৷ 

ক্ষত নিয়েও চিকিৎসকদের লড়াই-  ঘণ্টার পর ঘণ্টা মুখে মাস্ক পরে কাজ করে চলেছেন চিকিৎসকরা৷ সারা শরীর ঢাকা পিপিই-তে৷ তাঁদের মুখে কালশিটে দাগ পড়ে গিয়েছে৷ তাও জারি রয়েছে তাঁদের লড়াই৷ 

২৪ ঘণ্টার মধ্যে চলচ্চিত্র জগতের দুই ইন্দ্রপতন- লকডাউনের মধ্যেই ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে চলে গিয়েছেন চলচ্চিত্র জগতের দুই মহান তারকা ইমরান খান এবং ঋষি কাপুর৷

দূষণ মুক্ত পৃথিবী- এই প্যানডেমিকে দূষণ মুক্ত হয়েছে পৃথিবী৷ কমেছে বাতাসের বিষ৷ টলটল করছে নদীর জল৷ গঙ্গার জল হয়ে উঠেছে পানযোগ্য৷ বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে পৃথিবী৷ 

অদ্ভূত ফ্যাশন- লকডাউনে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে উঠেছে পিলো (বালিস) চ্যালেঞ্জ৷ বালিস নিয়েই চলছে আজব ফ্যাশন৷

মাস্ক আর গ্লাভস- জীবনের সঙ্গে এখন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে গিয়েছে মাস্ক এবং গ্লাভস৷ বিউটি ব্লগাররা তাঁদের মেকআপ লুকসও শেয়ার করছেন মাস্ক পরেই৷

পরিযায়ী শ্রমিকদের লড়াই- ঘরে ফেরার টানে পায়ে হেঁটেই হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়েছিল কিছু পরিযায়ী শ্রমিক৷ ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছিলেন রেল লাইনের উপর৷ কিন্তু তাঁদের আর বাড়ি ফেরা হয়নি৷ মালগাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান ২০ জন পরিযায়ী শ্রমিক৷ 

পৃথিবী কখনও এক গতিতে চলে না৷ ভালো-মন্দ আসে যায়পর্যায় ক্রমে৷ এখন তাই একটাই আশা, আবার ছন্দময় হয়ে উঠবে এই বিশ্ব৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven − 4 =