নয়াদিল্লি: রাখে হরি মারে কে! বয়স যখন মাত্র চার, তখন স্প্যানিশ ফ্লু-তে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি৷ সালটা ১৯১৮৷ ২০২০-তে এসে তাঁর শরীরে থাবা বসায় করোনা৷ কিন্তু এবারও অদম্য প্রাণশক্তিতে ভর করে হার মানান এই মারন ভাইরাসকে৷ করোনাকে পরাজিত করে জীবনযুদ্ধে জয়ী হন ১০৬ বছরের প্রৌঢ়৷ তিনি যে দ্রুততার সঙ্গে সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন, তাতে বিস্মিত চিকিৎসকরাও৷
জানা গিয়েছে, করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তাঁর ৭০ বছরের ছেলেও৷ তিনিও ধীরে ধীরে সুস্থ্য হয়ে উঠছেন৷ তবে ছেলের চেয়ে দ্বিগুণ তাড়াতাড়ি সেরে উঠেছেন এই বৃদ্ধ৷ দিল্লির রাজীব গান্ধী সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে ছাড়াও পেয়ে গিয়েছেন তিনি৷ তবে এখনও হাসপাতালে করোনার সঙ্গে লড়ছেন তাঁর স্ত্রী, ছেলে ও পরিবারের বাকি সদস্যরা৷
হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কথায়, এই প্রৌঢ়ই সম্ভবত দিল্লির একমাত্র রোগী যিনি ভয়াবহ স্প্যানিশ ফ্লুয়েরও সাক্ষী থেকেছেন৷ ১৯১৮ সালে সারা বিশ্বকে গ্রাস করেছিল স্প্যানিশ ফ্লু৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের মতে, এই ইনফ্লুয়েঞ্জাই এখনও পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মহামারী৷ ১৯১৮-১৯ সালের মধ্যে এই ফ্লু গোটা দুনিয়ায় ছেয়ে গিয়েছিল। শুরু হয়েছিল মৃত্যু মিছিল৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, সমগ্র বিশ্বে স্প্যানিশ ফ্লুতে মৃত্যু হয়েছিল কমপক্ষে ৪ কোটি মানুষের৷ ভারতেও মৃত্যু হয়েছিল প্রচুর মানুষের৷
১৯১৮ সালে আমেরিকার সেনাকর্মীদের মধ্যে প্রথম এই রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায়৷ স্প্যানিশ ফ্লু-তে আক্রান্ত হয়ে আমেরিকায় মৃত্যু হয় ৬,৭৫,০০০ জনের৷ গোটা বিশ্বের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ মানুষই এই মহামারীতে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে শোনা যায়৷ করোনার মতো ১০২ বছর আগে ভারতে এই মহামারী এসেছিল বিদেশ ফেরত মানুষদের হাত ধরেই৷ মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে এদেশে ফেরা সেনারাই এই রোগ বয়ে আনেন৷ মুম্বই (বম্বে), কলকাতা (ক্যালকাটা), দিল্লি এবং চেন্নাই (মাদ্রাজ)-এর মতো বন্দর এলাকাগুলিতে এই রোগ ভয়ঙ্করভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল৷
রাজীব গান্ধী সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘এই প্রবীণ স্প্যানিশ ফ্লু-তে আক্রান্ত হয়েছিলেন কিনা, তা আমরা জানি না৷ সেই সময় দিল্লির পরিস্থিতি কেমন ছিল, সে বিষয়ে বিশেষ কোনও নথি আমরা দেখিনি৷ সেই সময় হাসপাতালের সংখ্যাও অনেক কম ছিল৷ তবে ১০৬ বছর বয়সে এসে তিনি যে ভাবে বেঁচে থাকার ইচ্ছা শক্তি দেখিয়েছেন, তা এক কথায় অনবদ্য৷’’