মহালয়ার প্রভাতে আকাশবাণীতে বেজে ওঠে 'মহিষাসুরমর্দিনী', এর রেকর্ডিং কবে হয়েছিল জানেন?
কলকাতা: মহালায়ার প্রভাত মানেই আকাশবাণীতে অনুষ্ঠিত বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের অনুষ্ঠান 'মহিষাসুরমর্দিনী'। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির আবেগ, ভালোবাসা, নস্টালজিয়া। তাই 'মহিষাসুরমর্দিনী'কে অন্য কাউকে দিয়ে পরিবেশনার চেষ্টা করলেই সমস্যায় পড়েছেন আকাশবাণীর কর্তারা। এমনকি উত্তম কুমারও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেননি। কিন্তু জানেন কি আজ মহালয়ার পূণ্য তিথিতে যে 'মহিষাসুরমর্দিনী'র অনুষ্ঠান শোনেন, তার ইতিহাস কী?
'মহিষাসুরমর্দিনী' রচয়িতা বাণীকুমার, সুরের কারিগর পঙ্কজ কুমার মল্লিক এবং গ্রন্থনা ও স্তোত্র পাঠ শিল্পী বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র নিজেরাই তাঁদের কাজ নিয়ে অনেকবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। গড়েছেন, ভেঙেছেন, আবার নতুন করে লেখা হয়েছে 'মহিষাসুরমর্দিনী'। এই রচনা সম্প্রচার করা হয়েছে, আবার সেই সম্প্রসারিত অংশই পাল্টেছেন তাঁরা। তবে ১৯৭০ সালের পরে আর 'মহিষাসুরমর্দিনী' সরাসরি সম্প্রচার করা হয়নি। 'মহিষাসুরমর্দিনী' লেখা এবং পরিবেশনের ক্ষেত্রে একাধিকবার বদল আনলেও তাঁরা একবার রেকর্ড করেছিলেন এই অনুষ্ঠান। আজও আকাশবাণীতে সেই রেকর্ডিং সম্প্রসারিত হয়। এখন যে অনুষ্ঠানটি সম্প্রসারিত করা হয় তা সৃষ্টি হয়েছিল ১৯৬৬ সালে। পঙ্কজ কুমার মল্লিক, বাণীকুমার এবং বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ছিলেন এর তিন স্তম্ভ। ১৯৬৬ সালে যা তৈরি করা হয়েছিল তাই আজ ডিজিটাইজেশন করা হয়েছে। সেগুলোই এখন প্রতি বছর ভোরে সম্প্রসারিত করা হয়।
এনিয়ে বছর খানেক আগে আকাশবাণীর তৎকালীন সহ-অধিকর্তা ও প্রোগ্রাম হেড একটি সংবাদমাধ্যমকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, তাঁরা একবারই ঝুঁকি নিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি ফলপ্রসূ হয়নি। কারণ, 'মহিষাসুরমর্দিনী'র সঙ্গে বাঙালির আবেগ ও নস্টালজিয়া জড়িত। ফলে সেই অনুষ্ঠানে কোনও পরিবর্তন হলে তা সবসময় গ্রহণযোগ্য হয় না। বরং সমালোচিত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থেকে যায়। তা সত্ত্বেও তাঁরা সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আকাশবাণীর সংগ্রহশালার নিজস্ব যে সম্পদ রয়েছে, তাই সম্প্রচারিত করা হবে। সেই থেকে সম্প্রচারিত হচ্ছে রেকর্ডেড 'মহিষাসুরমর্দিনী'। ১৯৬৬ সালের রেকর্ডিং আজও অমর। আজও তাই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠ জানান দেয় পুজো এসে গিয়েছে।