শ্বশুরবাড়িতে ঠিক কী কী আইনি অধিকার পান বধূরা?

এখনও এদেশে প্রত্যেক দিনই প্রায় বধূ নির্যাতনের খবর আসে। আর এই ধরনের ঘটনা ততদিন ঘটতে থাকবে, যতদিন না মেয়েরা বিয়ের পরে তাদের আইনি অধিকারগুলি সম্পর্কে সচেতন হবেন। শ্বশুরবাড়িতে যে মেয়েরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের যোগ্য অধিকার এবং সম্মান পান না, তার সাম্প্রতিক উদাহরণ হল ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়, যেখানে বিচারপতি কে এস রাধাকৃষ্ণন

শ্বশুরবাড়িতে ঠিক কী কী আইনি অধিকার পান বধূরা?

এখনও এদেশে প্রত্যেক দিনই প্রায় বধূ নির্যাতনের খবর আসে। আর এই ধরনের ঘটনা ততদিন ঘটতে থাকবে, যতদিন না মেয়েরা বিয়ের পরে তাদের আইনি অধিকারগুলি সম্পর্কে সচেতন হবেন। শ্বশুরবাড়িতে যে মেয়েরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের যোগ্য অধিকার এবং সম্মান পান না, তার সাম্প্রতিক উদাহরণ হল ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়, যেখানে বিচারপতি কে এস রাধাকৃষ্ণন ও দীপক মিশ্রের বেঞ্চ জানায় যে, বাড়ির বউয়ের সঙ্গে পরিবারের সদস্যের মতো ব্যবহার করতে হবে, অপরিচিতের মতো নয়। সে পরিবারের অংশ, বাড়ির কাজের লোক নয়। এবং কোনও পরিস্থিতিতেই তাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া যাবে না।

এর পরেও গত দু’বছরে মুহুর্মুহু বধূ নির্যাতনের ঘটনা, শ্বশুরবাড়িতে হেনস্থার ফলে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। তাই ভারতীয় আইনে ঠিক কী কী অধিকারের কথা বলা আছে, সেই সম্পর্কে মেয়েদের ভাল ভাবে ধারণা থাকা উচিত—

সবধর্মনির্বিশেষে:

সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে বাঁচার অধিকার। পূত্রবধূর উপর কোনও রকম শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স অ্যাক্টের লঙ্ঘন। তাই শুধু যে গায়ে হাত তুললেই নয়, দুর্ব্যবহার ও ইচ্ছাকৃত মানসিক অত্যাচারও ভায়োলেন্সের মধ্যে পড়ে।

স্বামী ও পরিবার যে জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত, বধূকে ঠিক সমমানের জীবনযাত্রা দিতে হবে। এমনকী, স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে গেলেও স্ত্রী ও তার সন্তানের খাওয়াদাওয়া, থাকার জায়গা, পরিধান, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত খরচ বহন করা স্বামীর ‘আইনি’ কর্তব্য।

হিন্দু বধূদের অধিকার:

স্ত্রীধন হল সেই সমস্ত উপহার যা বিয়ের আগে বা পরে অর্থাৎ বিয়ে উপলক্ষে এবং সন্তানের জন্মের সময় একজন ভারতীয় বধূ পেয়ে থাকেন। এর মধ্যে পড়ে যে কোনও স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি, গয়না, উপহার, টাকা সব কিছুই। হিন্দু সাকসেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী, এই স্ত্রীধনের উপর একজন বধূর সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে। এমনকী, যদি তার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের থাকে, তবেও তিনি যে কোনও সময় স্ত্রীধন তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করতে পারেন। একজন বিবাহিত নারীর স্ত্রীধনের অধিকারকে নস্যাৎ করা ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স অ্যাক্ট ২০০৫-এর অন্তর্গত একটি অপরাধ। আবার স্ত্রীধন নষ্ট বা তার অপব্যবহারও সেকশন ৪০৫ অনুযায়ী একটি অপরাধ।

যতক্ষণ না বিবাহবিচ্ছেদের সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকারই শেষ কথা। স্ত্রীর সঙ্গে আইনি বিচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত অন্য কোনও বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক রাখতে পারেন না কোনও স্বামী।

স্বামী যে বাড়িতে থাকেন, সেই বাড়িতে থাকার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে বিবাহিত স্ত্রীর, সেটা হতে পারে স্বামীর পারিবারিক সম্পত্তি, ভাড়া করা বাড়ি অথবা কর্মসূত্রে পাওয়া থাকার জায়গা। স্ত্রীর সেই বাড়ির মালিক হোন বা হোন, তিনি যতদিন বাঁচবেন, ততদিন সেই বাড়িতে থাকার আইনি অধিকার রয়েছে তাঁর।

মুসলিম বধূদের অধিকার:

হিন্দুদের স্ত্রীধনের মতোই অনেকটা মুসলিমদের মেহের। বিয়ের সময় এটি স্ত্রীকে স্বামীর উপহার এবং একই সঙ্গে একটা প্রতিশ্রুতিও বটে। এর মধ্যে গয়না, নগদ অর্থ, বাড়ি অথবা যে অর্থমূল্য রয়েছে এমন যে কোনও সম্পত্তি হতে পারে। মেহের-এর সম্পূর্ণ অধিকার কিন্তু সেই নারীর এবং সহবাস শুরু করার আগে মেহের স্ত্রীকে দান করতে হয়। তা না হলে স্ত্রী সহবাস আটকে দিতে পারেন। অনাদায়ী মেহেরের জন্য স্ত্রী আইনের দ্বারস্থ হতে পারেন। সেকশন ১২৫-এর মধ্যেও রক্ষণাবেক্ষণের মধ্যে ধরা হয় মেহেরের অর্থ।

শরিয়তী আইন অনুযায়ী স্বামীর মৃত্যুর পরে একজন মুসলিম নারী তাঁর স্বামীর সম্পত্তির আট ভাগের একভাগের ভাগীদার হবেন যদি তাঁদের সন্তানাদি থাকে। সন্তান না থাকলে স্বামীর সম্পত্তির চারভাগের একভাগ স্ত্রীর প্রাপ্য।

বিবাহবিচ্ছেদের পরে, ইদ্দত পর্যায় পর্যন্ত খরচা বহন করা স্বামীর দায়িত্ব। ইদ্দত শেষ হলে যদি সেই নারীর পুনর্বিবাহ না হয় এবং সে নিজের খরচা বহন করতে অক্ষম হয় তবে তার পরিবারের পক্ষ থেকে রক্ষণাবেক্ষণ খরচের জন্য আবেদন করা যায় মুসলিম নারীদের বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত আইনের আওতায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × one =