কলকাতা: জলের অপর নাম জীবন হলেও বাতাসে হিমেল হাওয়া মানেই জলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকা৷ শীতের কয়েক মাস আমরা নিজেদের অজান্তেই জলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে ফেলি৷ স্নানের ক্ষেত্রেই হোক বা খাওয়ার ক্ষেত্রে, জলের পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়৷ কিন্তু আমাদের শরীরের শতকরা ৭৫ ভাগই যেখানে জলের ওপর নির্ভরশীল সেখানে কোন কারণে তার ঘাটতি হলে স্বাভাবিকভাবেই শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ ব্যাহত হবে৷ এমনিতেই যারা জল কম খান তাদের শরীরে নানা রকম জটিলতা দেখা দেয়৷
কিন্তু শীতকালে হঠাৎ করে যারা জল খাওয়া কমিয়ে দেন তাদের ক্ষেত্রেও কিন্তু এর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে৷ এক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হলো ডিহাইড্রেশন অথবা জলশূন্যতা৷ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা যারা বিশেষ কোন রোগে ভুগছেন তারাই জলের অভাব জনিত সমস্যায় বেশি ভোগেন৷ ছোট থেকে বড় সব বয়সীদের ক্ষেত্রে এটা হতে পারে৷ শব্দটির সঙ্গে পরিচয় থাকলেও একে আমরা তেমন গুরুত্ব দিতে চাই না৷ কিন্তু এই ডিহাইড্রেশন মারাত্মক হতে৷ পারে তাই জাঁকিয়ে শীত পড়ার আগেই সতর্ক হোন৷ শরীরে জলের ঘাটতি নিজেই বুঝতে পারবেন কয়েকটি সমস্যা দেখা দিলে৷ দেখা যাক সমস্যা গুলি ঠিক কি ধরনের৷
মাথা ধরা ও ক্লান্তি: শরীরে জলের ঘাটতি থাকলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা দেয় মাইল্ড ডিহাইড্রেশন৷ এর ফলে হঠাৎ করেই শীতের ফুরফুরে আমেজ মন থেকে উধাও হয়ে যাবে৷ শরীর-মনের ক্লান্তি বাড়বে৷ তার সঙ্গে মাথা ধরামাথা, মনঃসংযোগের অভাব হবে৷ শীতে আমাদের ঘাম কম হলেও, মনে রাখতে হবে মল-মূত্র, চোখের জল এমনকী শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গেও কিছুটা জল হারায় শরীর৷ তাই নিয়ম মেনে জল খেতে হবে৷
বারবার অসুখে পড়া: জলের মাধ্যমেই শরীরের যাবতীয় টক্সিন, ব্যাকটেরিয়া বেরিয়ে গিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে৷ যাঁরা জল কম খান, তাঁদের শরীরে বিষাক্ত পদার্থগুলি বেশিক্ষণ জমে থাকে৷ ফলে ক্রমশ দুর্বল হতে আরম্ভ করে প্রতিরোধক্ষমতা৷ জল কম খেলে ক্লান্তিও বেড়ে যায়, ফলে শরীরের ফিটনেস খুব দ্রুত কমতে শুরু করে৷
বারবার খিদে পাবে: আপনার শরীরের খিদে আর তৃষ্ণার বোধ জানান দেয় যে কেন্দ্রগুলি, সেগুলির অবস্থান খুব কাছাকাছি৷ তাই অনেক সময়েই আমরা তেষ্টার উপসর্গগুলিকে খিদে মনে করে ভুল করি৷ যাঁরা ক্রনিক ডিহাইড্রেশনে ভুগছেন, তাঁদের মিষ্টি বা ভাজাভুজিজাতীয় খাবারের প্রতি বেশি আকর্ষণ থাকে৷
কোষ্ঠকাঠিন্য: শীতকালেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেশি দেখা দেয়৷ সেক্ষেত্রে জল খাওয়ার মাত্রা বাড়াতে হবে৷ কোলন শরীরের কঠিন বর্জ্য জমা রাখার প্রধান স্থান৷ শরীরের এই অংশটি মল থেকেও জল শোষণ করে৷ তাই জল কম খেলেই মল হয়ে পড়বে কঠিন, ফলে তা শরীর থেকে বেরনোর সময়েও সমস্যা হবে৷ জল বেশি খেলে তাতে হজম ভালো হবে, মল নরম থাকবে৷
মূত্রে জ্বালাভাব: মূত্রের মাধ্যমে আমাদের শরীর প্রচুর টক্সিন বেরিয়ে যায়৷ যাঁরা জল কম খান, তাঁদের ইউরিন কম হয় এবং হলেও তাতে জ্বালাভাব থাকে৷ জল কম খেলে ইউরিন ইনফেকশন হতে পারে৷
নিশ্বাসে দুর্গন্ধ: স্যালাইভা বা লালা তৈরি করতে এবং মুখের মধ্যে জমে ওঠা ব্যাকটেরিয়া তাড়াতে জলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে৷ জল কম খেলে কম লালা তৈরি হবে, মুখের মধ্যে জন্মানো ব্যাকটেরিয়া জমে উঠবে জিভে, দাঁতে, মাড়িতে৷ ফলে দুর্গন্ধ ছড়াবে৷ যাঁরা মুখের স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য সমস্ত বিধি যথাযথভাবে মেনে চলার পরেও শ্বাসের দুর্গন্ধ বেড়ে গেলে দিনে অন্তত এক লিটার বেশি জল খেতে হবে৷
ত্বকের অনুজ্জ্বলতা: শরীরে টক্সিন জমে থাকলে ত্বকের স্বাস্থ্যও ক্রমশ খারাপ হতে শুরু করবে৷ ত্বক তার স্থিতিস্থাপকতা ও ঔজ্জ্বল্য হারাবে, বলিরেখা পড়তে আরম্ভ করবে সময়ের আগেই৷ ব্রণ বা ফাঙ্গাল ইনফেকশনও ফিরে ফিরে আসবে দুর্বল ইমিউনিটির কারণে৷ বিশেষ করে শীতের দিনে ত্বক খসখসে হয়ে যাবে, চুল হয়ে পড়বে রুক্ষ৷
কিন্তু সমস্যা হল জল তেষ্টা না পেলে জলের স্বাদ ও অপরিহার্যতা সেই অর্থে বোঝা যায় না৷ তাই ঠান্ডায় জল খেতে অনীহা থাকলেও শরীর ভালো রাখতে জল তো খেতেই হবে৷ সেক্ষেত্রে সুস্বাদু জল পাওয়া যেতেই পারে৷ যেমন ডাবের জল অথবা লেবুর জলও খাওয়া যেতে পারে দু একবার৷ ফলের রস হলে তো কথাই নেই, একইসঙ্গে পুষ্টি ও জলের ঘাটতি পূরণ৷ এখনতো আবার ইনফিউজড ওয়াটার বটলের রমরমা৷ জলের মধ্যেই পছন্দসই ফল, সবজি, বিভিন্ন হার্বস মিশিয়ে জলের একঘেয়ে স্বাদ ও গন্ধে কিছুটা পরিবর্তন এনে জল খাওয়ার অভ্যাস রপ্ত করছেন অনেকেই৷