বেঁধেছে জোর কাজিয়া। ‘কুক অ্যাট হোম চাইনিজ’ (১৯৩৮) গ্রন্থ থেকে প্রমাণ তুলে এনে একদল চিনে খাদ্যরসিক বলছেন, এগরোল আসলে তাঁদের খাবার। অন্য দিকে মার্কিনিরা তো সেই কবে থেকেই বলে আসছে, এগরোল তাদের। সব মিলে ‘বিনা যুদ্ধে সূচাগ্র মেদিনী নাহি দিব’ অবস্থা।
কিন্তু তাতে বাঙালির কী! ‘রাখিস মা রসেবশে’ বলে বাঙালি সেই যে বিশ শতক থেকে রোল সাঁটাচ্ছে, একুশে এসেও সেই নোলা সপসপ এতটুকুও কমেনি। হ্যাঁ, হালের বাজারচলতি স্যান্ডুইচ, পিৎজার দাপটে রোলের বাজার আজ ম্রিয়মাণ ঠিকই। তবে, রসিকজনে জানে রোলের মহিমা। গত শতকের শেষ দশকে এই কাটলেট–কবিরাজি- চপ তিন ইয়ারের আধিপত্যের দিন ফুরিয়ে এলে ক্যালকেশিয়ানদের রোজকার পছন্দের তালিকায় সসম্মানে জায়গা করে নিয়েছে রোল।
অনেকে মনে করেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কলকাতায় আসা আমেরিকান সৈন্যরা রোল বস্তুটি গলাঃধকরণ করতেন সস্তায় পুষ্টিকর খাবার হিসেবে। অন্য দিকে, নিজামের খানসামারাও নাকি রোল বানাতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। সেই রোলের রেসিপি ছিল রাজকীয়। সাদামাটা হাতফেরতা এগরোলের জনক হিসেবে নাম উঠে আসছে শেখ হাসান রেজা নামক এক ব্যক্তির।
বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিনিরা চলে গিয়েছে নিজভূমে। স্বাধীনতার পর বাঙালি সেভাবে রোলে মজেনি। স্বদেশির স্বপ্ন বুকে আদর্শবান বাঙালি চপে মজে থেকেছে। লক্ষী নারায়ণ সাউ অ্যান্ড সন্সের তেলেভাজা স্বয়ং নেতাজি খেতেন! পরে বিবর্তনের সূত্র ধরে এসেছে কাটলেট, কবিরাজি। আশির দশকের শেষাশেষি থেকে এই বেতাজ বাদশা ফিরে ফিরে এসেছে নব নব রূপে। নিজামের বিফ রোল বাংলা শাসন করেছে কয়েক যুগ। কুসুমের কাঠিরোল, বেদুইনের চিকেন রোলও কতকালের আত্মার আয়ুধ ছিল। গোঁফের রেখা দেখা দেওয়া সদ্য কিশোর টানাটানি পকেট নিয়ে কলেজে পৌঁছে রোলেরই দ্বারস্থ হয়েছে কতবার। বিকেলবেলা মফস্সলের পুরুষ কলকাতার আপিস থেকে ঘরে ফিরেছে এগরোল হাতে। নব্বইয়ের দশকে ৪ টাকার রোল মিলিনিয়ামে ২৫ টাকা হয়েছে, টিমটিমে আলোর মতো মফস্সলে জেগে আছে রোলের দোকান।
সব পালটায়। মানুষের স্বাদকোরকও। একুশ শতকে রোলের জগতে নয়া এডিশন শাওয়ারমা রোল, দক্ষিণ কলকাতায় এই রসনার জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। এগরোলের স্মরণাতীত দিনকে কি মনে রেখেছে আজকের একুশ? উত্তর এখনও মেলে নাই।