আদৌ মিলবে বকেয়া মহার্ঘ ভাতা? ক্ষোভ বাড়িয়ে সময় কিনছে রাজ্য?

কলকাতা: দীর্ঘ মামলার জট কাটিয়ে বকেয়া মহার্ঘভাতা মিটানোর দাবি ছিনিয়ে এনেছিলেন সরকারি কর্মচারীদের একাংশ৷ কর্মচারী সংগঠনের দক্ষ আইনজীবীদের সওয়ালের পরিপ্রেক্ষিতে বকেয়া মহার্ঘ ভাতার মামলার রায় গিয়েছিল বাংলার সরকারি কর্মচারীদের পক্ষেই৷ রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল বা স্যাট তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার বিষয়ে নীতি-নির্ধারণেও বিষয়ে রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছিল৷ কিন্তু স্যাটের দেওয়া সেই সময়সীমা শেষ

আদৌ মিলবে বকেয়া মহার্ঘ ভাতা? ক্ষোভ বাড়িয়ে সময় কিনছে রাজ্য?

কলকাতা: দীর্ঘ মামলার জট কাটিয়ে বকেয়া মহার্ঘভাতা মিটানোর দাবি ছিনিয়ে এনেছিলেন সরকারি কর্মচারীদের একাংশ৷ কর্মচারী সংগঠনের দক্ষ আইনজীবীদের সওয়ালের পরিপ্রেক্ষিতে বকেয়া মহার্ঘ ভাতার মামলার রায় গিয়েছিল বাংলার সরকারি কর্মচারীদের পক্ষেই৷ রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল বা স্যাট তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার বিষয়ে নীতি-নির্ধারণেও বিষয়ে রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছিল৷ কিন্তু স্যাটের দেওয়া সেই সময়সীমা শেষ হয়ে গিয়েছে৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত বকেয়া মহার্ঘ ভাতা মেটানোর বিষয়ে রাজ্য সরকারের তরফে কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি না হওয়ায় কর্মীমহলে ফের জারি বিক্ষোভ৷

বকেয়া মহার্ঘ ভাতা মেটানোর বিষয়ে স্যাটের নির্দেশ অনুযায়ী কোনও নীতি নির্ধারণের কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি না হওয়ায় এবার রাজ্যের বিরুদ্ধে অবমাননা মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি শুরু সরকারি কর্মচারীদের সংগঠনের৷ পুজোর ছুটির কারণে বন্ধ রয়েছে রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল বা স্যাট৷ ফলে, আপাতত দিন কয়েক সময় নিয়ে নতুন ধারায় মামলার প্রস্তুতি নিতে চলেছে কনফেডারেশন অব স্টেট গভমেন্ট এমপ্লয়িজ৷ পুজোর ছুটির পর স্যাটের কাজ শুরু হলেই ট্রাইব্যুনালের অবমাননা মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত কর্মচারী সংগঠনের৷

এবিষয়ে কনফেডারেশন অব স্টেট গভমেন্ট এমপ্লয়িজের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘স্যাটে এখন পুজোর ছুটি চলছে৷ খুলবে আগামী বৃহস্পতিবার৷ ওই দিন অবমাননা মামলা দায়ের করা হবে৷ স্কুটিনি পরবর্তী মামলাটি পয়লা নভেম্বর মহামান্য ২ বিচারপতি মাননীয় রঞ্জিত কুমার বাগ ও সুবেশ কুমার দাস মহাশয়ের বেঞ্চে ওঠার সম্ভবনা৷ তাঁদের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ আমরা জানতে পারব৷’’

দীর্ঘ মামলার জট কাটিয়ে গত ২৬ জুলাই স্যাটের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, রায় ঘোষণা হওয়ার তিন মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার বিষয়ে নীতি নির্ধারণ করতে হবে৷ কেন্দ্রের হারে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের দিতে হবে মহার্ঘ ভাতা৷ বছরে দু’বার মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার কথাও স্যাটের রায় উল্লেখ করা হয়েছে৷ স্যাটের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, ২৬ জুলাই রায় ঘোষণা হওয়ার তিন মাসের মধ্যে অর্থাৎ ২৫ অক্টোবরের মধ্যে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার বিষয়ে রাজ্য সরকারকে নীতি নির্ধারণ করতে হবে৷ ছ’মাসের মধ্যে তা কার্যকর করতে হবে৷ এক বছরের মধ্যে বকেয়া মিটিয়ে দিতে হবে অথবা ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালু হওয়ার আগে৷

কিন্তু, স্যাটের দেওয়া তিন মাসের নীতি নির্ধারণের সময়সীমা শেষ হয়ে গিয়েছে৷ কিন্তু, তিন মাস সময় পাওয়ার পরও কেন বকেয়া মহার্ঘ ভাতা মেটানোর বিষয়ে নীতি নির্ধারণ করল না রাজ্য? সরকারি কর্মচারীদের একাংশের প্রশ্ন, রাজ্য সরকার কি সময় কিনতে চাইছে? ঠিক যেভাবে ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালু করার বিষয়ে ৪ বছর কাটিয়ে দিল রাজ্য সরকার! ঠিক একইভাবে কি মহার্ঘভাতা মিটানোর বিষয়ে সময় কিনবে রাজ্য? ষষ্ঠ বেতন কমিশন ২০১৫ সালের ২৭ নভেম্বর গঠন করা হলেও তা কার্যকর হতে চলেছে আগামী বছর পয়লা জানুয়ারি থেকে৷ কর্মচারী মহলের প্রশ্ন, সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাসের জন্য রাজ্য সরকারের যদি চার বছর সময় লেগে যায়, তাহলে বকেয়া মহার্ঘ ভাতা মেটানোর বিষয়টিও কি একই ভাবে বছর চারেক সময় লাগবে? আদৌ কি বকেয়া মহার্ঘভাতা রাজ্য সরকার মেটাবে? না কি আইনি জটিলতা বাড়িয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা থেকে বঞ্চিত রাখা হবে৷ সরকারি কর্মচারীদের একাংশের আশঙ্কা, খুব সম্ভবত রাজ্য সরকার স্যাটেলাইটে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে৷ কারণ মামলা হলে সুবিধা রাজ্য সরকারের! মামলা যত দীর্ঘায়িত হবে ততো সুবিধা হবে রাজ্যের! আর ততই বাড়বে সরকারি কর্মচারী মহলের ক্ষোভ৷ সবদিক বিবেচনা করে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের মুখে রাজ্য সরকার কি বকেয়া মহার্ঘভাতা মেটানোর বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেবে? তা নিয়েও যথেষ্ট চিন্তিত কর্মচারী৷ তাদের অভিযোগ, ভোটের আগে সরকারি কর্মচারীদের জন্য জনমোহিনী প্রস্তাব দিলেও আদতে তাদের সেই ক্ষত নির্মাণ করা যাবে?

এননিতেই ষষ্ঠ বেতন কমিশনের পরিপ্রেক্ষিতে রোপা ২০১৯-এ মহার্ঘ ভাতা সম্পর্কে বিস্তারিত কোনও তথ্য না থাকায় ক্ষোভ রয়েছে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে৷ এমনকি, রোপা ২০১৯ সরকারি কর্মীদের ‘সার্ভেন্ট’ বলে উল্লেখ করে কোনও বকেয়া দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ একদিকে বকেয়া না দেওয়ার ঘোষণা, সরকারি কর্মচারীদের ‘সার্ভেন্ট’ বলে উল্লেখ করা, বকেয়া মহার্ঘ ভাতা নিয়ে স্যাটের নির্দেশ অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত কোনও নীতি নির্ধারণ না হওয়ায় কর্মচারী মহলে নতুন করে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × two =