কলকাতা: ‘‘মস্তিষ্কের বিশ্রামের জন্য ছুটি দরকার৷ ৩৬৫ দিন কাজ করতে হলে কয়েক দিনের ছুটি তো লাগেই৷ তবে মস্তিষ্কের বিশ্রামের জন্য আমি হয়তো একটু বেশিই ছুটি দিই৷’’ পোস্তায় জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আগামী বছর পুজোয় ১৭ থেকে ৩১ অক্টোবর অবধি ছুটি ঘোষণা করেন, রাজ্য সরকারি দফতরে৷ এই নিয়েই এখন মিশ্র প্রতিক্রিয়া নানা মহলে৷ সরকারি কর্মচারীদের জন্য এই খবর নিঃসন্দেহে সুখকর৷ তবে আইএনটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় বলছেন অন্য কথা৷ তাঁর মতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কর্মচারিদের যতটা বোকা মনে করেন তাঁরা ততটা বোকা নন৷ তিনি তাঁর তহবিল বাড়াবার জন্যই এত বেশি ছুটি দিয়ে থাকেন৷
তাঁর মতে পূর্বে সরকারি দপ্তর গুলিতে শনিবার অর্ধ দিবস ছুটি থাকত৷ পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় এবং চতুর্থ শনিবার দপ্তর বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ আর বর্তমানে প্রতি শনিবার সরকারি দপ্তর গুলি ছুটি থাকে৷ এর মূল কারণ, সরকারি অর্থের অপচয় বন্ধ সহ দপ্তর গুলির এস্টাব্লিশমেন্ট খরচ বাঁচান৷ তাই স্বাভাবিক নিয়মেই যত ছুটি তত সঞ্চয়৷ সরকারি কর্মচারিদে বেতন-ভাতা নিদিষ্ট নিয়মে না দিয়ে একদিকে যেমন সরকারি তহবিলের শ্রীবৃদ্ধি ঘটাচ্ছেন, অন্যদিকে কর্মীদের ছুটি দিয়ে সেই কাজটি তিনি করে যাচ্ছেন৷ এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের পরিষেবার থেকে শুধু টাকাকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন মাননীয়া৷
এপ্রসঙ্গে এবারের ছট পুজোর ছুটির কথা উল্লেখ করে মলয় বাবু বলেছেন, এবারে ছট শনি-রবিবার পড়ায়, সেই ছুটি কর্মীরা সোমবারও উপভোগ করল৷ অথচ হিন্দীভাষী রাজ্যগুলিতে তিথি অনুযায়ী শনি-রবিবার ছুটি প্রদান করা হয়েছে৷ তবে বর্তমান সময়ে এই রাজ্যে বাড়তি ছুটি সেটা কোনও বিশেষ ব্যাপার নয়৷ এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পঞ্জিকা মতে দিন, তিথি-নক্ষত্র বিচারে, পালা-পার্বণের কোনও ছুটি শনি,রবি বা অন্য কোনও ছুটির দিন পড়লে সেই ছুটি পরবর্তী কাজের দিনে স্থানান্তরিত করে, কর্মীদের অতিরিক্ত ছুটি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে৷ কারন লক্ষ্য করলে দেখা যাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে,গত ২০১৭ সালের ২৬ শে অক্টোবর এই ছট পুজো উপলক্ষে অর্থ দফতর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিলেন, ওই দিন ছটে সব সরকারি দপ্তর ছুটি থাকবে৷ কিন্তু হঠাৎ বিজ্ঞপ্তির পরিবর্তন ঘটিয়ে বলা হল যে, ২৬|১০|১৭ সেকশনাল হলিডে আর ২৭|১০|১৭ ছট পুজো উপলক্ষেই সকলের ছুটি৷অর্থাৎ একটা কাজের দিন নষ্ট করে ছুটি দেওয়া হয়েছিল৷
বাম আমলে ছট পুজোর ছুটির কথা উল্লেখ করে মলয় বাবু বলেন যে এই ছুটি সেকশনাল হলিডে হিসাবে দেওয়া হত৷ কিন্তু মাননীয়া গত ২০১৬ নভেম্বর একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বলেছিলেন, বিহার, উত্তরপ্রদেশ-সহ বহু হিন্দিভাষী এই রাজ্যে বাস করেন, তারা বাংলাকে ভালবাসেন, তাই এবার (২০১৬) থেকে ছট পুজোয় সবার জন্য ছুটি;৷বলাবাহুল্য সেবারেও ছটপুজো রবিবার পড়ায় সেই ছুটি সোমবার দেওয়া হয়েছিল৷ গতবারে (২০১৮) ছট পুজোর ছুটি ছিল ১৩|১১|১৮ তা নিয়ে বিজ্ঞপ্তিও জারি হয়েছিল৷ কিন্তু মাননীয়ার কথা মতো আগের দিনটি (১২|১১) আরও একটি সেকশনাল হলিডে দিয়ে দেওয়া হয়৷
বিগত দিনে দোলে ছুটি থাকলেও হোলিতে ছুটি ছিল না৷ কিন্তু গত ২০১৬ তে দোলের স্বাভাবিক ছুটি ছিল, ২৩|০৩|১৬, পরদিন হোলির অতিরিক্ত ছুটি দেওয়া শুরু হয়৷ ২৫|০৩|১৬ গুড ফ্রাইডের ছুটি৷ পরবর্তী দুদিন ছিল শনি-রবি৷ ফলে সরকারি কর্মচারীরা টানা ৫ দিন ছুটি উপভোগ করেছিলেন৷ ২০১৭ তে দোল আর হোলির মধ্যে রবিবার পড়ায় সোমবার কাজের দিনটিতে ছুটি ঘোষনা করা হয়ে ছিল৷বাম আমলে ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে প্রকাশিত ২০১১ সালের সাধারণ ছুটির বিজ্ঞপ্তি অনুসারে কর্মীদের মোট ছুটি ছিল ১৭ দিন৷ সঙ্গে ৪ টি সেকশনাল হলিডে৷ ২০১৭ তে সেই ছুটি গিয়ে দাঁড়ায় ২৭ টিতে৷ ২০১৮ তে বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ৩৫ টি৷
গত বছর(২০১৮) মাননীয়া একটি পুজো উদ্ধোধনে গিয়ে বলেছিলেন, এবারের (২০১৮) সরকারি ক্যালেন্ডারে ৩৫ দিন সরকারি ছুটি ছিল৷ কিন্তু আগামী (২০১৯) সরকারি ক্যালেন্ডার তৈরি করতে গিয়ে দেখা যায় ২৭ টি ছুটি৷ কারণ ৪ টি ছুটি রবিবার পড়ায় তা কমে যায়৷ আমি সরকারি কর্মীদের পক্ষে, তাই ওই ৪ টি ছুটি দিয়ে দিলাম৷তাই ২০১৯ শে খাতায় কলমে ২৭ + ৪= ৩১ হলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে অক্টোবর মাসেই ৩১ দিনের মধ্যে ২০ দিনই ছুটি ছিল৷
তাই এখন আর সরকারি ক্যালেন্ডারের ছুটির কোনও মুল্য নেই৷