কলকাতা: উচ্চ প্রথমিকে শিক্ষক নিয়োগে কেন এত জটিলতা? পরীক্ষা দিয়ে পাশ কারার তিন বছর পরেও কেন ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন করা গেলে না? এর পেছনে কোনও রহস্য আছে কি না জানতে মুখ্যংমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন সুজন চক্রবর্তী৷ ২০১৪ সালে সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত দীর্ঘ পাঁচ বছরে কেন নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হল না? ঠিক কী অভিযোগ তুলছেন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন?
জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে যখন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হয় তখন উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষকের শূন্যপদ ছিল ১৩হাজার ৪৮৪। বর্তমানে সেই শূন্যপদের সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে বলে প্রার্থীদের দাবি। তবে উচ্চ প্রাথমিকে বর্তমানে ঠিক শূন্যপদের সংখ্যা কত তা অজানা এসএসসি কর্তৃপক্ষের কাছে।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এখন শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ যেহেতু মধ্যশিক্ষা পর্ষদ করে তাই তাদের কাছেই রয়েছে প্রকৃত শূন্যপদের সংখ্যা। এ নিয়ে পর্ষদের পক্ষ থেকে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ হয়ে গেলেও কতজন প্রার্থীকে স্কুলে সুপারিশ করা হয়েছে এবং তারমধ্যে কতজনের চাকরি হয়ে গিয়েছে, সেই সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনও জানায়নি মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। বর্তমানে নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। এরপর পর্ষদের দায়িত্ব স্কুলগুলিতে চাকরি প্রার্থীদের সুপারিশ করা। কিন্তু সেই কাজ কতদূর এগিয়েছে তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। পর্ষদের এই ঢিলেঢালা পদক্ষেপ দেখে এসএসসি চাকরি প্রার্থীরা নিয়োগ নিয়ে সংশয়ের মধ্যে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভকারী চাকরিপ্রার্থীদের বক্তব্য, ১২ফেব্রুয়ারি থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এই পরীক্ষা নিয়ে পর্ষদের দায়িত্ব অনেক বেশি। সেই কাজের মধ্যে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ আদৌও পর্ষদের পক্ষে সম্ভব কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। মাধ্যমিকের পরেই শুরু হবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। সেই পরীক্ষার মাঝে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে সংশয় রয়েছে। দুটি বড় পরীক্ষার পরেই লোকসভার দামামা বেজে যাবে। নিয়োগ হবে কী, প্রশ্ন এসএসসি প্রার্থীদের।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে সুজন চক্রবর্তী জানান, ‘‘এটা গভীর পরিতাপের যে, রাজ্যের স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দীর্ঘ টালবাহানা চলছে৷ চাকরি-প্রার্থী শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা বিভ্রান্ত হচ্ছে বার বার৷ ২০১৫ সালে ১৬ আগস্ট আপার প্রাইমারির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা গ্রহণ করে স্কুল সার্ভিস কমিশন৷ এক বছর পর ২০১৬ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ফল প্রকাশ করে৷ আরও দু’বছর পর ২০১৮ সালে চাকরি-প্রার্থীদের ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশনের জন্য তালিকা প্রকাশ করা হয়৷ কিন্তু, তাঁদের ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন করে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করা হয়নি৷ গত ২১ জানুয়ারি, ২০১৯ এসএসসির চেয়ারম্যান সংবাদমাধ্যমে জানান, ২৯ জানুয়ারি ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন শুরু হবে৷ কিন্তু, তা শুরু হয়নি৷ চাকরিপ্রার্থীরা ক্ষুব্ধ৷ বস্তুত, তাঁদের চাকরি জীবনে বেশ কয়েকটি বছর কেড়ে নেওয়া হল, সরকারি নিয়োগ সংস্থার অপদার্থতায়৷ অথচ তাঁদের অন্দোলনের প্রতি সহানুভূতির পরিবর্তে পুলিশ প্রশাসনকে দিয়ে হয়রানি ও নির্মম আক্রমণ চলানো হচ্ছে৷ সঙ্গত কারণেই গত ৭ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে বিধাননগরে আচার্য সদনের সামনে তাঁরা আন্দোলনে বসেন৷ তাঁরা এসএসসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেন৷ আমি আন্দোলনরত যুবকদের সঙ্গে দেখা করি৷ ওরা সত্যিই যন্ত্রণার মধ্যে আছে৷ রাজ্যের স্কুলগুলিতেও শিক্ষক গুরুতর অভাব রয়েছে৷ পরীক্ষা দিয়ে পাশ করার পরও কেবল মাত্র ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশনের জন্য তিন বছর সময় ব্যয় করার কোনও যুক্তি সংগত ব্যাখ্যা থাকতে পারে না৷ ওরা পরীক্ষা দিয়েছে৷ পাশ করেছে৷ ভেরিফিকেশনের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে৷ অথচ তাঁর জন্য ইতিমধ্যেই এত দিন সময় অতিবাহিত হল কেন? কী রহস্য? এটা কারো পক্ষেই বোঝা সম্ভব নয়৷ ওদের দাবি অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত৷’’