কেন চালু হচ্ছে না ষষ্ঠ বেতন কমিশন? অভিরূপ সরকারকে গণচিঠি কর্মীদের

কলকাতা: ছ’মাসের বেতন কমিশন। ৪২ মাস গড়িয়ে গিয়েছে। দেখা নেই ডিএর৷ বাড়ছে না বেতন৷ ফের থমকে ষষ্ঠ বেতন কমিশন৷ তার সময়সীমা বাড়েছে আরও সাত মাস৷ দীর্ঘ দিনের বেতন বঞ্চনা নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মী মহলে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে অসন্তোষ৷ এই অসন্তোষের মধ্যেই ফের আরও এক দফায় বেড়েছে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের মেয়াদ৷ কিন্তু, হঠাৎ কেন এই

কেন চালু হচ্ছে না ষষ্ঠ বেতন কমিশন? অভিরূপ সরকারকে গণচিঠি কর্মীদের

কলকাতা: ছ’মাসের বেতন কমিশন। ৪২ মাস গড়িয়ে গিয়েছে। দেখা নেই ডিএর৷ বাড়ছে না বেতন৷ ফের থমকে ষষ্ঠ বেতন কমিশন৷ তার সময়সীমা বাড়েছে আরও সাত মাস৷ দীর্ঘ দিনের বেতন বঞ্চনা নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মী মহলে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে অসন্তোষ৷ এই অসন্তোষের মধ্যেই ফের আরও এক দফায় বেড়েছে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের মেয়াদ৷ কিন্তু, হঠাৎ কেন এই সিদ্ধান্ত? কেন জমা পড়ল না কমিশনের রিপোর্ট? এই প্রশ্নের জবাব চাইতে এবার অভিনব কর্মসূচির ঘোষণা ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন৷

সরকারি কর্মী সংগঠনের তরফে প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, অবিলম্বে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করতে কমিশনের চেয়ারম্যানকে পাঠানো হবে চিঠি৷ চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকারকে পোস্ট কার্ড পাঠিয়ে জানতে চাওয়া হবে, কেন ছ’মাসের বেতন কমিশন ৪২+৭ মাসেও তাদের রিপোর্ট জমা দেওয়ার কাজ শেষ করতে পারল না৷ কবে, চালু হবে বেতন কমিশন? সংগঠনের তরফে একটি পোস্টকার্ডে একটি বয়ানও প্রকাশ করেছে৷ সেখানে লেখা হয়েছে, ‘‘আপনার কাছে আমাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ যে আপনি অবিলম্বে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ সপারিশ সরকারের কাছে জমা দিন৷’’

ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের দাবি, বেতন কমিশনের চালুর দাবিতে এবার সরকারি কর্মীরা একটি করে পোস্টকার্ড চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকারের দপ্তরে পাঠাবেন৷ কমপক্ষে ১০ হাজার চিঠি পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ বেতন কমিশন চালুর দাবিতে সমস্ত সরকারি কর্মীদের এই পোস্টকার্ড পাঠানোর আর্জি জানিয়েছে সংগঠন৷

সরকারি কর্মচারীদের অভিযোগ, রাজ্য সরকারি কর্মীরা নিজেদের পাওনা থেকে বঞ্চিত৷ কমিশনের চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকার নিজে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী৷ তিনি সর্বোচ্চ হারে ডিএ ভোগ করে আসছেন৷ আর রাজ্য কর্মীরা বঞ্চিত হচ্ছেন দিনের পর দিন৷ আর সেই কারণে এই কর্মসূচি ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের৷

কেন চালু হচ্ছে না ষষ্ঠ বেতন কমিশন? অভিরূপ সরকারকে গণচিঠি কর্মীদেরগত বছরের ২৭ নভেম্বর ছ’মাসের জন্য কমিশনের কার্যকালের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। ওই সময়সীমা শেষ হচ্ছে হতেই ফের পশ্চমবারের জন্য বাড়াল কমিশনের মেয়াদ৷ রাজ্যের তরফে জানানো হয়, বেতন কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও ৭ মাস৷ আগে ছ’মাস করে চার বার বাড়ানো হয় কমিশনের মেয়াদ৷ বেতন কমিশনের মেয়াদ আরও এক দফা বাড়তে চলেছে বলে আগেই প্রতিবাদেন পেশ করে আজ বিকেল ডট কম৷ জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই কর্মী সংগঠন দের দাবির শুনানি হয়ে গিয়েছে৷ সম্পন্ন হয়েছে ২৫ টি দপ্তরের কাজ৷ কিন্তু ২৬টি দপ্তরের কাজ ও ৭৮টি আধা সরকারি সংস্থার কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি৷ ফলে এই কাজগুলি করতে আরও সাত মাস সময় লাগবে বলে নবান্নের তরফে জানানো হয়৷

গত ২৭ মে সাত মাসের জন্য কমিশনের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ বিজ্ঞপ্তি জারি করে অর্থদপ্তর৷ গত ২০১৫ সালের ২৭ নভেম্বরে তৃণমূল সরকারের তৈরি করা ষষ্ঠ বেতন কমিশন সুপারিশ এখনও জমা পড়েনি। ক্রমেই রাজ্যের তৃণমূল সরকার কমিশনের মেয়াদ বাড়িয়ে দিচ্ছে। ২৬ মে শেষ কমিশনের মেয়াদ শেষ হতেই আরও সাত মাস বাড়িয়ে দেওয়া হয়৷ ফলে, চলতি বছরে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির আর কোনও সম্ভবনাই নেই৷ ফলে, রাজ্যের এই ঘোষণার পর ক্ষোভে ফুঁসছে কর্মীচারি মহল৷

কেন চালু হচ্ছে না ষষ্ঠ বেতন কমিশন? অভিরূপ সরকারকে গণচিঠি কর্মীদেরদেশের স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত এরাজ্যের কর্মচারীরা কোনদিন বেতন কমিশনের মুখ দেখেননি। ১৯৭৭ সালে বাম সরকারের আমলে পাঁচটি বেতন কমিশন করা হয়৷ তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সরকার ষষ্ঠ বেতন কমিশন তৈরি করেছে। সেই বেতন কমিশনের সুপারিশ ৪২ মাসেও জমা পড়েনি।

ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালু না হওয়ায় ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে বেশ কয়েক বারবার খোঁচা দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি৷ বিজেপি ক্ষমতায় এলে সপ্তম বেতন কমিশন কার্যকর করার আশ্বাসও দিয়েছেন নমো৷ তার প্রভাবও পড়েছে ভোটের ফলাফলে৷ পোস্টাল ব্যালট গণনায় দেখা গিয়েছে বিজেপির দখলে গিয়েছে ৩৯টি আসন৷ নির্বাচন কমিশনের এই তথ্য দেখে মাথায় হাত শাসক শিবিরে৷

দেশের অধিকাংশ রাজ্যে যখন মহার্ঘভাতা বকেয়া ফেলে রাখা নেই, অধিকাংশ রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা যখন বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বর্ধিত বেতন পাচ্ছেন তখন এরাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা বঞ্চিত হচ্ছেন কেন? প্রশ্ন সরকারি কর্মীমহলে৷ পরিসংখ্যান বলছে, এরাজ্যের কর্মচারীরা এখনও ৪১ শতাংশ মহার্ঘভাতা কম পান। একই সঙ্গে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ না মেলায় পঞ্চম বেতন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার ফলে দীর্ঘ কয়েক বছর রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি হয়নি। বর্তমান বেতন তার সঙ্গে মহার্ঘভাতা এবং তার সঙ্গে বেতন কমিশনের বেতন বৃদ্ধির বুস্টিংয়ের সুযোগ সুবিধা থেকে এরাজ্যের কর্মচারীরা বঞ্চিত রয়েছেন। একদিকে অভিরূপ সরকারের বেতন কমিশনকে সরিয়ে রাখা অন্যদিকে মহার্ঘভাতা দেওয়া সংক্রান্ত কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের মান্যতা না দেওয়ার কৌশল একই সঙ্গে জারি রয়েছে।

২০১৭ সালে কর্মচারীরা মহার্ঘভাতার দাবি নিয়ে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালে (স্যাট) মামলা দায়ের করেছিলেন। রাজ্য সরকারের তৈরি করা এই ট্রাইব্যুনাল রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা দেবার আবেদন অগ্রাহ্য করে। স্যাট তার রায়ে বলে, মহার্ঘভাতা রাজ্য সরকারের দয়ার দান। মহার্ঘভাতা পাবার আইনগত অধিকার কর্মচারীদের নেই। স্যাটের সেই রায়কেই চ্যালেঞ্জ করে কর্মচারীরা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিসন বেঞ্চ স্যাটের রায়কে নস্যাৎ করে নির্দেশ দেয় মহার্ঘভাতা পাবার অধিকার কর্মচারীদের আইনসিদ্ধ অধিকার। মহার্ঘভাতা দয়ার দান নয়। কলকাতা হাইকোর্ট এই নির্দেশ দিয়ে মামলাটি স্যাটে পাঠিয়ে দিয়ে বলেছিল, সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা পাবার বিষয়টি স্যাট ঠিক করবে। কী হারে মহার্ঘভাতা পাবেন তা ঠিক করতে হবে এবং দিল্লি ও চেন্নাইয়ে এরাজ্যের কর্মচারীরা যে হারে মহার্ঘভাতা পেয়ে থাকেন তা এরাজ্যের কর্মচারীরা কীভাবে পাবেন তাও স্যাটকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এই মামলা নিষ্পত্তি করতে স্যাটকে দু’মাস সময় দিয়েছিল হাইকোর্ট। রাজ্য সরকার মামলা বিলম্বিত করতে প্রথমেই স্যাটে জানায় দিল্লি ও চেন্নাইয়ে এরাজ্যের কর্মচারীরা যে মহার্ঘভাতা পান তার ফাইল হারিয়ে গেছে। সেই ফাইল খুঁজতেই বেশ কয়েকমাস সময় রাজ্য সরকার কাটিয়ে দিল। এরপরই আরও সময় নষ্ট করার জন্য রাজ্য সরকারের হাইকোর্টের নির্দেশের ওপর রিভিউ পিটিশন দাখিল করে। হাইকোর্ট সরকারের সেই রিভিউ পিটিশন খারিজ করে দিয়ে মামলাটি আবার স্যাটে পাঠিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেয়। স্যাটের বিচারকরা সেই মামলার এখনও শুনানি গ্রহণ করছেন। ফলে গত আগস্ট মাসে দেওয়া কলকাতা হাইকোর্টের দেওয়া কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা সংক্রান্ত নির্দেশ বিলম্বিত করার প্রক্রিয়া এখনও চলছে। এই অবস্থার মধ্যেই সরকারি কর্মচারীরা তাঁদের আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পথে হাঁটছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − eleven =