কোন পথে শিক্ষক নিয়োগের ভবিষ্যৎ? আজ আপারের সেই সাফল্যের বর্ষপূর্তি!

কোন পথে শিক্ষক নিয়োগের ভবিষ্যৎ? আজ আপারের সেই সাফল্যের বর্ষপূর্তি!

 

কলকাতা: দীর্ঘ লড়াই-আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পর মিলেছে সাফল্য৷ তবে, সাফল্য মিললেও লাগামছাড়া দুর্নীতি, মামলার গেরোয় থমকে নিয়োগ৷ বাদি বিবাদির সওয়ালে ‘তারিখ পে তারিখ’ পিছিয়ে চলছে মামলা৷ বিশ বাঁও জলে নিয়োগ৷ দিন-রাত এক করে পরিশ্রমের পর স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ পরীক্ষায় সফল হয়েও অনিশ্চিত জীবন কাটাচ্ছেন বাংলার কয়েক হাজার শিক্ষকপদপ্রার্থী৷ নষ্ট হচ্ছে জীবনের মূল্যবান সময়৷ পরিবারিক আর্থিক দায়ের গেরোয় তীব্র হচ্ছে বেকারত্বের যন্ত্রণা৷ আর সেই বেকারত্বের যন্ত্রণা আগলে সোশ্যাল মিডিয়ায় উদযাপিত হল উচ্চ প্রাথমিকের থমকে থাকা ভেরিফিকেশনের বিজ্ঞপ্তি জারির একটি বছর৷

আজ থেকে ঠিক একবছর আগে এই দিনে উচ্চ প্রাথমিকে ভেরিফিকেশনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবিতে আন্দোলনে নামেন কয়েক হাজার চাকরিপ্রার্থী৷ গভীর রাত পর্যন্ত কমিশনের মাটি কামড়ে ১৫০ জনের চাকরিপ্রার্থী ধর্নায় বসেন৷ পরে পুলিশ লাঠি চালিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের তুলে দেয়৷ পরে তাদের বাসে তুলে শিয়ালদহ স্টেশনে ১২৫ জন চাকরিপ্রার্থীকে পৌঁছে দেয় পুলিশ৷ ১২৫ জনের মধ্যে ছিল ৪০ জন মহিলা চাকরিপ্রার্থী৷ মধ্যরাতে খোলা আকাশের নিতে রাত কাটিয়ে ফের পর দিন আন্দোলন করেন তাঁরা৷ পরে, আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়ের রাজা নন্দী, সুশান্ত, পাপিয়া, অজাহার, গোলাম মোস্তাফা, মহুয়া-সহ ৮জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ প্রায় ৮ ঘণ্টা বন্দি থাকার পর দীর্ঘ আইনি লড়াই চালিয়ে মুক্তি পান ৮জন চাকরিপ্রার্থী৷ গোটা রাজ্যজুড়ে বিতর্ক তৈরি হতেই রাতারাতি ভেরিফিকেশনের বিজ্ঞপ্তি জারি করে কমিশন৷

তবে, ৭ ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের আগেও আপার নিয়ে বিদ্রোহের শুরুটা হয়েছিল সেই ২০১৫ সাল৷ ১৬ আগস্ট৷ গোটা রাজ্যবাপী টেট পরীক্ষা হয়েছিল শিক্ষক নিয়োগের জন্য৷ পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির বিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার আশায় কয়েক লক্ষ বেকার চাকরিপ্রার্থী এই পরীক্ষায় বসে ছিলেন৷ সেখানে প্রশিক্ষিত চাকরি প্রার্থী হিসেবে ১ লক্ষ ২০ হাজার ও অপ্রশিক্ষিত চাকরি প্রার্থী হিসেবে ২ লক্ষ ২৮ হাজার প্রার্থী, সব মিলিয়ে অন্তত ২ লক্ষ ২৮ হাজার পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন৷ সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল৷ কিন্তু বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ না দেখে রাস্তায় নেমেছিলেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷

ছোট-বড় সোশ্যাল মিডিয়ার গ্রুপে বিভক্ত হয়ে সংঘটিত হয়েছিল আন্দোলন৷ আপডেট ভ্যাকান্সিতে নিয়োগের দাবি তুলে রাজপথ দাপিয়ে ছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা৷ বিকাশ ভবন থেকে শুরু করে আচার্য সদন, গোটা চত্বরেজুড়ে চাকরিপ্রার্থীরা তুলেছিলেন বেকারত্ব যন্ত্রণা কাটানো আওয়াজ৷ আন্দোলন করতে গিয়ে কম হেনস্তার মুখে পড়তে হয়নি চাকরিপ্রার্থীদের৷ পুলিশের লাঠি, গ্রেপ্তারি, হেনস্থা, কোনটাই বাদ যায়নি৷ এমনকী, রাতভর ধর্না, গভীর রাতে পুলিশের তাণ্ডব, বিকাশ ভবন থেকে চাকরিপ্রার্থীদের তুলে নিয়ে গিয়ে শিয়ালদা স্টেশনে ফেলে দেওয়া, সবই ঘটেছিল চাকরিপ্রার্থীদের চোখের সামনে৷ চোখের জল মুছতে মুছতে রাজপথ থেকে ফিরে গিয়েছিলেন বাড়ি৷ চাকরির দাবিতে আন্দোলন করতে যাওয়া চাকরিপ্রার্থীদের প্রতিবাদের আওয়াজ, ক্ষোভ, বিক্ষোভ উঠে এসেছিল আজ বিকেল ডট কমের পাতায় পাতায়৷ গুরুত্ব দিয়ে সেই খবর সবার আগে প্রকাশ করেছিল আজ বিকেল ডট কম৷ সেই ধারা আজও অব্যাহত৷ চাকরিপ্রার্থীদের লাগাতার আন্দোলন, রাতভর ধর্না, বিক্ষোভ, পুলিশের মার, গ্রেপ্তারি শেষে সফল চাকরিপ্রার্থীদের নথি যাচাইয়ের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে বাধ্য হয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন৷ দীর্ঘ আন্দোলনের পর উচ্চ প্রাথমিকে তথ্য যাচাই প্রক্রিয়া শুরু হতে না হতেই ঘটে যায় বিপত্তি৷ দায়ের হয় মামলা৷

ছন্দ পতন ঘটে, প্রশিক্ষিত পরীক্ষার্থীদের না ডেকে অপ্রক্ষিতদের স্কুল সার্ভিস কমিশন ডাকে যখন৷ প্রথমে ভেরিফিকেশন পর্বের পর ইন্টারভিউ তালিকা প্রকাশের পর থেকেই বারবার আইনি জটিলতা আসে এই টেট পরীক্ষা ঘিরে৷ কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন প্রায় ৫০০ কাছাকাছি প্রশিক্ষিত চাকরিপ্রার্থী৷ যাঁদের ভেরিফিকেশনের নোটিশ আসেনি, তাঁরা মামলায় জানান, ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের এনসিটিই নিয়ম অনুসারে এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়া হচ্ছে না৷ এমনকি এসএসসির নিজস্ব ৮ নম্বর এবং ৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করছে না৷ চাকরি প্রার্থীদের ভেরিফিকেশন করা তালিকা প্রকাশ, ইন্টারভিউ চালু করার বিষয়গুলি নিয়ে দীর্ঘ জটিলতা করে স্কুল সার্ভিস কমিশন কর্তৃপক্ষ, অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্যের ১৭ নম্বর এজলাসে সওয়াল-জবাব চলে৷ পরে কলকাতা হাইকোর্টের কমিশনকে চাকরিপ্রার্থীদের পূর্ণাঙ্গতালিকা প্রকাশ করতে নির্দেশে দেয়৷ সেই নির্দেশের ভিত্তিতে মেধাতালিকা তালিকা প্রকাশ করে স্কুল সার্ভিস কমিশন৷ কিন্তু, সেখানও ওঠে গুচ্ছ দুর্নীতি৷ সেই নিয়ে এখনও চলছে মামলা৷

পুজোর উৎসবের আনন্দ বাড়িয়ে চতুর্থীর সন্ধ্যায় বিজ্ঞপ্তি জারি করে সার্ভিস কমিশনের তরফে জানানো হয়, শারীর শিক্ষা ও কর্ম শিক্ষার মেধাতালিকা বাদে উচ্চ প্রাথমিকে ২০১৬ সালের টেট পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হবে৷ মেধাতালিকা সংক্রান্ত অন্তত ৩ হাজার অভিযোগ জমা পড়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনে৷ সেই অভিযোগগুলির বর্তমান কী হাল তা এখনও জানাতে পারেনি কমিশন৷ দুর্নীতির দায়ে গোটা নিয়োগের উপর রয়েছে আদালতের স্থগিতাদেশ৷ আর তাতেই সফল হয়েও থমকে কয়েক হাজার চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যৎ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − thirteen =