শাম্মী হুদা: চায়ের কাপের সঙ্গেই বেকারত্ব তাড়ানোর উপায় খুঁজে পেয়েছেন, চায়ের সঙ্গে টা নিয়ে শুরু হল গল্পগাছা, রোজগারের অণ্বেষণ। সারাদিনে অন্তত একটা সূত্র সামনে তো আসবেই যেখান থেকে উপার্জনের সুযোগ পাবেন। মধ্যপ্রদেশে এই চায়ের দোকান খুলেই রোজগার সমাচার পরিবেশন করছেন এক যুবক। নাম বিনোদ পাণ্ডে, আদতে বিহারের বাসিন্দা বিনোদ মনে করেন শহরের লোকজন চাকরির জন্য মনস্টার ডটকম, টাইমস জব, নোকড়ি ডট কম, লিঙ্কডেনের উপরে নির্ভরশীল।
কিন্তু মফঃস্বল বা গ্রামের যুবকরা, তাঁরা কী করবেন? কাজের জন্য অন্য শহরে যাবেন। পকেটে রেঁস্ত কম তার উপরে কেতাদূরস্ত স্বভাব,চালচলন,কথাবার্তা, পোশাক পরিচ্ছেদ কিছুই নেই। তাই বাধিযহয়েই বস্তি এলাকায় মাথা গোঁজার ঠাঁই জোগাড়ে নেমে পড়েন। শহুরে মানুষদের মানষিকতার সঙ্গে এঁটে উটতে না পেরে একসময় চাকরি খোঁজাই ছেড়ে দেন, পকেট হালকা হতে শুরু করে, মানসিক অসুস্থতা শারীরিক অসুস্থতায় বদলে যায়। বস্তির বদ্ধ ঘরে একদিন নির্বান্ধব অবস্থায় সেই যুবক মত্যুর কাছে হার মেনে নেন।বিনোদের তুতো দাদার সঙ্গে এমনটাই ঘটেছে। বিহার থেকে সেই যুবক ভাগ্যাণ্বেষনে পাঞ্জাবে গিয়েছিলেন,তারপর বাকিটা ইতিহাস।
এই মৃত্যু বিনোদকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। বছর ১২-র কিশোর ভেবে নিয়েছিলেন গ্রামীণ ভারতের যুবকদের ভাগ্য বদলাতে তাকে কিছু করতেই হবে। একটা সময় পর চাকরির সন্ধানে বিনোদ মধ্যপ্রদেশে চলে আসেন। প্রায় দশ বছর বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করে একটা বাস্তব অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হলে নিজেরকাজে নেমে পড়েন ওই যুবক,দুই বন্ধুর সহযোগিতায় খুলে ফেলেন চায়ের আড্ডাখানা,যার পোশাকি নাম রোজগার ধাবা। ট্যাগ লাইন, চায় কি সাথ রোজগার কি জানকারি ভি। এখন বছর ঘোরেনি,তার আগেই সাফল্য এসেছে গ্রামীণ ভারতের যুব সমাজের কাছে বিনোদের ধাবা এখন লিঙ্কডেনের ভূমিকায় অবতীর্ণ। চায়ের সঙ্গে স্ন্যাক্স খেতে খেতে চাকরি প্রার্থী যুবক সংস্থার মালিকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন এখানে, সব ব্যবস্থা ধাবা কর্তৃপক্ষ করে দেবেন।
স্থানীয় বিভিন্ন সংস্থা, এনজিও,সরকারি এজেন্সি যারা মূলত কর্মী নিয়োগ করে তাদের সঙ্গে রোজগার ধাবার সংযোগ রয়েছে।এদিকে চাকরি প্রার্থীরা এখানে চা খেতে এসে তাঁদের বায়োডাটা জমা করে যান।তাই সংস্থার মালিকরা যোগ্য প্রার্থী সম্পর্কে বিশদে জানতে পারেন ধাবা কর্তৃপক্ষের থেকে।তারপর কোনও যুবককে যোগ্য মনে হলে তাঁকে এই ধাবাতেই ডাকা হয়, আলোচনা চলে। এভাবেই মধ্যপ্রদেশ জুড়ে কর্মসংস্থান চলছে। মাসে প্রায় ১০০০ জন চাকরির জন্য বিনোদের রোজগার ধাবায় আসছেন, কিছু না কিছু একটা জুটে যাচ্ছে। চায়ের দোকানে বিক্রি হচ্ছে চাষিদের উৎপাদিত সামগ্রী, নির্দিষ্ট ক্রেতারা প্রয়োজনমতো তা কিনছেনও। অন্যদিকে পড়ুয়াদের জন্য বিবিধ সামগ্রী স্কুলে ভর্তির ফর্ম,সরকারি প্রকল্পের ফর্ম সবই পাবেন বিনোদের রোদগার ধাবায় মূলত চাষিদের ফসল ও চাষের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বিক্রি থেকেই ধাবার আয় হয়। যাঁরা চাকরির আলোচনার জন্য এখানে আসেন তাঁরা চা ও স্ন্যাক্সের জন্য পে করেন। তবে কর্মসংস্থান সংক্রান্ত আলোচনার জন্য কোনও টাকা লাগে না। বছর না ঘুরলেও বিনোদের রোজগার ধাবা জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তাই আরও একটি ধাবা তিনি চালু করেছেন। তাঁর ধাবায় এখন পাঁচজন কর্মচারি রয়েছে যাঁদের বেতনের টাকা প্রথমদিকে নিজের পকেট থেকে দিলেও এখন দোকানের আয়ে চলে যায়। মাঝে মাঝে কিছু শুভাকাঙ্খীর অনুদানও দারুণ সহায়ক হয়।
বিনোদের ইচ্ছে আর কয়েকবছরে মধ্যে মধ্।প্রদেশ,রাজস্থান,দিল্লি ও বিহারের বেশ কিছু জায়গায় এমন ধাবা চালু করার। যেখান থেকে ভারতবর্ষের যুবসমাজের বৃহদাংশ চাকরি খুঁজে পাবেন। দেশে বেকারত্ব দূর হবে।