রায়গঞ্জ: গত পাঁচ বছরে কর্মসংস্থান নিয়ে কী করেছে মোদি? রায়গঞ্জে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
বলেন, ‘‘বিজেপি কেন ভোট দেব তোমাকে? তুমি পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিলে৷ তুমি নোটবন্দি করে জনগণের পকেট লুটেছো৷ অনেক দোকদান সর্বশান্ত হয়ে গিয়েছে৷ অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ অনেক শিল্প গুটিয়ে গিয়েছে৷ ব্যাংকে লাইন দিতে গিয়ে অনেকের প্রাণ গিয়েছে৷ আজও দেশে ১২ হাজার কৃষক অত্মহত্যা করেছে, মোদিবাবু তোমাদের আমলে৷ ছেলেমেয়েদ চাকরি দেওয়া তো দূরের কথা, আপনারা বলেছেন পাঁচ বছরে ১০ কোটি বেকার যুবকদের চাকরি দেবেন৷ অথচ আপনার আমলে, ভারতের বেকার সংখ্যা, ৪৫ বছরে সর্বচ্চ হয়েছে৷ এবং ১৭-১৮ সালে এক বছরে দু’কোটি ছেলেমেয়ের যারা কাজ করত, তারা বেকার হয়েছে৷ আজ অনেক সংস্থায় চৌকিদার থেকে শুরু করে, বিএসএনএল থেকে শুরু করে, রেল থেকে শুরু করে, অনেক কেন্দ্রীয় সংস্থায় কর্মীরা বেতন পান না৷ কিন্তু, আমরা রাজ্যে এক কোটি কর্মসংস্থান দিয়েছি৷’’
কিন্তু, কর্মসংস্থান নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এই দাবি করলেও বাংলার কংর্মসংস্থানের রিপোর্টকার্ড বলছে অন্যকথা৷ অ্যাসেসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস বা এডিআরের সমীক্ষা বলছে, এবারের নির্বাচনে ভোটবাক্সে প্রভাব ফেলতে চলেছে কর্মসংস্থান ও কৃষের অধিকার৷ কৃষি ও কৃর্মসংস্থান যখন ২০১৯-এর ভোটের প্রধান ইস্যু, তখন কী অবস্থা বাংলার রিপোর্ট কার্ড?
সমীক্ষা বলছে, কৃষি ও কৃর্মসংস্থানে খুব একটা ভালো নয় বাংলার অবস্থা!সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, বাংলার শহর ও গ্রামীণ এলাকায় ৩৯.২৮ শতাংশ মানুষের কাছে প্রধান ইস্যু কর্মংস্থান৷ কিন্তু, সেখানেই বেশ খারাপ ফলাফল রাজ্যের৷ সমীক্ষায় বাংলার কর্মসংস্থানের সাফল্যকে ৫-এর মধ্যে দেওয়া হয়েছে ২.১৬ নম্বর৷ কৃষতে বাংলার সাফল্যের মান ২.২৬৷ ফসলের ভালো দাম পাওয়ার ক্ষেত্রে সাফল্যের মান ২.২২৷ এই সমীক্ষায় গড় সাফল্য হার ৩ নম্বর দেওয়া হলেও বাংলা সেই তুলনায় অনেক পিছিয়ে৷
সমীক্ষা বলছে, এবার বাংলা ভোটে গ্রামীণ এলাকায় ৪৫ শতাংশ ভোটারের প্রধান ইস্যু কর্মসংস্থান৷ ৪৯ শতাংশ ভোটার কৃষিতে উন্নতি চান৷ কৃষিপণ্যের দাম চান ৪৮ শতাংশ ভোটার৷ কৃষিতে ভর্তুকি চান ৪০ শতাংশ ভোটার৷ শহর এলাকায় কর্মসংস্থান চান ৪৫ শতাংশ মানুষ৷ এডিআর-এর সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে শহরে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে রাজ্যের সাফল্যের মান ২.৩৫৷ এডিআর-এর সমীক্ষায় প্রকাশ্যে আসতেই ভোটের বাজারে নেমে পড়েছে বিরোধীরাও৷ তাঁদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী যখম ১ কোটি কর্মসংস্থানের দাবি করছেন, তখন এডিআর-এর সমীক্ষায় এই ফলাফল কেন? তাহলে কোথায় গেল এক কোটি চাকরি? নাকি, জল মিশিয়ে সমীক্ষা রিপোর্ট তৈরি করেছে এডিআর?
কর্মসংস্থান নিয়ে দরাজ ঘোষণার পাশাপাশি এদিন লোকসভা নির্বাচনে ৪২ আসন জিতে দিল্লিতে তৃণমূল সরকার গঠন করবে বলেও জানান মমতা৷ আর সেই কারণে সিপিএম-কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে ভোট নষ্ট না করার পরামর্শ দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী৷ মঙ্গলবার দুপুরে রায়গঞ্জে সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা দিল্লিতে সরকার গড়ব৷ আর সেই কারণে সিপিএম-কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে ভোট নষ্ট করবেন না৷ কারণ ওদের দিয়ে কিছুই হবে না৷ তাই আপনারা আমাদের ভোট দিন৷’’
এদিন বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে বলেন, ‘‘বিজেপিকে আমরা বিনা যুদ্ধে জমি ছাড়ব না৷ মোদিকে হারাতে বিজেপিকে একটি ভোটও নয়৷’’ বলেন, ‘‘করতে হয়, করো৷ মরতে হয় মরব৷ কিন্তু, মোদিকে আমরা ছাড়ব না৷ মোদিকে এমন দেব না, সারা জীবন মনে রাখবে৷’’ এবারের নির্বাচনে তৃণমূলের দিল্লি দখলের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে রায়গঞ্জ জেতার জন্য আবেদন করেন৷ বলেন, ‘‘বাংলা দিল্লিতে সরকার গড়ব৷ আর সেই কারণে রায়গঞ্জ আমার চাই৷ কি দেবেন তো৷ ভিক্ষা নয়, হাত পেতে চাইছি৷’’