কলকাতা: শিক্ষক বদলি জন্য ‘উৎসশ্রী’ পোর্টালের কথা আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই পোর্টাল চালু করলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ‘উৎসশ্রী’ ট্রানস্ফার পোর্টাল চালুর জন্য শিক্ষামন্ত্রীকে অভিন্দন জানিয়ে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলি সমাধানের দাবি জানাল শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ৷
আরও পড়ুন- ‘চললাম’! রাজনৈতিক সন্ন্যাসের পথে বাবুল? জল্পনা উস্কে ফের ফেসবুক পোস্ট সাংসদের
১ আগস্ট রাত ১২টার পর থেকে ‘উৎসশ্রী’ অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে। শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদর পছন্দমতো বিদ্যালয়ে বদলির জন্য রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগকে মঞ্চের করফে স্বাগত জানানো হয়েছে৷ এদিন শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগামী দিনে এই প্রক্রিয়া চলাকালীন শিক্ষক শিক্ষাকর্মীদের বিভিন্ন পরামর্শ বা অভিযোগের ভিত্তিতে এই পোর্টালের উন্নীতকরণ করা হবে। তবে মঞ্চের পরামর্শ বা অভিযোগ গুলি হল-
১) শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন এবার থেকে নিয়মিত শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী বদলি প্রক্রিয়া জারি থাকবে। তাই এই ট্রান্সফার প্রক্রিয়াটিতে যতটা সম্ভব বেশি সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীকে সুযোগ দেওয়া হোক। কেননা, দীর্ঘদিন ধরেই বহু শিক্ষক শিক্ষাকর্মী পরিবার-পরিজন ছেড়ে রয়েছেন অথবা বাড়ি থেকে বহু দূরে যাতায়াত করছেন। যদি মাত্র ১০% শিক্ষক শিক্ষাকর্মীকে ট্রান্সফারের সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে অত্যন্ত নগণ্য সংখ্যক ব্যক্তি এতে সুযোগ পাবেন। যেহেতু বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়গুলিতে পঠন পাঠন বন্ধ রয়েছে তাই যতটা সম্ভব অধিক সুযোগ দেওয়া যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে৷
২) শিক্ষাকর্মীদের জন্য অনলাইন প্রক্রিয়ায় মিউচুয়াল এবং আবেদনের ভিত্তিতে জেনারেল ট্রান্সফার প্রক্রিয়া যেন একই সঙ্গে চালু হয়, তা সুনিশ্চিত করেত হবে৷
৩) পরিবারের যে কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে বিশেষ সুযোগ পাবেন বলে বলা হয়ছে৷ কিন্তু শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মীর বাবা কিংবা মা গুরুতর অসুস্থ হলে কোনও বিশেষ সুযোগ পাবেন বলে উল্লেখ নেই। এটি অত্যন্ত অমানবিক। এই বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে বলেও দাবি উঠেছে৷
৪) একজন শিক্ষকের ট্রানস্ফার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রধান শিক্ষকের হাতে চেকলিস্টের নামে যেভাবে অনেকগুলি ক্ষমতা দেওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে তাতে মনে করা হচ্ছে ট্রানস্ফার বিষয়ে বহু ক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে। সেদিকে নজর রাখতে হবে৷
৫) মিউচুয়াল ট্রান্সফারে ন্যায় এনওসি প্রথা বাতিল করা হোক অথবা সরলীকৃত করা হোক।
৬) সেকশন সমস্যার সমাধান না হলে পিজি টিচারদের ট্রান্সফার পাওয়া প্রায় অসম্ভব হবে। তাই এ ব্যাপারে দ্রুত সমস্যাটির সমাধান করে একই স্কেলে থাকা অনার্স/পিজি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বদলির সুযোগ করে দিতে হবে।
৭) জুনিয়ার হাইস্কুলে বেশি শিক্ষক না থাকার কারণে তাঁদের বদলি নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। যাতে তাঁরাও বদলির সুযোগ পান।
৮) নিজের জেলায় বদলির কথা বলা হলেও সেই বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়নি। জেলা এবং দূরত্বের বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হোক।
৯) পাড়ায় সমাধানের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী সহ বিভিন্ন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বদলির নোটিশ ধরানো হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তাঁরা সেই বদলি গ্রহণ করেননি এবং তা কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছিলেন। সেই বদলি প্রত্যাহারের কারণে যদি তাঁদের এখন সুযোগ না দেওয়া হয় তাহলে তা অন্যায় হবে।
১০) কোনও বিষয়ে একজন শিক্ষক বা শিক্ষিকা থাকলে তাঁর প্রয়োজনের ভিত্তিতে ট্রানস্ফার পাওয়ার বিষয়টাকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
১১) সর্বোপরি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে উৎসশ্রী ট্রানস্ফার পোর্টালের মাধ্যমে আবেদনের ভিত্তিতে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হওয়ার কিছুদিন পর পুনরায় তা চালু করতে হবে। এর মাধ্যমে অধিক সংখ্যক শিক্ষক শিক্ষাকর্মী সুযোগ পেতে পারবেন।
১২) পাঁচ বছর নয়, সার্ভিস কনফার্মেশন হলেই ট্রান্সফারের জন্য আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হোক।
১৩) দু’জনের অধিক সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষিকা কিংবা শিক্ষা কর্মীদের মধ্যে মিউচুয়াল ট্রান্সফারে সুযোগ দেওয়া হোক। এই সুযোগে কোন বিধি-নিষেধ আরোপ না করে একাধিকবার সুযোগ দেওয়া হোক।
১৪) ২০০৬ সালের আগে এসএসসিতে কাউন্সিলিংয়ের সুযোগ ছিলনা। তাই ২০০৫ নয়, ২০০৬ সাল পর্যন্ত নিযুক্ত শিক্ষক শিক্ষাকর্মীদের জন্য অতিরিক্ত নম্বর (স্কোর) বরাদ্দ করা হোক।