নয়াদিল্লি: মোদী সরকার কর্মসংস্থান নিয়ে যে রিপোর্ট তৈরি করতে চলেছে তাতেও দেখা যাচ্ছে মোদী আমলে বেকারি বাড়ছে৷ কর্মসংস্থানের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিশদ রিপোর্ট প্রকাশ করার পরিকল্পনা আছে কেন্দ্রের। বিভিন্ন দপ্তর এতে সমীক্ষা চালাচ্ছে। বেকারির দিক নিয়ে সমীক্ষা চালায় কেন্দ্রের শ্রম মন্ত্রকের লেবার ব্যুরো। এই লেবার ব্যুরোর বেকারি নিয়ে সমীক্ষা রিপোর্টে বেকারির হার বেড়ে চলার তথ্য উঠে এসেছে। এই বেকারি বেড়ে চলার পিছনে নোট বাতিল অন্যতম কারণ বলেই জানানো হয়েছে। শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ারের কাছে রিপোর্ট জমাও দিয়েছে লেবার ব্যুরো। শীতকালীন অধিবেশনে সংসদে তা পেশ করার কথা থাকলেও তা পেশ হয়নি। শেষ মুহূর্তে তা সংসদে পেশ হবে না বলেই সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র।
সরকারি নানা তথ্যে ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষা রিপোর্টে দেশে বেকারি বেড়ে চলার তথ্য প্রকাশ হয়েছে। এনিয়ে বেশ বেকায়দায় মোদী সরকার। মোদীর বছরে ২কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি নিছক ধাপ্পা হয়েই দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে মোদী সরকার নিয়োজিত নীতি আয়োগ দাবি করেছিল দেশে কর্মসংস্থান বাড়ছে। এনিয়ে সঠিক তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে জানায় নীতি আয়োগ। ফলে কেন্দ্রের তরফে কর্মসংস্থানের রিপোর্ট আলাদা ভাবে প্রকাশ করা হবে বলেই জানানো হয়। সরকারের তরফে এও জানানো হয়েছিল পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের পর শীতকালীন অধিবেশন শেষ হলেই সে রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। সরকারের পক্ষে জানানো হয় দেশে কর্মসংস্থান নিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বড়, মাঝারি শিল্প, স্বরোজগার, ক্ষুদ্র শিল্প, বাজার ,দোকান, পারিবারিক হস্তশিল্প সহ নানা জীবিকায় যে আয় হচ্ছে তাকেই কর্মসংস্থানের তথ্যে তুলে ধরার লক্ষ্যে এই রিপোর্ট তৈরি করছে কেন্দ্র।
সম্প্রতি এতে মোদীর মুদ্রা ঋণ প্রকল্প যুক্ত করা হয়েছে। এতে কত কর্মসংস্থান হয়েছে তা উল্লেখ থাকবে রিপোর্টে। শ্রমদপ্তর সূত্রে খবর এই তথ্য সংগ্রহের কাজ পুরোটাই গুটিয়ে আনা হয়েছে। তিনটি সমীক্ষা চালানো হয়েছে। কর্মসংস্থান, বেকারি নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছে লেবার ব্যুরো। জাতীয় নমুনা সমীক্ষা অফিস (এনএসএসও) সমীক্ষা চালিয়ে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে কত কর্মসংস্থান হয়েছে তা নিয়ে।এর মধ্যে মুদ্রা ঋণ প্রকল্প রয়েছে। দেশে শ্রমের বাজারে প্রতি বছর ১.২কোটি নতুন শ্রমিক প্রবেশ করছে। তার সঙ্গে তাল রেখে দেশে একই পরিমাণে কর্মসংস্থান হচ্ছে এটাই তথ্যে প্রমাণের লক্ষ্য রয়েছে কেন্দ্রের। কেন্দ্রের তরফে দাবি করা হয়েছে ১.৫লক্ষ নমুনা নিয়ে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে। যা জাতীয় নমুনা সমীক্ষার সংখ্যার থেকেও বেশি। সরকারি তরফে এও জানানো হয়েছে মুদ্রা ঋণ প্রকল্পে ১.২লক্ষ ঋণ প্রাপকদের বাড়িতে সমীক্ষা চালিয়ে কর্মসংস্থানের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
এদিকে কর্মসংস্থানের হারকেও ছাপিয়ে গেছে বেকারির হার। এই তথ্য আর গোপন করা যাচ্ছে না। বেকারির হার নিয়ে মূল সমীক্ষা চালিয়েছে লেবার ব্যূরো। দীর্ঘ দিন ধরেই তারা বেকারি ও কর্মসংস্থান নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে আসছে। তা এবার সংসদে পেশ করা বন্ধ করে দিয়েছে মোদী সরকার। বেকারি নিয়ে যে রিপোর্ট শ্রমমন্ত্রীকে জমা দিয়েছে লেবার ব্যুরো তাতে বলা হয়েছে, বেকারি বিপুল হারে বাড়ছে দেশে। ছোট ক্ষুদ্র শিল্প বেশি বন্ধ হওয়াতে বেকারি বাড়ছে। মোদীর চার বছরের মধ্যে ২০১৬-১৭ সালে বেকারি বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। তা হলো ৩.৯%। ২০১৫-১৬ সালে তা ছিল৩.৭%। ২০১৪-১৫ সালে তা ছিল৩.৪%। বেকারি ও কর্মসংস্থান নিয়ে লেবার ব্যুরোর ষষ্ঠ বার্ষিক রিপোর্টে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বেকারির হারের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে শ্রমিক রয়েছেন অথচ তার হাতে কোনও কাজ নেই। তাকেই বেকার বলা হয়েছে। এই কাজ না থাকা বেকার বাহিনী সম্প্রতি বেড়েই চলেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৬-১৭ সালে বেশি বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ হলো নোট বাতিল কর্মসূচি। এতে ছোট শিল্প, দোকান, বাজারে বহু মানুষ কাজ হারান। তারা বেকার হয়ে পড়েন। বেকার মানুষের কাজ না মেলায় প্রতি বছরই বেকারের হার বেড়ে চলেছে। তার হার কমছে না।
এদিকে সম্প্রতি সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি (সিএমআইই) তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে শুধু গত বছরে (২০১৮) কাজ হারিয়েছেন ১.১ কোটি মানুষ। ফলে লেবার ব্যুরোর বেকারি হার বাড়ার রিপোর্ট যে যথার্থ সেটাই প্রমাণিত হচ্ছে। যদিও মোদী সরকার কর্মসংস্থান নিয়ে যে রিপোর্ট প্রকাশ করার পরিকল্পনা নিয়েছে তাতে এই চিত্র প্রকাশ পাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। সিএমআইই রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশে শ্রমিকরা যেমন কাজ হারিয়েছেন একই সঙ্গে দেশে শিল্পে রেকর্ড হারে কমেছে বিনিয়োগ। গত ১৪ বছরে এতো কম বিনিয়োগ আর কখনও হয়নি বলেই জানানো হয়েছে রিপোর্টে। যার ফলে নোট বাতিল ছাড়াও বিনিয়োগ কম হওয়ায় নতুন কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা আরও সঙ্কুচিত হয়েছে। বিনিয়োগের অভাবে একের পর এক প্রকল্প বন্ধ হওয়ায় কাজ হারানোর মিছিলও দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে।
এদিকে কর্মক্ষেত্রে কোথায় বেশি কাজ হারিয়েছেন তা বিশ্লেষণ করে রিপোর্ট জানিয়েছে, কৃষি শ্রমিকদের ক্ষেত্রে এই কাজ হারানোর সংখ্যা বেশি। এর বাইরে বেশি কাজ হারিয়েছেন ছোট দোকান বাজারে কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীরা। বিশেষ করে নোট বাতিলের সময় এসব ক্ষেত্রে বহু মানুষ কাজ হারান। তাঁদের আর নতুন করে কাজ মেলেনি। রিপোর্ট জানাচ্ছে, যাঁরা কাজ হারিয়েছেন তাঁদের হয় ৪০ বছরের নিচে নয়তো ৬০ বছরের উপরে বয়স। এদিকে কর্মহারা কৃষি শ্রমিকের বেশির ভাগ হলেন মহিলা। মোট কাজ হারানোর মধ্যে কাজ হারানো মহিলা শ্রমিকের সংখ্যা হবে ৮৮লক্ষ। পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা হবে ২১লক্ষ। গ্রামে ৬৫ লক্ষ মহিলা এই সময়ে কাজ হারিয়েছেন। শহরে মহিলা কাজ হারানো শ্রমিকের সংখ্যা হবে ২৩লক্ষ। এদিকে মোট কাজ হারানোদের মধ্যে ৩৭লক্ষ হলেন নিয়মিত বেতনের চাকরিজীবী। ফলে নিয়মিত বেতনের কর্মীরা এই সময়ে রেকর্ড হারে কাজ হারিয়েছেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে,এই কাজ হারানোর মধ্যে মহিলা শ্রমিকের সংখ্যা বেশি।