মোদির রাজত্বে বেকারের হার সর্বোচ্চ, জুমলা প্রতিশ্রুতির পর্দাফাঁস

নয়াদিল্লি: নির্বাচনের মধ্যে দেশে ফের বাড়ল বেকারের হার। এপ্রিলে বেকারের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৬%। ২০১৬ সালে অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ। বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি (সিএমআইই) বেকারের হার নিয়ে তাদের মাসিক রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশ করেছে। দেশের আর্থিক পরিস্থিতিতে এতটাই অস্থিরতা চলছে যে বেকারের হারে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী প্রচারে কর্মসংস্থানের দাবি করছেন

মোদির রাজত্বে বেকারের হার সর্বোচ্চ, জুমলা প্রতিশ্রুতির পর্দাফাঁস

নয়াদিল্লি:  নির্বাচনের মধ্যে দেশে ফের বাড়ল বেকারের হার। এপ্রিলে বেকারের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৬%। ২০১৬ সালে অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ। বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি (সিএমআইই) বেকারের হার নিয়ে তাদের মাসিক রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশ করেছে। দেশের আর্থিক পরিস্থিতিতে এতটাই অস্থিরতা চলছে যে বেকারের হারে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী প্রচারে কর্মসংস্থানের দাবি করছেন তা যে ভিত্তিহীন সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছে এই রিপোর্ট। রিপোর্টে বলা হয়েছে শিল্পের উৎপাদন গত আট মাসের তুলনায় এই মাসে বিপুল পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। যার পরিণামে শিল্পে কর্মসংস্থান কমেছে। এদিকে দেশে বেকারের হার বাড়ছে তা সরকারি রিপোর্টেও ধরা পড়েছে। জাতীয় নমুনা সমীক্ষা বলছে মোদির জমানায় বেকারের গত ৪৫ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এদিকে এমন তথ্য সামনে আসায় সরকারের মুখ পুড়েছে। রাতারাতি তথ্যক ঠান্ডাঘরে পাঠিয়েও দেওয়া হয়, তবে লাভের লাভ কিছু হয়নি বেকার হার যে বেড়েই চলেছে তা সংবাদমাধ্যমের কাছে ফাঁস হয়েগিয়েছে।

জানা গিয়েছে, মোদি জমানায় বেকারের হার বৃদ্ধির রিপোর্ট প্রকাশ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শিল্পে বিনিয়োগ হচ্ছে না। এছাড়াও বহু শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে। সিএমআইই জানুয়ারিতে প্রকাশিত রিপোর্টে জানায় শুধু ২০১৮ সালেই কাজ হারিয়েছেন ১.১ কোটি শ্রমিক কর্মচারী। ২০১৬ সালে নোট বাতিলের ঘটনা, তার সঙ্গে নতুন পণ্য পরিষেবা কর কাঠামো চালু হওয়ার ফলে বিপুল সংখ্যায় ছোট শিল্প বন্ধ হয়ে যায়। এতে কাজ হারায় বহু মানুষ। ফলে চড়া হারে বেকার বেড়েছে বলে জানানো হয়েছে রিপোর্টে। প্রধানমন্ত্রী মোদী সরকারি কর্মসংস্থান নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ বন্ধ করে এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ডের (ইপিএফ) তথ্য তুলে দাবি করতেন কর্মসংস্থান বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রীর সেই দাবিও মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে প্রতি মাসের ভিত্তিতে ইপিএফ’এ শ্রমিকের নথিভুক্তিকরণের যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা গেছে প্রতি মাসে শ্রমিকের নাম নথিভুক্তিকরণ সংখ্যা কমেছে। নথিভুক্তিকেই কর্মসংস্থানের প্রমাণ হিসাবে দেখেছে কেন্দ্র। সেই যুক্তিতে স্পষ্ট কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা কমছে।

এছাড়াও আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যলয়ের সমীক্ষা রিপোর্টেও দেশে কর্মসংস্থান বিপুল হারে কমছে বলে খবর, এই রিপোর্ট নস্যাৎ করতে মোদি ইপিএফ রিপোর্ট হাতিয়ার করে দাবি করেছিলেন দেশে দারুণ কর্মসংস্থান হচ্ছে। ইপিএফ রিপোর্টে তার উলটো চিত্র প্রকাশ করায় মোদির কর্মসংস্থানের দাবির ভিত্তি রইল না। ইপিএফ তার রিপোর্টে জানাচ্ছে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি নয়, প্রতি মাসে গড়ে কর্মসংস্থান কমছে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এক মাস ছাড়া প্রতিমাসে নথিভুক্তিকরণ কমছে।রিপোর্ট অনুসারে অক্টোবরে (সেপ্টেম্বর ১৭ থেকে আগস্ট ১৮) ইপিএফে নথিভুক্তি হয় ৬লক্ষ ১০ হাজার ১৪৭ জন। নভেম্বরে (সেপ্টেম্বর ১৭থেকে সেপ্টেম্বর ১৮) কর্মসংস্থান হয় ৬লক্ষ ১১ হাজার ৪০৮ জন। ফলে নভেম্বরে কর্মসংস্থান হয় ১হাজার ২৬১ জন। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে কর্মসংস্থানের সংখ্যায় পার্থক্য হিসাব করলে দেখা যায় এই মাসেই সামান্য কর্মসংস্থান হয়, এর পরে কর্মসংস্থান হ্রাস পায়। ডিসেম্বরে( সেপ্টেম্বর ১৭ থেকে অক্টোবর ১৮)কর্মসংস্থান হয় ৫লক্ষ ৬৫ হার ৪৫০। ফলে একই পদ্ধতিতে হিসাবে দেখা যাচ্ছে ডিসেম্বরে কর্মসংস্থান কমল ৪১ হাজার ৯৫৮। জানুয়ারিতে তা হলো ৪লক্ষ ৯০ হাজার ৫২ জন। একই পদ্ধতিতে হিসাবে কমল ৭৫ হাজার ৩৯৮। ফেব্রুয়ারিতে তা হলো ৪লক্ষ ৫২হাজার ৫জন। ফলে কমল ৩৮ হাজার ৪৭ জন। মার্চে কর্মসংস্থান হলো ৪লক্ষ ৪৯ হাজার ৯৩৫জন। কমল ২হাজার ৭০ জন। এপ্রিল কর্মসংস্থান হলো ৪লক্ষ ৪৯ হাজার ২৬১জন। কমলো ৬৭৪ জন। ২০১৭সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এই ১৭ মাসের দেখা গেছে প্রতিমাসে ইপিএফে নাম সংযুক্তিকরণের হার কমের দিকে। সংশোধিত গড় হিসাবে দেখানো হয়েছে ২০১৮ সালে অক্টোবরে এই সংযুক্তিকরণ কমেছে ৩৫ হাজার ৪৪৯ জন। নভেম্বরে তা কমেছে ৫৫হাজার ২৯৯জন। ডিসেম্বরে তা কমেছে ৬৯ হাজার ৪৭০জন। ২০১৯ সালের ফেব্রুবারিতে কর্মসংস্থান সংখ্যা হয় ৮লক্ষ ৬১ হাজার ৭০১জন। এতে সংগঠিত ক্ষেত্রে ২২থেকে ২৫ বছরের কর্মপ্রার্থীর কর্মসংস্থান হয়েছে ২লক্ষ ৩৬ হাজার। ২৯থেকে ৩৫ বছরের কর্মসংস্থান হয়েছে ১.৫৪ লক্ষ। ৩৫ বছরের উপরে কর্মসংস্থান হয়েছে ১.৪৩ লক্ষ। আরেকটি হিসাবে দেখা যাচ্ছে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সাল নভেম্বর পর্যন্ত মোট কর্মসংস্থান দেখানো হচ্ছে ৭৩.৫২ লক্ষ। ডিসেম্বরে তার সংখ্যা হয়েছে ৭২ .৩২ লক্ষ। ফলে কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে। পরের মাসে জানুয়ারিতে এই সংখ্যা হয়েছে ৭৬.১৮ লক্ষ। ফলে মাসে এই কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার খুবই কম। যা আবার মাঝে মধ্যে কমেছে। এদিকে কাজ হারানোর তথ্য তুলে ধরা হয়েছে ইপিএফ রিপোর্টে। একদিকে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার কমেছে অন্যদিকে কাজ হারানোর সংখ্যা বেড়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের মার্চে কাজ হারিয়েছেন ৫৫হাজার ৯৩৪ জন। আগে এই কাজ হারানোর সংখ্যা হিসাবের পদ্ধতির সমস্যায় কম দেখানো হয়েছিল। এই সংখ্যা ছিল ২৯ হাজার ২৩ জন।

তাহলে দেখা যাচ্ছে ফের দিল্লির তখত দখল করতে চাকরির নামে দেশবাসীকে নিরন্ত্র ঠকিয়ে গিয়েছেন চৌকিদার প্রধানমন্ত্রী। ভোটের আগে এই মিথ্যে প্রচার যাতে দেশবাসীর সামনে না আসে তারজন্য কত কীই না ফন্দি এঁটেছেন। তবে শেষপর্য্ত শেষরক্ষা হল না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven − seven =