নয়াদিল্লি: মোদি সরকারের শুরুতেই ধাক্কা৷ মোদি সরকারের প্রথম দিনেই জোড়া ধাক্কা৷ গত ৫ বছরে সর্বনিম্ন দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার৷ ৪৫ বছরে দেশের বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ৷ দেশে বেকারত্বের হার বেড়েছে ৬.১ শতাংশ৷ আগামী ১৭ জুন থেকে ২৬ জুলাই সংসদে বাজেট অধিবেশন৷ তার আগেই এই রিপোর্ট প্রকাশ হতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক উত্তাপ৷
১৯৭২-৭৩ সাল থেকে এ যাবৎ বেকারত্বের হার সব থেকে বেশি ছিল মোদি জমানায়, ২০১৭-১৮ সালে। জাতীয় স্যাম্পেল সার্ভে অর্গানাইজেশনের সমীক্ষার মতে, ওই বছরে বেকারত্বের হার ছিল ৬.১ শতাংশ। এ দিন ওই পরিসংখ্যান প্রকাশ করলেও সরকারের মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ প্রবীণ শ্রীবাস্তব সতর্ক করে বলেন, বেকারত্বের এই হারকে পূর্বের কোনও বছরের পরিসংখ্যানের সঙ্গে তুলনা করা ঠিক হবে না। কারণ, বেকারত্বের হার নির্ণয় করার পদ্ধতি বদল করা হয়েছে। তাই সবটাকে নতুন প্রেক্ষিতে দেখা প্রয়োজন। পাশাপাশি অন্য একটি পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, গত আর্থিক বছরের শেষ তিন মাসে বৃদ্ধির হার ছিল ৫.৮ শতাংশ। যা গত ১৭ মাসের মধ্যে সব থেকে কম। এই পরিসংখ্যান প্রকাশের পর এও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে বৃদ্ধির হারে চিনের কাছে পিছিয়ে পড়েছে ভারত। চিনের বৃদ্ধিই এখন সব থেকে দ্রুত হারে বাড়ছে।
কেন্দ্রে প্রথম বার সরকার গঠনের সময় নরেন্দ্র মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বছরে দুকোটি বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে তাঁর সরকার। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বাস্তব ছবির যে জমিন –আসমান ফারাক তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ ছিল না। উপরি পকোড়া ভাজাকেও যখন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির সঙ্গে তুলনা করেছিলেন মোদি, তখন সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। এই পরিস্থিতিতে জানুয়ারি মাসের তথ্য ফাঁস মোদি সরকার তথা বিজেপি-কে বেমক্কা চাপে ফেলে দেয়। তা ছাড়া বেকারত্ব বাড়ায় অসন্তুষ্ট ছিল খোদ সঙ্ঘ পরিবারও। এমনকী আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত একবার ক্ষোভের সঙ্গে বলেছিলেন, “জিনিসের দাম বাড়ছে, কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। কিন্তু নীতি আমরা বানাইনা, আপনারাও প্রনয়ণ করেন না, তা করে সরকার।”
ভারতের জিডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ৫.৮ শতাংশ৷ জিডিপি বৃদ্ধির এই হার গত দু’বছরে সর্বনিম্ন৷ ২০১৭ সালের এপ্রিল-জুনের পরে এত কম জিডিপি বৃদ্ধি ঘটেনি৷ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের সমীক্ষা বলছে, এবছর জিডিপি বৃদ্ধির হার ৬.৩ শতাংশ ধরা হয়েছিল৷ কিন্তু, সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি৷ ২০১৮-১৯ সালের অর্থনীতি আটকে রইল গড়ে ৬.৮ শতাংশে৷ রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া গত এপ্রিলে জানিয়েছিল, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে জিডিপি বৃদ্ধি ৭.৪ শতাংশ করা হবেষ থেকে কমিয়ে ৭.২ শতাংশে নিয়ে আসা হবে৷ কিন্তু, তা আর হল না৷ আর তার জেরেই চিনের সঙ্গে জিডিপি বৃদ্ধির যে প্রতিযোগিতা ছিল ভারতের, তা থেকে পিছিয়ে পড়ল ভারত৷ চিনে জিডিপি বেড়েছে ৬.৪ শতাংশ৷ অন্যদিকে, রিজার্ভ ব্যাংক রেট রেট কমিয়ে ৫০ বেসিস পয়েন্টে নামিয়ে এনেছে৷ মনে করা হচ্ছে, আগামী ৪ জুন থেকে ৬ জুনের বৈঠকে রেপো রেটকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৫.৭৫ শতাংশ করা হতে পারে৷
দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় ফিরে দোষত্রুটি এড়াতে তড়িঘড়ি বেকারত্বের হার শিকার করে পরোক্ষে কী পূর্বতন সরকারের কৃতিত্বের দায় ঘাড় থেকে নামাতে চাইলেন মোদি?