বেকারত্বে দেশের ৪০ বছরের রেকর্ড ভাঙল কর্মসংস্থানের আকাল

নয়াদিল্লি: কর্মহীন ভারতের তথ্যই এবারে লোপাট করে দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রের শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গাঙ্গোয়ার তো সরকারি বেসরকারি সমীক্ষা রিপোর্টে বেকারি নিয়ে তথ্য এক ফুঁয়ে উড়িয়েই দিলেন। বললেন, ওসব সমীক্ষার কোনও মানে হয় না। ভারতে কর্মসংস্থান হচ্ছে। কোথায় হচ্ছে জানতে চাওয়া হলে তার পরিষ্কার জবাব, আমার লোকসভা কেন্দ্রে চলুন আমি দেখিয়ে দেব। শ্রমমন্ত্রীর এই জবাবের সঙ্গে তাল

বেকারত্বে দেশের ৪০ বছরের রেকর্ড ভাঙল কর্মসংস্থানের আকাল

নয়াদিল্লি: কর্মহীন ভারতের তথ্যই এবারে লোপাট করে দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রের শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গাঙ্গোয়ার তো সরকারি বেসরকারি সমীক্ষা রিপোর্টে বেকারি নিয়ে তথ্য এক ফুঁয়ে উড়িয়েই দিলেন। বললেন, ওসব সমীক্ষার কোনও মানে হয় না। ভারতে কর্মসংস্থান হচ্ছে। কোথায় হচ্ছে জানতে চাওয়া হলে তার পরিষ্কার জবাব, আমার লোকসভা কেন্দ্রে চলুন আমি দেখিয়ে দেব। শ্রমমন্ত্রীর এই জবাবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মোদীর হাসি হাসি মুখের ছবি দেখিয়ে বিজ্ঞাপন জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে কিভাবে কর্মসংস্থানে জোয়ার এনেছে কেন্দ্র। একই চিত্র পশ্চিমবঙ্গে। হাসি হাসি মুখের ছবিটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরও। তাঁরও দাবি দেশের মধ্যে সব চেয়ে বেশি কর্মসংস্থান পশ্চিমবঙ্গেই। বিজেপি-তৃণমূলের বিজ্ঞাপনে চোখ রাখলে যেন মনে হবে ভারতে কর্মসংস্থান বলে সমস্যার কোনও অস্তিত্বই নেই। বাস্তব ছবি ভয়ঙ্কর।

মোদী সরকারের ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশ্‌তেহারে মূল প্রতিশ্রুতি ছিল বছরে ২কোটি কাজ। সেই অনুসারে পাঁচ বছরে ১০কোটির কর্মসংস্থান হবার কথা। কর্মসংস্থান নিয়ে সরকারি যে সমীক্ষা নির্ভরযোগ্য বলে মনে করা হতো তা হলো পরিবার ভিত্তিক ঘরে ঘরে তথ্য সংগ্রহ মারফত সমীক্ষা। লেবার ব্যুরো ২০১০ সাল থেকে নিয়মিত এই মডেলে সমীক্ষা চালিয়ে আসছে। এতে সুরিধা হলো সংগঠিত ও অসংগঠিত উভয় ক্ষেত্রের কর্মসংস্থানের একটা সার্বিক চিত্র পাওয়া যায়। ২০১৬-১৭ সালের সমীক্ষায় জানানো হলো দেশে বেকারির হার বাড়ছে ৩.৯% হারে। বেকারির হার বাড়ার এই চিত্র দেখেই মোদী সরকারের তরফে লেবার ব্যুরোর এই সমীক্ষা বন্ধ করে দেওয়া হলো সেই বছর থেকে। এবারে জাতীয় নমুনা সমীক্ষার উপর এই কর্মসংস্থানের সমীক্ষা চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হলো। এতে পাঁচ বছর অন্তর কর্মসংস্থান নিয়ে রিপোর্ট ছাড়াও নির্দিষ্ট মেয়াদে কর্মরত শ্রমিকের হার নিয়ে রিপোর্ট বের করা হবে বলে স্থির করল কেন্দ্র। প্রথম রিপোর্ট তৈরি হলো ২০১৭ সালে জুন থেকে ২০১৮ সালের জুন এই মেয়াদে কর্মরত শ্রমিকের হার নিয়ে। এই রিপোর্টে বেকারি হার বিপুল হারে বেড়েছে বলে জানানো হলো। এই হার হলো ৬.১%। যা বন্ধ করে দেওয়া লেবার ব্যুরোর ২০১৬-১৭ সালের সমীক্ষায় বেকারির হারের দ্বিগুণ। দেশে ৪০ বছরের ইতিহাসে এই হারে বেকারি বেড়ে চলা দেখা যায়নি বলে রিপোর্টে মন্তব্য করা হলো। শ্রমমন্ত্রকে এই রিপোর্ট সমীক্ষা কমিটির তরফে সময়মতো জমা পড়লেও মোদী সরকারের তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো এই রিপোর্ট প্রকাশই করা হবে না।

সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে গেল সেই রিপোর্ট। জানা গেল বেকারি হার বেড়ে চলার তথ্য এই রিপোর্ট তুলে ধরা হয়েছে। কেন্দ্র এই রিপোর্ট প্রকাশ না করায় জাতীয় পরিসংখ্যান কমিশনের প্রধান পি সি মোহন পদত্যাগ করেন। তিনি পরিষ্কার সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়ে দিলেন এই রিপোর্টে কেন্দ্র তাদের মনোমতো যা বোঝাতে চাইছে তা বলা হয়নি। তাই তারা এই রিপোর্ট প্রকাশ করল না। শ্রমমন্ত্রকের অধীন লেবার ব্যুরো নয়া উদারবাদের জমানায় শিল্পে ও পরিষেবায় কর্মসংস্থানের প্রভাব বুঝতে নির্দিষ্ট কিছু শিল্প ক্ষেত্রে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে কী হারে কর্মসংস্থান হচ্ছে তার রিপোর্ট প্রকাশ করতো। ৮টি শিল্প ও পরিষেবা ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের হার নিয়ে এই সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করা হতো। তার রিপোর্টেও কর্মহীনের ছবি ধরা পড়েছে। দেখা গেছে ৮টি উৎপাদন শিল্প ও পরিষেবা শিল্পে ২০১১-১২ সালে কর্মসংস্থান হয়েছিল ১০ লক্ষ। ২০১৬-১৭ সালে তা কমে হয়েছে ৪.১৬ লক্ষ। ফলে সরকারি কোনও সমীক্ষাতেই দেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার ধরা পড়েনি।

সরকারি সমীক্ষার সঙ্গে মিল দেখা গেছে বেসরকারি সমীক্ষাতেও। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি সমীক্ষায় জানিয়েছে ফেব্রুয়ারিতে বেকারি আরও বেড়েছে। তার হার হবে ৭.১%। একইভাবে ২০১৭থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর এই সময়ে কাজ হারিয়েছেন ১.১ কোটি মানুষ। মোদী সরকার যে কর্মহীন আর্থিক বৃদ্ধির অভিযোগ এনেছিল ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে সেই একই প্রবণতা দেখা গেছে মোদীর আমলেও। আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয় সমীক্ষায় জানিয়েছে, মোদীর আমলে আর্থিক বৃদ্ধির হার থেকে কম হারে বেড়েছে কর্মসংস্থান। মোদী জমানায় মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন যেখানে ১০% বেড়েছে সেখানে কর্মসংস্থান বেড়েছে মাত্র ১%। এই ব্যর্থতা আড়ালে এখন মোদী সরকারের বিজ্ঞাপনেই মুখ ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *