কলকাতা: রাজ্য সরকারকে দেওয়া চূড়ান্ত সময়সীমা শেষ হতেই বেতন বৃদ্ধির দাবিতে রাজপথে আগলে এবার রাতভর ধর্না কর্মসূচিতে বসলেন বাংলার কয়েকশো শিক্ষক৷ শুক্রবার বেতন বৃদ্ধির দাবি, অনৈতিক ভাবে শিক্ষকদের দূরে বদলির প্রতিবাদে রাতভর ধর্না ও প্রয়োজনে অনশনের প্রস্তুতি শিক্ষকদের৷ শনিবারের মধ্যে শিক্ষকদের দাবি পূরণ না হলে পরিবারের সদস্যদের রাজপথে নামিয়ে অনশনের হুঁশিয়ারি প্রাথমিক শিক্ষকদের৷
আজ দিনভর একই দাবিতে মিছিল করেন প্রাথমিক শিক্ষকদের একটি বড় অংশ৷ কয়েক হাজার প্রাথমিক শিক্ষক বিকাশ ভবনের বিক্ষোভ দেখান৷ দীর্ঘ দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসা প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির দাবি মেটানোর বিজ্ঞপ্তি জারির দাবিতে দেখান বিক্ষোভ৷ কিন্তু, দিনভর রাজ্যের তরফে কোনও উদ্যোগ না নেওয়ার অভিযোগ তুলে রাজপথ আগলে ধর্নায় বসে পড়েন প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ৷ খোলা আকাশের নীচে রাস্তার উপর ত্রিপল পেতে বসে পড়েন শিক্ষকরা৷ আন্দোলনে গিয়ে চূড়ান্ত সমস্যায় পড়েন শিক্ষিকারও৷ সৌচালয় থেকে প্রয়োজনীয় পানীয় জল না পেয়ে সমস্যা পড়েন তাঁরা৷ বাধ্য হয়ে মোটা দামে জল কিনে খেতে বাধ্য হন তাঁরা৷ তার উপর রয়েছে বৃষ্টির আশঙ্কা৷ রাতে বৃষ্টি হলে কী পরিস্থিতি হবে, মাথা বাঁচাতে কোথায় যাবেন, তা এখনও জানেন না তাঁরা৷ তবে, প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই এই আন্দোলন চালিয়ে যেতে অনড় প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ৷
উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদিকা পৃথা বিশ্বাস বলেন, ‘‘আজ সারাদিন ধরে আমাদের ১৪ জন সহকর্মী শিক্ষকের অনৈতিক বদলি ও আলোচনা সাপেক্ষে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য বৈষম্য দূর করতে হবে আমরা আজ রাতভর ধর্নায় থাকবো৷ যতক্ষণ না পর্যন্ত আমাদের এই দু’টি দাবি একই সঙ্গে শিক্ষা দপ্তর মেনে নিচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এখানেই বসে থাকবো৷ শিক্ষকদের অনুরোধ করবো, কাল আপনারা আসুন৷ শিক্ষক ঐক্য কোন জায়গায় যেতে পারে, তা আমরা রাজ্য সরকারকে দেখিয়ে দিই৷ সরকারের পক্ষ থেকে যতদিন পর্যন্ত আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা রাস্তায় থাকবো৷ দরকার হলে আমরা চরম পথ নিতে প্রস্তুত আছি৷’’
শুক্রবার দুপুরে করুনাময়ী থেকে বিকাশভবন পর্যন্ত বিশাল মিছিল করেন শিক্ষকরা৷ জানান তাঁদের দাবি৷ বেতন বৃদ্ধির লিখিত প্রতিশ্রুতি ছাড়া কোনও ভাবেই কর্মসূচি তুলে নেওয়া হবে না বলে ঘোষণা উস্তি ইউনাইটেড অ্যাসোসিয়েশনের৷
রাজ্যকে দেওয়া ১৫ দিনের চূড়ান্ত সময়সীমার মধ্যে বেতন বৃদ্ধির আশ্বাস ছাড়া সরকারি কোনও সিদ্ধান্ত কার্যকর না হওয়ায় আজ রাজপথে নামেন প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ৷ গত ২৪ জুন ধর্মতলা অভিযানে নেমে পুলিশি তাণ্ডবের শিকার হওয়ার পরও থামছে না যোগ্যতা অনুযায়ী বেতন বৃদ্ধির দাবি৷ শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ১৫ দিনের সময়সীমা দেওয়া হলেও তা কার্যকর না হওয়ায় আজ ফের রাজপথে নেমে রাজ্য বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার ডাক দেওয়া হয়৷
প্রাথমিক শিক্ষকদের অরাজনৈতিক সংগঠন উস্তি ইউনাইটেড অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সভাপতি সন্দীপ ঘোষ ও সম্পাদক পৃথা বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘‘আমরা যে পে স্কেল জমা দিয়ে এসেছিলাম, শোনা যাচ্ছে রাজ্য সরকার অন্য স্কেল দিতে চাইছে৷ যেটা সাধারণ শিক্ষকরা মেনে নেবেন না৷ ১৪ জন শিক্ষককে অনৈতিক ভাবে জেলার বাইরে বদলি করা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, একদিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেবেন৷ সেটাও এখন পর্যন্ত কার্যকর হয়নি৷ আমরা চাই, আমাদের সংগঠন এই রাজ্যের সব প্রাথমিক শিক্ষকদের যোগ্যতা অনুযায়ী ন্যায্য বেতন নিয়ে লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন, তাই পে রিভিউ কমিটির সঙ্গে আলোচনার জন্য আমাদের সংগঠনকে ডাকা হোক৷ অনৈতিক ভাবে বদলিপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিজের জেলায় ফেরত আনা হোক৷’’
তাঁরা আরও জানিয়েছেন, ‘‘আমরা সরকারের কাছে যে স্কেলের দাবি জানিয়েছিলাম ও শিক্ষামন্ত্রী কাগজে লিখে নিয়েছিলেন, সেই স্কেল দেওয়া হোক৷ আমরা সরকারের কাছ থেকে আগামী ১০ জুলাই দুপুর ১২টার মধ্যে এই বিষয়ে লিখিত মতামত চেয়েছিলাম৷ কিন্তু, তা না হওয়ায় আজ ফের আমরা রাস্তায় নামব৷ এবার নামব বিকাশভবনের সামনে লাগাতার অবস্থানে বসলাম৷ আশা রাখি, পশ্চিমবঙ্গের সরকার ১ লক্ষ ৮৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকদের আবেগ নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না৷’’