কলকাতা: শিক্ষক নিয়োগে বিধি বদল হতে পারে, এমনই ইঙ্গিত দিয়ে আগেই একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল আজ বিকেল ডটকম৷ এবার সেই ইঙ্গিতকে বাস্তব করে শিক্ষক নিয়োগে আমূল বদল আনল স্কুল সার্ভিস কমিশন৷ গেজেট নোটিফিকেশন জারি করে শিক্ষক নিয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় গুচ্ছ বদল আনা হয়েছে৷
গেজেট নোটিফিকেশন (আজ বিকেল ডট কমে প্রকাশিত হবে পূর্ণাঙ্গ গেজেট নোটিফিকেশনের বাংলা অনুবাদ৷ নজর রাখুন) জারি করে মৌখিক পরীক্ষা তুলে দেওয়ার বিষয়ে সিলমোহর দেওয়া হয়েছে৷ ফলে, কোনও শিক্ষক পদপ্রার্থী পড়ুয়াদের সঙ্গে ঠিকঠাক কথা বলতে পারবেন কি না, আদৌ পড়া বোঝানোর মতো তাঁর ক্ষমতা আছে কি না, কোনও বিষয় ঠিকঠিক উপস্থাপনা করতে পারেন কি না, তা আর দেখা হবে না৷ কারণে, লিখিত পরীক্ষায় নম্বর কথা বলবে৷ নয়া বিধিতে লিখিত পরীক্ষার দেওয়া হয়েছে গুরুত্ব৷ কাকতালীয় ভাবে প্রশ্নপত্র কমন পেয়ে গেলেই কেল্লাফতে৷ এক প্রশ্নপত্রেই শিক্ষক, কে রুখবে!
মৌখিক পরীক্ষা তুলে দেওয়া পাশাপাশি রয়েছে আরও চমক৷ নয়া শিক্ষক নিয়োগের বিধিতে উঠে যাচ্ছে মাধাবী পড়ুয়াদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা৷ যোগেযাগে পাস করা পরীক্ষার্থীরাও সমান তালে ৬০ শতাংশের বেশি নিয়ে মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ মাধ্যমিকের পাস করা পড়ুয়াদের হেলায় চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে৷ অর্থাৎ শিক্ষক নিয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে আর প্রযোজন হবে না অ্যাকাডেমিক নম্বর৷ ৩৪ হোক কিংবা ৮০ নম্বর নিয়ে পাস করা সমস্ত পরীক্ষার্থী এখন অভিন্ন, সমান প্রতিদ্বন্দ্বী৷ মুড়ি, মুড়কি একদর হলে যা হয় আর কি!শিক্ষক নিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির মধ্যে অন্যতম, এখন থেকে পৃথক পৃথক পরীক্ষা উঠে যাচ্ছে৷ শুধুমাত্র দু’টি পরীক্ষায় দেওয়ার ব্যবস্থায় থাকছে৷ একটা টেট ও বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষা৷ আর তার ভিত্তিতে প্রকাশিত হবে মেধাতালিকা৷ মোট ৩০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে৷
শিক্ষা দপ্তর মনে করছে, নয়া এই ব্যবস্থা যদি কার্যকর করা যায়, তাহলে চাকরিপ্রার্থীদের হেনস্থা কমবে৷ নিয়োগে জটিলতা কমবে৷ বাঁচবে সময়৷ তবে, মৌখিক পরীক্ষা তুলে দিলে মুড়ি-মুরকি এক হয়ে যাবে না তো? সেক্ষেত্রে অ্যাকাডেমিক নম্বরের ব্যবস্থা তুলে দিলে মধ্যমেধার রমরমা বাড়বে না তো? মৌখিক পরীক্ষা উঠে গেলে সফল প্রার্থী আদৌও পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলতে পারবে কি না, তা শিক্ষা দানের পদ্ধতি যাচাই করা আদৌ সম্ভব হবে? প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষক মহলের একাংশ৷
শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া বা অ্যাকাডেমিক নম্বরের গুরুত্বহীন করার কোনও মানে হয় না৷ সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করার জন্য আন্তরিক প্রয়াস জরুরি৷ প্রয়োজনে অনলাইন পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হোক৷ এই আসল কাজটা হবে কি? অ্যাকাডেমিক নম্বরের গুরুত্বকে অস্বীকার করার মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি আরও বাড়বে৷’’