পেটের দায়ে পেশা বদল! বাংলার ২ মেধাবী এখন সবজি ও ডিম বিক্রেতা

পেটের দায়ে পেশা বদল! বাংলার ২ মেধাবী এখন সবজি ও ডিম বিক্রেতা

কলকাতা: লকডাউন বদলে দিয়েছে বহু মানুষের জীবন৷ পেটের টানে লজ্জার আবরন সরিয়ে তাই পেশা বদলাতে বাধ্য হয়েছে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো৷ দেখতে গেলে লকডাউনের যাঁতাকলে সবচেয়ে বেশি পিষ্ট হচ্ছে শিক্ষিত মধ্যবিত্তরাই৷ কারণ, তাঁদের কপালে যেমন জুটছে না বিনা পয়সার রেশন, তেমনই তাঁরা পারছেন না ত্রাণের লাইনে গিয়ে দাঁড়াতে৷ প্রায় এক মাস হতে চলল, রোজগার বন্ধ৷ তাঁরা খাবে কি? তাই কিঞ্চিৎ বাধ্য হয়েই মধ্যবিত্ত শিক্ষিত যুবকরা বদলে ফেলেছেন তাঁদের পেশা৷ কোথাও আবার  মুখোশের আড়ালে অস্থায়ী বাজারে ডিম বেচছে স্কুলের ফার্স্ট বয়৷ 

করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের জেরে আপাতত স্থগিত উচ্চমাধ্যমিক৷ বাকি পরীক্ষা হতে সেই জুন মাস হবে৷ বিজ্ঞান বিভাগে এখনও বাকি রয়েছে পদার্থবিদ্যা, রসায়নের মতো বিষয়৷ কিন্তু পরীক্ষা দেওয়ার জন্য তো বেঁচে থাকতে হবে৷ বাঁচাতে হবে সংসারটাকেও৷ তাই বাবার সঙ্গে বাজারে যাওয়া শুরু করেছেন মালবাজার আদর্শ বিদ্যাভবনের ফার্স্ট বয় অয়ন সেন৷ তাঁর বাবা দীনেশ সেন পেশায় দর্জি৷ দোকান বন্ধ, তাই আপাতত বাজারে সবজি নিয়ে বসছেন তিনি৷ তার থেকে কিছুটা দূরে ডিম বেচতে বসছে অয়ন সেন। অভাবের সংসারে দিনরাত বইখাতায় মুখ গুঁজে বসে থাকা যে সম্ভব নয়, তা মেনে নিয়েছে সে৷  

আবার গৃহশিক্ষকতার পেশা ছেড়ে সবজি বিক্রি শুরু করেছেন  মেদিনীপুরের প্রশান্ত পাত্রের মতো শিক্ষিত মধ্যবিত্ত যুবকরা। নন্দকুমার থানার অন্তর্গত শ্রীকৃষ্ণপুর এলাকার বাসিন্দা প্রশান্ত এমএ (বিএড) হয়েও চাকরি জোগাড় করতে পারেননি৷ তাই শ্রীকৃষ্ণপুর বাজারের  কাছে একটি কোচিং সেন্টার খুলেছিলেন তিনি। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির প্রায় ২৫ জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে চলছিল তাঁর কোচিং সেন্টার৷ তাদের পড়িয়ে  কোনও রকমে সংসার চালাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু লকডাউনে বন্ধ সেন্টার। কষ্টেশিষ্টে পনেরো- কুড়িদিন চলার পর, সংসার আর চলছে না৷ জীবন বাঁচাতে তাঁই তিনি বদলে ফেললেন পেশা৷ শিক্ষকতা ছেড়ে তিনি এখন পাড়ার সবজি বিক্রেতা। হলদিয়া-মেচেদা সড়কের পাশে শ্রীকৃষ্ণপুর বাসস্ট্যান্ডে বন্ধ কোচিং সেন্টারের সামনেই এখন সবজি বেচছেন তিনি৷ অল্প হলেও, আয় তো হচ্ছে৷ এই দিয়েই চলছে সংসার৷ 

শুধু প্রশান্তই নন৷ বিভিন্ন জেলায় টোটো চালক, রিক্সা চালক, রাজমিস্ত্রি-সহ একাধিক মানুষ এখন সবজি বিক্রেতা৷ ভ্যান ভাড়া করে সবজি নিয়ে বসছেন তাঁরা৷ এই সবজি বেচেই পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন তাঁরা৷  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *