কলকাতা:আছে শিক্ষক প্রশিক্ষক নেওয়ার বৈধ্য সার্টিফিকেট৷ কিন্তু, প্রশিক্ষণ থাকা সত্ত্বেও বন্ধ ৪ হাজার শিক্ষকের পদোন্নতি৷ আর তার জেরেই বেতন বঞ্চনায় জেরবার শিক্ষকদের একাংশের৷ কিন্তু, ঠিক কেন এই সমস্যা?
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির অভিযোগ, ২০১৩-১৪ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিযুক্ত হওয়া বহু প্রশিক্ষণহীন শিক্ষক বিভিন্ন উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাস বা অনার্স পদে যোগদান করেন৷ নিয়োগের শর্ত অনুসারে, চাকরি পাওয়ার দু’বছরের মধ্যে রাজ্য সরকার ওই সমস্ত অপ্রশিক্ষত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে বলে উল্লেখ করে৷ কিন্তু রাজ্যের তরফ থেকে শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিএডের জন্যে ছাড়া দেওয়া হয় ২০১৬ সালে৷ এই সময় প্রশিক্ষণ গ্রহণের নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এনসিটিই নিয়ম অনুযায়ী কার্যকর হলে, স্নাতক বা স্নাতকোত্তরে ৫০ শতাংশের কম নম্বর পাওয়া এই সাড়ে তিন থেকে চার হাজার শিক্ষক নিয়মের গেরোয় আটকা পড়েন৷ বিএডএ ভর্তি হওয়ার সুযোগ হারান৷
এই পরিস্থিতিতে ২০১৭ সালে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের উদ্যোগে গোটা ভারতের বাকি থাকা সমস্ত প্রশিক্ষণহীন শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে, এনআইওএসের মাধ্যমে ডিএলএডের আয়োজন করে৷ সকলকেই প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়৷ ২০১৯ সালের মে মাসে এইডিএলএড পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়৷ ডিএলএড করা পাস বা অনার্স শিক্ষকরা নিজেদের প্রশিক্ষিত হিসাবে মান্যতা দিতে ও ইনক্রিমেন্ট চালু করার লক্ষ্যে বিভিন্ন জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে আবেদন জমা করেন৷ শিক্ষা দপ্তর কোনও কার্যকরী ভূমিকা পালন না করার অভিযোগ ওঠে৷ ফলে দ্বাদশ এসএসসি’র বিজ্ঞাপন বা কলকাতা জেলা স্তরে সমস্যার সমাধান না হওয়ায়, বিকাশ ভবনে শিক্ষকরা বারবার দরবার করেন৷ কিন্তু কোনও ফলাফল পাওয়া যায়নি৷ গেজেটে দু’বছরের ডিএলএডকে বিএডের সমতুল্য বলা হলেও, দেড় হাজার শিক্ষক বঞ্চিত হতেই থাকেন৷
দীর্ঘ এই বঞ্চনার কথা মাথায় রেখে, মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি গত ১০ জুলাই শিক্ষামন্ত্রীর কাছে ডেপুটেশনে এই সমস্যার কথা উল্লেখ করে৷ শিক্ষামন্ত্রী আশ্বস্ত করেন৷ সরকারি নির্দেশিকা জারি করে সমস্ত শিক্ষককে ইনক্রিমেন্ট চালু হবে বলেও আশ্বাস মেলে৷ কিন্তু আগস্ট মাসের মাঝামাঝিতেও এমন কিছু নির্দেশ সরকারি ভাবে জারি হয়নি৷ বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, বিষয়টি মানব সম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের কাছে বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়েছে৷ এখনও কোনও উত্তর আসেনি৷
এই বিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, ‘‘গত ১০ জুলাই বিধানসভা ভবনে শিক্ষামন্ত্রীকে বিষয়টি তুলে ধরেছি৷ তিনি আমাদের আশ্বস্থ করলেও এখনও বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি৷ তাই আমরা সকল বঞ্চিত শিক্ষকদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে যাব৷’’ মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে এই সমস্ত শিক্ষকরা নিযুক্ত হয়েছেন। তাই এঁদের চাকরির সুরক্ষা ও প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা সরকারকেই সুনিশ্চিত করতে হবে৷’’