নয়াদিল্লি: নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে ধর্মীয় বিভাজন নীতির বিরোধিতায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ জারি রয়েছে দেশজুড়ে৷ মোদি সরকার দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর সম্প্রতি নাগরিকত্ব আইনে কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে৷ আর এই আইনে মূল বিরোধিতার বিষয় হল বিশেষ কয়েকটি ধর্মাবলম্বী উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব প্রদানের সিদ্ধান্ত৷ যা গনতান্ত্রিক ভারতের নাগরিকদের সার্বভৌমত্ব খর্ব করে এবং সংবিধানের পরিপন্থী৷ যদিও এই বিষয়টি এখনও পর্যন্ত মেনে নিতে পারেনি আইনপ্রয়োগকারী বিজেপি সরকার৷ নানান যুক্তি-তর্ক, বিভ্রান্তির প্যাঁচে জর্জরিত করে দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে এই আইনের প্রয়োজনীয়তা ও বিশ্বাসযোগ্যতা তুলে ধরতে মরিয়া প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার পক্ষ৷ তবে এরপর থেকেই এই ধর্ম বিষয়ক উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যতিক্রমী হয়ে উঠেছে সরকারি ক্ষেত্রে বিভিন্ন আবেদন-নিরীক্ষণের ক্ষেত্রে৷
স্কুল,কলেজে ভর্তির ফর্মে ধর্মের উল্লেখ করার জন্য বিশেষ কলাম দেওয়ার খবর তো ছিলই৷ এবার রেলের আবেদন ফর্মেও দেখা গেল এই বিশেষ কলাম৷ পশ্চিম মধ্য রেলের ভোপাল ডিভিশনে নিশাতপুরা বগি নির্মাণ কারখানায় ৫৭০ জন অ্যাপ্রেন্টিস নিয়োগ করা হবে৷ সম্প্রতি এই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে৷ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ থেকে শুরু হয়েছে আবেদন ফর্ম পূরণ আবেদন করা যাবে ১৫ মার্চ ২০২০ পর্যন্ত৷ আর এই ফর্ম পূরণ করতে হলে প্রার্থীদের ফর্মের একটি বিশেষ কলাম পূরন করতে হবে, যেখানে হিন্দু, মুসলিম, শিখ, ক্রিশ্চান ও অন্য বলে উল্লেখ করা আছে এবং সেখানে 'বাধ্যতামূলক নয়' তেমন বিকল্পের কথাও উল্লেখ করা নেই৷ অর্থাৎ প্রার্থীদের নিজের ধর্মের পরিচয় দিতেই হবে৷ এখানে খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে কর্মক্ষেত্রে ধর্মের পরিচয়? তাও আবার কেন্দ্রীয় সরকারের সবথেকে বড় কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে? বিষয়টি কি রেলমন্ত্রকের অনুমতি নিয়েই কার্যকর করা হয়েছে? এর প্রয়োজনীয়তা কোথায়, কতটা তার ধারণা কি প্রার্থীদের জানার অধিকারের মধ্যে পড়েনা? অনেক আবেদনকারী হয়তো কোনও ধর্মেই বিশ্বাস করেন না৷ তিনি হয়তো শুধু মানবধর্মে বিশ্বাসী৷ এই আবেদনকারীরা ওই কলামে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান-সহ নানা ধর্মের মধ্যে ‘অন্যান্য’ বলে যেখানে উল্লেখ থাকত তা বেছে নিতেই পারেন৷ তাহলে এই কলামটি রং প্রয়োজনীয়তা কোথায়?
স্কুল-কলেজের ফর্মের ক্ষেত্রেও এই ধর্ম উল্লেখ করার বিশেষ কলাম পূরণ করা নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশের বহু রাজ্যেই ক্ষোভের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে অভিভাবক থেকে শুরু করে ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যেও৷ তবে এই বিভ্রান্তি দূর করতে এরাজ্যে ইতিমধ্যেই অভাবনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ অনলাইনে ভর্তির ফর্ম ভরার ক্ষেত্রে রাজ্যের অন্তত ৫০টি সরকারি বেসরকারি কলেজ 'ধর্মীয় বিশ্বাস'-এর কলামে 'মানবতা'কে যুক্ত করা হয়েছে৷ অর্থাৎ হিন্দু, মুসলমান, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ধর্মের সঙ্গেই থাকছে 'মানবতা' বা হিউম্যানিটি অপশন৷ যা কেন্দ্রের ধর্মবিভাজন নীতির বিরুদ্ধে যোগ্য জবাব বলেই মনে করা যায়৷ এরমধ্যে আছে বেথুন, মৌলানা আজাদের মত ঐতিহ্যবাহী কলেজগুলি৷ তবে ভোপালের এই অ্যাপ্রেন্টিস নিয়োগের ফর্মে তেমন অপশন নেই৷ তাই এক্ষেত্রে যে প্রার্থীরা 'অন্যান্য' অপশনটি বেছে নেবেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের ভাগ্যে নির্ধারণ কিভাবে হবে তা বলতে পারেন একমাত্র রেলমন্ত্রক৷