সংসার চালাতে স্কুল শেষে বিড়ি বাঁধেন এই পার্শ্বশিক্ষক!

কলকাতা: চূড়ান্ত অচলাবস্থা৷ একদিকে শীতের কামড়, মাথার উপর শিশির, অন্যদিকে লাগামছাড়া মশার দাপট৷ খোলা আকাশের নীচে, রাজপথে আগলে দিন-রাত এক করে পড়ে রয়েছেন বাংলার কয়েক হাজার শিক্ষক৷ একাধিক প্রতিকূলতাকে জয় করে টানা এক ৯ দিন ধরে নিজেদের অধিকারের দাবিতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন পার্শ্ব শিক্ষকদের একাংশ৷ এই নিয়ে ৫ দিনে পড়ল শিক্ষকদের অনশন৷ কিন্তু অনশনে জোটেনি

0177d7207514fb1aa605b9f05b40d284

সংসার চালাতে স্কুল শেষে বিড়ি বাঁধেন এই পার্শ্বশিক্ষক!

কলকাতা: চূড়ান্ত অচলাবস্থা৷ একদিকে শীতের কামড়, মাথার উপর শিশির, অন্যদিকে লাগামছাড়া মশার দাপট৷ খোলা আকাশের নীচে, রাজপথে আগলে দিন-রাত এক করে পড়ে রয়েছেন বাংলার কয়েক হাজার শিক্ষক৷ একাধিক প্রতিকূলতাকে জয় করে টানা এক ৯ দিন ধরে নিজেদের অধিকারের দাবিতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন পার্শ্ব শিক্ষকদের একাংশ৷ এই নিয়ে ৫ দিনে পড়ল শিক্ষকদের অনশন৷ কিন্তু অনশনে জোটেনি অ্যাম্বুলেন্স, পানীয় জল, শৌচালয়৷ বিকাশ ভবন চত্বরে যখন ভুখা পেটে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন পার্শ্বশিক্ষকরা৷ কিন্তু, এই আনন্দলে নয়া মাত্রা যোগাল পার্শ্ব শিক্ষকের বিড়ি বাঁধার ভাইরাল ভিডিও৷

প্রায় আট মিনিটের একটি ভাইরাল ভিডিওয় দেখা হচ্ছে, জনৈক পার্শ্ব শিক্ষক বাড়িতে বসে বিড়ি বাঁধছেন৷ শিক্ষকতার পাশাপাশি কেন বিড়ি বাঁধার কুলো তুলে নিলেন ওই শিক্ষক? ভাইরাল ভিডিওতে ওই ব্যক্তিকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘আমার নাম বিভূতি হালদার৷ আমি একজন পার্শ্বশিক্ষক৷ আমি একটি স্কুলের শিক্ষকতা কাজ করি৷ ২০০৬ সালে ২০ ডিসেম্বর আমি ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে প্রথম নিয়োগপত্র পাই৷ আজ প্রায় ১৪ বছর হয়ে গেল, এই গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতার কাজ করছি৷ মানসিকভাবে আমি হীনমন্যতায় ভুগছি৷ একটানা শিক্ষকতার কাজ করলেও আজ পর্যন্ত সম্মানটুকু পাইনি৷ সরকারপক্ষ আমাদের সম্মান দেয় না৷ স্কুলের শিক্ষক শিক্ষকরাও উপযুক্ত সম্মান দেন না৷ আমাদের একটাই প্রার্থনা, এর থেকে কবে মুক্তি পাব৷’’

বিড়ি বাঁধার প্রসঙ্গে তার জবাব, ‘‘যেহেতু আমাদের বেতন খুবই কম৷ আমরা যেটুকু বেতন পায় সেটা তো আর বেতন বলা যায় না৷ ভাতা৷ অনেক ক্ষেত্রে সরকার পক্ষ বলে চলেছে, এটা বেতন৷ কিন্তু এটা বেতন নয়৷ আমরা যা ভাতা পাচ্ছি, তা সামান্য৷ আর তাই জীবন নির্বাহ করতে বাধ্য হয়েই এই বিড়ি বাঁধার কাজ করছি৷ কারণ অন্য কোন কাজ করার সুযোগ নেই৷ কারণ সময় দেওয়া যাচ্ছে না৷ সকাল ১০টা থেকে ৪টা পর্যন্ত স্কুলের সময় দিতে হয়৷ তারপর তো আর কোনও কাজ করার সুযোগ থাকে না৷ ফলে বাড়িতে বসে এই বিড়ি বাঁধার কাজটাই বেছে নিয়েছি৷ যাতে দুটো টাকা বেশি উপার্জন হয়৷ কারণ আমার তো পরিবার আছে৷ বড় সংসার৷ তাতে ওই ভাতায় চলে না৷ এই সাম্মানিকের ওপরে নির্ভর করে আমি বাঁচতে পারব না৷ কারণ আমার উপর অনেকেই নির্ভরশীল৷ যতটুকু সান্মানিক পাই তাতে আর যাই হোক, সবার পেটে দুবেলা দুমুঠো ভাত উঠানো যায় না৷’’

আরও আরও দাবি, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম, এই শিক্ষাকতার মাধ্যমেই আমরা দিনে দিনে উন্নতি করব৷ ভেবেছিলাম স্থায়ীকরণ করা হবে৷ স্থায়ীকরণের আশায় আমরা ১৪ বছর ধরে কাজ করে চলেছি৷ কিন্তু আজ পর্যন্ত সরকারের তরফে তেমন কোনও ইতিবাচক সাড়া মেলেনি৷ একটানা একই বেতনে ১৪ বছর ধরে কেউ কোথাও কাজ করছেন বলেতে পারেন৷ কিছুদিন আগে বেতন কিছুটা বাড়লেও সমস্যা সমাধান হচ্ছে না৷ আমারা বাধ্য হয়ে বিড়ির কুলো ধরতে হয়েছে৷ তাতে আমার লজ্জা নেই৷ আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, বেতন কম পাই বলে বাড়তি উপার্জনের জন্য এই বিড়ি বাঁধি৷’’ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই পার্শ্ব শিক্ষক মহলে নিন্দার ঝড় উঠলেও ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি আজ বিকেল ডট কম৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *