কলকাতা: দীর্ঘ মামলার গেরোয় আটকে রয়েছে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ ভবিষ্যৎ৷ প্রায় ২ হাজার পৃথক মামলা এখনও কলকাতা হাইকোর্ট বিচারাধীন৷ পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে স্পেশাল কোর্টে মামলার দ্রুত শুনানির আবেদন জানিয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশন৷ কিন্তু স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে মামলার জট গুটিয়ে আনার চেষ্টা করা হলেও চাকরিপ্রার্থীদের অভাব-অভিযোগ মুখের উপর ফিরিয়ে দিল কমিশন৷
দ্রুত মামলার শুনানির আবেদন জানিয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশন হাইকোর্টে আর্জি জানিয়েছে৷ অন্যদিকে চাকরিপ্রার্থীদের দ্রুত নিয়োগের দাবিতে ডেপুটেশন জমা নিল না এসএসসি৷ হাইকোর্টে মামলা চলার কারণ দেখিয়ে ডেপুটেশন জমা নিতে আপত্তি জানিয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশন, অভিযোগ চাকরিপ্রার্থীদের৷
জানা গিয়েছে, আজ পশ্চিমবঙ্গ আপার প্রাইমারি চাকরি প্রার্থী মঞ্চের তরফে বেশ কয়েকজন সদস্য কমিশনের দফতরে গিয়ে নিজেদের দাবি-দাওয়ার জানানোর চেষ্টা করেন৷ অবিলম্বে দ্রুততার সঙ্গে নিয়োগের শুরু করার আর্জি জানিয়ে ডেপুটেশন দেয়ার চেষ্টা করেন চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের প্রতিনিধিরা৷ কিন্তু চাকরিপ্রার্থীদের সেই দাবি-দাওয়া স্কুল সার্ভিস কমিশনের দফতর পর্যন্ত পৌঁছাল না৷ অফিসের চৌকাট থেকেই চাকরিপ্রার্থীদের প্রত্যাখ্যান করার অভিযোগ উঠেছে৷
স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেহেতু মামলাটি বিচারাধীন, ফলে তাঁরা কোনও চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে কোনরকম অভাব-অভিযোগ শুনবেন না৷ এমনকী, কোন স্মারকলিপি জমা নেবে না কমিশন৷ নিয়োগের আর্জি জানিয়ে কমিশনের চৌকাট থেকে ফিরে গিয়ে চরম হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ কমিশনের দফতরের বাইরে স্লোগান বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা৷ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বেশ কিছুক্ষণ তাঁরা অবস্থান করেন৷ কিন্তু, কেন কমিশন তাঁদের ডেপুটেশন গ্রহণ করল না? প্রশ্ন তুলছেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷
মঙ্গলবার দুপুরে ই-মেল করে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি বি রাধাকৃষ্ণনের কাছে দ্রুত শুনানির আবেদন করেছে কমিশন।হাইকোর্ট দুবার শিক্ষক নিয়োগের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। যার ফলে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়নি। ২০১৬ সালের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, ২০১৪ সালে ১৪,৩৩৯টি শূন্যপদ ছিল। অন্য দিকে, আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত ও বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁদের মক্কেলের করা মামলার সঙ্গে মূল মামলা যুক্ত। তাই ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর থেকে সেই সামলার ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ৭ অগস্ট বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচর্য কমিশনের দ্রুত শুনানির আর্জিকে কোনও মান্যতা দেয়নি। পরবর্তী শুনানি কবে, তা এখনও জানানো যায়নি। ৭ অগস্টের নির্দেশের ওপর এবার প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ চেয়েছে কমিশন। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এই নিয়োগে প্রচুর অনিয়ম রয়েছে। তাই গোটা প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের প্রয়োজন।
আরও পড়ুন- করোনায় মৃত ‘প্রদীপ ডাক্তারে’র বিল ১৮ থেকে ৩.৬০ লক্ষ টাকা কমালো মেডিকা
উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগকে ঘিরে প্রচুর মামলা হয়েছে। এখনও ১,৯৭৯টি পৃথক পৃথক মামলা বিচারাধীন। ২০১৬ সালে যে পরিমাণ ফাঁকা পদ ছিল, এখন তার সংখ্যাটা বেড়েছে। প্রায় ৫০০১টি শূন্যপদ বেড়েছে। অন্যদিকে, এসএসসি নতুন করে কোনও প্রক্রিয়া শুরু করতে পারছে না। এসএসসির নিয়ম অনুযায়ী একটি প্রক্রিয়া শেষ না করে নতুন কোনও প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে না। গত ১৬ আগস্ট শূন্যপদের সংখ্যা ঘোষণা করে কমিশন৷ সেখানে সাফ উল্লেখ করা হয়, ১৪৩৩৯ শূন্যপদে নিয়োগ হবে৷ এরপর গত ১১ নভেম্বর (Memo No.১১২৭/৬৭২৩/CSSC/ESTT/২০১৯) বিজ্ঞপ্তি জারি করে স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের ‘সম্ভাব্য’ শূন্যপদের তালিকা ঘোষণা কর হয়৷ আইনগত কারণে বিজ্ঞপ্তি জারি করে ‘সম্ভাব্য’ শূন্যপদের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে৷ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পার্শ্বশিক্ষকদের ১০ শতাংশ সংরক্ষণ বাদে ‘সম্ভাব্য’ শূন্যপদের সংখ্যা ১৪ হাজার ৮৮টি৷ ‘সম্ভাব্য’ মোট শূন্যপদ ১৪ হাজার ৩৩৯টি৷ এবার সেই শূন্যপদ বাড়িয়ে ১৯,৩৪০টি পদে নিয়োগের আর্জি জানানো হয়েছে৷