আমরা মুক্তি চাই, দয়া করে নিয়োগ করুন! TET বিদ্রোহে উত্তাল নেটপাড়া

আমরা মুক্তি চাই, দয়া করে নিয়োগ করুন! TET বিদ্রোহে উত্তাল নেটপাড়া

 

কলকাতা: একদিকে করোনা নিয়ে সমস্যা ক্রমেই জটিল হচ্ছে। অন্যদিকে বেকারত্বের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চাইছেন রাজ্যের প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণ ও ডিএলএড প্রশিক্ষিত প্রার্থীরা৷ দীর্ঘ বেকারত্বের যন্ত্রণা  ঘোচাতে এবার বাড়ি থেকে প্রতিবাদের ঝড় তুলতে শুরু করলেন বাংলার কয়েক হাজার হবু শিক্ষক৷ দাবি একটাই, স্বচ্ছ ভাবে হোক দ্রুত নিয়োগ৷ পশ্চিমবঙ্গ প্রাইমারি শিক্ষক চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের ডাকা প্রথমিকে শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে বাড়ি থেকে পোস্টার বিদ্রোহে সামিল কয়েক হাজার চাকরিপ্রার্থী৷

চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের দাবি, প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার দিন অবিলম্বে ঘোষণা করা হোক৷ নিয়োগ হোক স্বচ্ছ ভাবে৷ মূলত, এই দুই দাবির ভিত্তিতে বাড়ি থেকে নিজেদের দাবি কাগজে লিখে ছবি-সহ নিজেদের ফেসবুক ওয়াল থেকে শুরু করে গোটা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে৷ আজ সকাল থেকে নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে ফেসবুকে সবর হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাইমারি শিক্ষক চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের প্রতিনিধিরা৷

কিন্তু, হঠাৎ কেন এত বিদ্রোহ? পিছনে রয়েছে বেশ কিছু উদাসীনতা৷ পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫ সালের পর এই রাজ্যে টেট বা টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট নেওয়া হয়৷ ২০১৭ সালে অক্টোবরে টেটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলেও এখনও শূন্যপদ জানানো দূর, কবে হবে পরীক্ষা, তা এখনও জানানো হয়নি৷ উল্টে পরীক্ষার দিনক্ষণ জানানোর দাবিতে হাইকোর্টে দায়ের হয়েছে মামলা৷ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ থমকে থকায় চূড়ান্ত ক্ষোভ জমেছে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে৷ পরীক্ষার জন্য টাকা খরচ করে আবেদন করার ৩ বছর পরও নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় যে ক্ষোভ রয়েছে নতুন চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে, তেমন ক্ষোভ রয়েছে টেন উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যেও৷

চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে প্রথমে প্রাথমিক টেট নোটিফিকেশন হয় শুধুমাত্র ডিএলএড প্রশিক্ষিতদের জন্য৷ আবেদন জমা নেওয়ার পর্ব শুরু হতেই ২০১৭ সালের ডিএলএড প্রশিক্ষিতরা আন্দোলন করেন, তাঁদেরও পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার জন্য৷ ফলে ওই বছর নভেম্বর মাসে ফের পোর্টাল খুলে আবেদন শুরু হয়৷ কিন্তু ২০১৮ সালে শিক্ষামন্ত্রী জানায়, দ্রুত পরীক্ষা হবে৷ কিন্ত পরীক্ষা হয়নি৷  ৩ বছর সময় পেরিয়ে গেলেও পরীক্ষা হয়নি৷ গত ৩ বছর ধরে প্রাইমারি টেট পরীক্ষার দিন ঘোষণা না করায় এবং শিক্ষক নিয়োগ বঞ্চনা ও যন্ত্রনার প্রতিবাদে আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু প্রতিবাদ৷

২০১৫ সালে প্রাথমিক টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর কেউ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, কারও আগেই ছিল৷ ডিএলএড প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণদের সংখ্যা প্রায় ১,২০০৷ তাঁদের দাবি, তিনবছর আগে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘যাঁরা টেটে উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাঁরা যদি প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করেন, তাহলে তাঁদের ধাপে ধাপে নিয়োগ করা হবে!’ এই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অনেকেই অর্থকষ্টের মধ্যেও ডিএলএড প্রশিক্ষণ নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন৷ কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি গত তিনবছরে পূরণ করেনি সরকার৷ যোগাযোগ করে হয়েছে শিক্ষা দফতরেও৷ কিন্তু তাও কোনও সুরাহা পাননি চাকরিপ্রার্থীরা৷ করোনার জেরে বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতিতে একপ্রকার নিরুপায় হয়ে ইতিমধ্যেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ফেসবুক পোস্টে কমেন্ট করে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন তাঁরা৷ কিন্তু, তাতেও মেলেনি সমাধান৷ উল্টে কমেন্ট করার অপশনটা ফেসবুকে নিষ্ক্রিয় করে রাখার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে৷ এবার দীর্ঘ দিনের যন্ত্রণা, শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন, বেকারত্বের যন্ত্রণা কাটাতে নতুন করে বিদ্রোহ ঘোষণা চাকরিপ্রার্থীদের৷ ২০১৫ প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণ, ২০১৫-২০১৭, ২০১৬-২০১৮, ২০১৭-২০১৯ বর্ষের ডিএলএড প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত চাকরিপ্রার্থীও নিয়োগের দাবি তুলেছেন৷

২০১৪ টেট উত্তীর্ণ, ২০১৫-২০১৭ ডিএলএড প্রশিক্ষিত প্রার্থীদের তরফে শংকর প্রসাদ খাঁ ও স্বদেশ ঘোষ জানিয়েছেন যে, “বাংলার চাকরিপ্রার্থীদের নিয়ে বর্তমান সরকারের ভূমিকা খুবই হতাশাজনক৷ বর্তমান সরকার বেকারদের প্রতি সহানভূতিশীল নয়৷ কীভাবে নিজেদের গদি ধরে রাখবেন, সেই কৌশল নিয়ে ব্যস্ত৷ ক্লাবগুলিকে লক্ষ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হচ্ছে৷ সরকারি কর্মচারীদের বোনাস বাড়ানো হচ্ছে৷ অথচ যারা প্রাথমিকে টেট পাশ করে ও প্রশিক্ষণ নিয়েও বেকারত্বের জ্বালায় তাঁদের দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন৷ তাদের প্রতি সরকারের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই৷”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *