কলকাতা: মঙ্গলবার বিকাশ ভবনে আধিকারিকদের ডেকে বৈঠকে বসেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী৷ শিক্ষক নিয়োগে স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকারকে কড়া ভাষায় ধমকও দেন শিক্ষামন্ত্রী৷ অবিলম্বে পড়ে থাকা নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার নির্দেশও দেন৷ বেঁধে দেন চূড়ান্ত সময়সীমা৷ শিক্ষামন্ত্রীর ধমকের পর রাতারাতি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্কুল সার্ভিস কমিশন৷ উচ্চ প্রাথমিকে তৃতীয় দফার ভেরিফিকেশনের বিজ্ঞপ্তি জারি হলেও নয়া বিভ্রাটের জেরে চূড়ান্ত সমস্যায় চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷
দীর্ঘ তালবাহানা পর অবশেষে প্রকাশিত হয়েছে উচ্চ প্রাথমিকের তৃতীয় দফার ভেরিফিকেশনের বিজ্ঞপ্তি৷ কমিশনের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, আগামী মঙ্গলবার চার জুন উচ্চ প্রাথমিকের তৃতীয় দফার চাকরিপ্রার্থীদের নথি যাচাই করা হবে৷ পরে, বৃহস্পতিবার আরও একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কমিশনের তরফে জানানো হয়, আজ অর্থাৎ শুক্রবার থেকে তৃতীয় দফার ভেরিফিকেশনের জন্য ইন্টিমেশন লেটার ডাইনলোড করতে পারবেন চাকরিপ্রার্থীরা৷
বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তা জানানো হলেও কমিশনের ওয়েবসাইট বিভ্রাটের জেরে জেরে ইন্টিমেশন লেটার ডাইনলোড করতে পারছেন না চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ কমিশনের সাইট খুলতে কোনও সমস্যা না হলেও ইন্টিমেশন লেটার ডাইনলোড করার লিঙ্কে ক্লিক কললেই দেখা যাচ্ছে ‘৫০০ এরর’৷ সার্ভাস সংক্রান্ত সমস্যা হলে গোটা সাইটাই খুলত না৷ কিন্তু, কমিশনের সাইট খুললেও কেন নির্দিষ্ট লিঙ্ক খুলছে না, তা নিয়ে শুরু হয়েছে ধোঁয়াশা৷ খুলছে না এই লিঙ্কটি- http://wbcssc.net/phase3.php
ইতিমধ্যেই প্রথম ও দ্বিতীয় দফা মিলিয়ে উচ্চ প্রথমিকে ভেরিফিকেশনের ডাক পেয়েছিলেন প্রায় ২৩ হাজার চাকরিপ্রার্থী৷ ১৩ হাজার ৮০টি শূন্যপদের জন্য গেজেট মেনে ১:৪:৪ অনুপাতে ওয়েটিং প্রার্থীদের জন্য তৃতীয় দফার ভেরিফিকেশনে চাকরিপ্রার্থীদের ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন৷ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তৃতীয় দফায় প্রায় ১০ হাজার প্রার্থীকে ডাকা হবে পারে বলে কমিশন সূত্রে খবর৷
২০১৫ সালে ১৬ আগস্ট আপার প্রাইমারির শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা গ্রহণ করে স্কুল সার্ভিস কমিশন৷ এক বছর পর ২০১৬ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ফল প্রকাশ করে৷ আরও দু’বছর পর ২০১৮ সালে চাকরি-প্রার্থীদের ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশনের জন্য তালিকা প্রকাশ করা হয়৷ এরপর ২০১৯-এ ফেব্রুয়ারি লাগাতার আন্দোলন-লাঠিচার্জ-গ্রেপ্তারির পর কার্যত বাধ্য হয়ে ভেরিফিকেশনের নোটিস প্রকাশ করে কমিশন৷ ভোটের মধ্যে তৃতীয় দফার ফেরিফিকেশন করার কথা কমিশনের তরফে জানানো হলেও তা করা সম্ভব হয়নি৷ ভোট শেষ হতেই এবার নতুন উদ্যোগে কাজ শুরু কমিশনের৷
গত মঙ্গলবার শিক্ষাদপ্তরের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ অবিলম্বে পড়ে থাকা নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার নির্দেশ শিক্ষামন্ত্রীর৷ বেঁধে দিলেন চূড়ান্ত সময়সীমা৷ একই সঙ্গে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী৷ এদিন দুপুরে বিকাশ ভবনে শিক্ষা দপ্তরের কর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন শিক্ষামন্ত্রী৷ সেখানেই এসএসসির কাজ দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী৷
বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী জানান, এসএসসির বকেয়া নিয়োগ জুনের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷ সূত্রের খবর, নমম-দ্বাদশের ওয়েটিংদের কাউন্সেলিং ও অনশনরত সফল চাকরিপ্রার্থীদের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়৷ আজ দুপুরেই এসএসএসির অনশনরত চাকরিপ্রার্থীদের সমস্যা সমাধানে গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটি রিপোর্ট জমা দেয় বিকাশ ভবনে৷ এই রিপোর্ট নিয়েও দীর্ঘ আলোচনা হয়৷ একই সঙ্গে উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগ শুরু করতেও নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী৷ নিয়োগ প্রক্রিয়া ফেলে রেখা যাবে না বলেও এসএসসির চায়েরম্যানকে ধমক দেন শিক্ষামন্ত্রী৷ পুরানো নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জারি করবে স্কুল সার্ভিস কমিশন৷ সম্ভবত জুলাইতেই জারি হবে বিজ্ঞপ্তি৷
অন্যদিকে, শিক্ষা সংক্রান্ত মতামত চাইতে গিয়েও বেশ খানিকটা বিড়ম্বনায় পড়েন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপধ্যায়৷ গত সোমবার চারটে নাগাদ নিজের ফোসবুক প্রোফালে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে মতামত জানতে চান শিক্ষামন্ত্রী৷ কিন্তু, শিক্ষা নিয়ে মতামত জানতে চাওয়া হলেও নেটিজেনদের প্রশ্নবাণ কার্যত বিড়াম্বনায় পড়লেন শিক্ষামন্ত্রী৷
প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি, স্কুলশিক্ষকদের সামগ্রিক ভাবে বন্ধ হয়ে থাকা জেনারেল ট্রান্সফার চালু করা, নিয়মমতো এসএসসি, প্রাইমারি টেট পরীক্ষা নেওয়ার মতো একাধিক অনুরোধ করেছেন বহু মানুষ৷ শুধু তাই নয়, শিক্ষক নিয়োগে জোর না দিয়ে স্কুল থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মান ও মেধা দেখে নিয়োগ করা দরকার আছে বলেও শিক্ষামন্ত্রীকে পরামর্শ দেন বহু মানুষ৷