বেলদা: ভোট কর্মীর দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে নারায়ণগড় ব্লকের বিডিওকে ডেপুটেশন শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের বেলদা শাখার৷
বৃহস্পতিবার বিকালে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের বেলদা আঞ্চলিক কমিটির উদ্যোগে পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় ব্লকের বিডিও-র কাছে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ভোট কর্মীদের সুনিশ্চিত নিরাপত্তা দাবি জানিয়ে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। বিডিও প্রতিটি দাবি সঙ্গে সহমত পোষণ করেন৷ এবিষয়ে তাঁর পক্ষে যা যা করণীয় তিনি উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলেও আশ্বাস দেন। এছাড়া এই দাবিগুলি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেবেন বলেও জানান৷
ডেপুটেশনে উপস্থিত ছিলেন বেলদা কলেজের অধ্যাপক বাসুদেব ধাড়া, আঞ্চলিক কমিটির নেতৃত্ব শিক্ষক দীপক কুমার গিরি, দীপঙ্কর তেওয়ারি, যুগ্ম সম্পাদক শিক্ষক শ্যামল দে এবং প্রতাপ পন্ডা, বিশ্বজিৎ পাহাড়ি, অনিন্দ্য সুন্দর পাল প্রমূখ। কমিটির যুগ্ম সম্পাদক প্রতাপ পন্ডা ও শ্যামল দে বলেন, ‘‘আমরা বডিও-র কাছে আমাদের দাবি তুলে ধরেছি। তিনি আমাদের মৌখিক কিছু আশ্বাস দিয়েছেন কিন্তু আমরা জানিয়েছি শুধু মৌখিক আশ্বাস নয় বাস্তবের জায়গায় আমরা তা দেখতে চাই। না হলে আমরা প্রয়োজনে নির্বাচনের সময়ে আন্দোলন গড়ে তুলব।’’
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট কর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বহু ভোট কর্মী ভোট কেন্দ্রে শারীরিক এবং মানসিক হেনস্তার শিকার হন। রায়গঞ্জে রহতপুর হাই মাদ্রাসার তরুণ শিক্ষক রাজকুমার রায় প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিখোঁজ এবং প্রায় ২২ ঘণ্টা পরে রেল লাইনের উপর খন্ড বিখন্ড দেহ উদ্ধার হয়৷ এরপরই গোটা রাজ্য জুড়ে শিক্ষক শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। তারই ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠেছিল এই ঐক্য মঞ্চ। ঐক্য মঞ্চের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন স্তরে ডেপুটেশন ও বিক্ষোভ সংগঠিত করা হয় আগামী লোকসভা নির্বাচনে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত না করা হলে গোটা রাজ্য জুড়ে ভোট কর্মী হিসাবে তারা তাদের দায়িত্ব বয়কট করার হুমকিও দিয়েছিলেন। রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে আঞ্চলিক কমিটিও গড়ে ওঠে।
ঐক্য মঞ্চের তরফে বিডিওকে দেওয়া ডেপুটেশনের দাবিগুলি তুলে ধরা হল-
- আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণের জন্য বুথ পিছু প্রিজাইডিং অফিসারের সহিত ৬ জন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী সহ অন্যান্য বাহিনী দিয়ে ভোটার এবং ভোট কর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।
- স্পর্শকাতর বুথগুলিতে দ্বিগুণ হারে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবস্থা রাখতে হবে।
- ভোট গ্রহণের শেষে ভোট বাক্স জমা দেওয়ার পর রিলিজ অর্ডার দিয়ে দিলেই নির্বাচন কমিশনের সমস্ত দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। ভোট গ্রহণের জন্য ভোট কর্মীদের বাড়ি থেকে বাহির হওয়ার পর থেকে বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত তাঁর জীবনের সমস্ত নিরাপত্তার ভার নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে।
- ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে ভোট কর্মীদের যথাযথ নিরাপত্তাসহ থাকা, খাওয়া এবং শৌচালয়ের যথেষ্ট ব্যবস্থা রেখে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করতে হবে।
- প্রিজাইডিং অফিসারের অভিযোগের ভিত্তিতে সেক্টর অফিসার বা রিটার্নিং অফিসার যথাযথ ভূমিকা পালন না করে প্রিজাইডিং অফিসারকে অনৈতিক কাজে বাধ্য বা প্ররোচিত করলে নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনকে তৎক্ষণাৎ উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
- শুধু মৌখিক আশ্বাস নয়, একজন ভোটকর্মী বাড়ি থেকে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে পৌঁছানো এবং ভোটিং মেটেরিয়ালস জমা দেওয়ার পর বাড়ি ফেরার জন্য উপযুক্ত যানবাহন যথেষ্ট পরিমাণে রাখতে হবে।
- ভোটকর্মীদের হতাহতের ঘটনায় তৎক্ষণাৎ উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। যে কোন ভোটকর্মী অসুস্থ বা আহত হলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ সহ চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে।
- প্রতিবন্ধীদের ভোট কর্মী হিসাবে নিয়োগ করে তাঁদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে।