কলকাতা: একদিকে করোনা নিয়ে সমস্যা ক্রমেই জটিল হচ্ছে। অন্যদিকে বেকারত্বের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চাইছেন রাজ্যের প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণ ও ডিএলএড প্রশিক্ষিত প্রার্থীরা। ২০১৫ সালের টেট উত্তীর্ণ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীদের ধীরে ধীরে নিয়োগ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অথচ আজও তাঁরা বয়ে বেড়াচ্ছেন বেকারত্ব। একদিকে করোনা, অন্যদিকে চরম বেকারত্বের যন্ত্রণা৷ জোড়া সমস্যার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এবার বাড়ি থেকে প্রতিবাদের ঝড় তোলার ডাক দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ প্রাইমারি শিক্ষক চাকরিপ্রার্থী মঞ্চ৷
চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের দাবি, প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার দিন অবিলম্বে ঘোষণা করা হোক৷ নিয়োগ হোক স্বচ্ছ ভাবে৷ মূলত, এই দুই দাবির ভিত্তিতে বাড়ি থেকে নিজেদের দাবি কাগজে লিখে ছবি-সহ নিজেদের ফেসবুক ওয়াল থেকে শুরু করে গোটা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার ডাক দেওয়া হয়েছে৷ আগামীকাল ১৫ মে শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নেটপাড়ায় বিদ্রোহ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ প্রাইমারি শিক্ষক চাকরিপ্রার্থী মঞ্চ৷ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে চূড়ান্ত প্রস্তুতি৷
কিন্তু, হঠাৎ কেন এত বিদ্রোহ? পিছনে রয়েছে বেশ কিছু উদাসীনতা৷ পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫ সালের পর এই রাজ্যে টেট বা টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট নেওয়া হয়৷ ২০১৭ সালে অক্টোবরে টেটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলেও এখনও শূন্যপদ জানানো দূর, কবে হবে পরীক্ষা, তা এখনও জানানো হয়নি৷ উল্টে পরীক্ষার দিনক্ষণ জানানোর দাবিতে হাইকোর্টে দায়ের হয়েছে মামলা৷ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ থমকে থকায় চূড়ান্ত ক্ষোভ জমেছে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে৷ পরীক্ষার জন্য টাকা খরচ করে আবেদন করার ৩ বছর পরও নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় যে ক্ষোভ রয়েছে নতুন চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে, তেমন ক্ষোভ রয়েছে টেন উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যেও৷
২০১৫ সালে প্রাথমিক টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর কেউ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, কারও আগেই ছিল৷ ডিএলএড প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণদের সংখ্যা প্রায় ১,২০০৷ তাঁদের দাবি, তিনবছর আগে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘যাঁরা টেটে উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাঁরা যদি প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করেন, তাহলে তাঁদের ধাপে ধাপে নিয়োগ করা হবে!’ এই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অনেকেই অর্থকষ্টের মধ্যেও ডিএলএড প্রশিক্ষণ নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন৷ কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি গত তিনবছরে পূরণ করেনি সরকার৷ যোগাযোগ করে হয়েছে শিক্ষা দফতরেও৷ কিন্তু তাও কোনও সুরাহা পাননি চাকরিপ্রার্থীরা৷ করোনার জেরে বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতিতে একপ্রকার নিরুপায় হয়ে ইতিমধ্যেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ফেসবুক পোস্টে কমেন্ট করে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন তাঁরা৷ কিন্তু, তাতেও মেলেনি সমাধান৷ উল্টে কমেন্ট করার অপশনটা ফেসবুকে নিষ্ক্রিয় করে রাখার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে৷ এবার দীর্ঘ দিনের যন্ত্রণা, শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন, বেকারত্বের যন্ত্রণা কাটাতে নতুন করে বিদ্রোহ ঘোষণা চাকরিপ্রার্থীদের৷ ২০১৫ প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণ, ২০১৫-২০১৭, ২০১৬-২০১৮, ২০১৭-২০১৯ বর্ষের ডিএলএড প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত চাকরিপ্রার্থীও নিয়োগের দাবি তুলেছেন৷ – ফাইল ছবি৷