কলকাতা: রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতন পেনশন সহ প্রশাসনিক যাবতীয় খরচের আদান-প্রদান সম্পূর্ণ অনলাইন পদ্ধতিতে করা বাধ্যতামূলক করেছে রাজ্যের অর্থ দপ্তর। অস্থায়ী কর্মীদের বেতন, ভাতা সহ অফিস খরচের যাবতীয় বিল জমা দেওয়া ও অর্থ বরাদ্দ অনলাইন পদ্ধতিতেই করা হয়ে থাকে। কিন্তু কোন কারণে যদি অনলাইন বিল জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হয় তবে ছাড় দেওয়ার সংস্থান রয়েছে। সেইসব বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে যাতে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বা অফিস পরিচালনা দৈনন্দিন খরচ আটকে না যায় তার জন্য সাবেক পদ্ধতিতে ট্রেজারি এবং পে অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস দপ্তরগুলিতে বিল জমা করা এবং তার ভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দ করার সংস্থান রাখা হয়েছে। অনলাইন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকেই এই দু'রকম পদ্ধতি চলে আসছে। কিন্তু এবার অর্থ দপ্তরের একটি নির্দেশিকাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি।
দপ্তর সূত্রে খবর, এই নির্দেশিকা কার্যকর হলে অস্থায়ী কর্মচারীদের বেতন ভাতা থেকে শুরু করে টেলিফোন বিল বিদ্যুতের বিল এর মত অফিস পরিচালনা দৈনন্দিন খরচের টাকা আটকে যেতে পারে সে ক্ষেত্রে ব্যাপক সমস্যার মধ্যে পড়বে রাজ্য সরকারি দপ্তরগুলি।
কেন এরকম পরিস্থিতি তৈরি হল? অর্থ দপ্তরের কর্তাদের ব্যাখ্যা, এই যাবতীয় পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পিছনে রয়েছে রাজ্যের অর্থ সচিব হরেকৃষ্ণ দ্বিবেদী একটি নতুন নির্দেশিকা। সেই নির্দেশিকায় ২০২০জানুয়ারি থেকে চলতি অর্থবছরের শেষ অর্থাৎ ৩১ মার্চ পর্যন্ত রাজ্য সরকারি দপ্তর গুলির জন্য অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে নতুন কয়েকটি বিধি চালু করা হয়েছে। অর্থ কর্তারা জানিয়েছেন বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অনলাইন বিল জমা দেওয়ার পদ্ধতি তে ছাড় দিয়ে এর আগেও এরকম নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। কিন্তু এবার সেই ক্ষেত্রে র সংখ্যা অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে। যা ঘিরে তৈরি হয়েছে আশঙ্কার মেঘ।
কি সেই আশঙ্কা? অর্থ দপ্তরের এক শীর্ষ আধিকারিক জানান অনলাইন পদ্ধতিতে ছাড় দিয়ে গত বছরের ১১ই জুলাই একটি নির্দেশিকা জারি করেন অর্থসচিব। সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল সময় মত অনলাইনে অর্থ দপ্তরের 'ই বন্টন' পদ্ধতিতে ট্রেজারি এবং পেমেন্ট ও একাউন্ট দপ্তরে জমা না পড়ায় যাতে দপ্তরগুলো অসুবিধায় না পরে তাই কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে এ বিষয়ে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। সেখানে সাবেক পদ্ধতিতে দপ্তর গুলিকে অর্থ বরাদ্দ করতে পারবেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা।
জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক এর জন্য ওই ছাড় দেওয়া হয়। যেসব ক্ষেত্রে গুলি এই ছাড় এর আওতায় এসেছিল তার মধ্যে ছিল সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ গুলির শিক্ষানবিশ ডাক্তার, হাউস স্টাফ, প্রশিক্ষণ রত নার্স,স্নাতকোত্তর ডাক্তারি পড়ুয়াদের স্টাইপেন্ড এবং ভাতা, আইসিডিএস কর্মীদের ভাতা, হাসপাতালে ad-hoc ভিত্তিতে নিযুক্ত চিকিৎসকদের বেতন, আইসিডিএস কর্মীদের বেতন ও ভাতা, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে এজেন্সির মাধ্যমে নিযুক্ত নিরাপত্তা কর্মীদের বেতন,হাসপাতালের রোগীদের খাবার এবং অক্সিজেন যোগান এর খরচ, সরকারি দপ্তর গুলির টেলিফোন ও বিদ্যুতের বিল, ক্যাশলেস স্বাস্থ্য বীমার আওতায় থাকা কর্মীদের জন্য বরাদ্দ টাকা, এলটিসি খরচ ইত্যাদি।
কিন্তু জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের শেষ ত্রৈমাসিকের জন্য সম্প্রতি নতুন নির্দেশিকা জারি করেছেন অর্থসচিব। ৩রা জানুয়ারি জারি হওয়া ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে সাবেক পদ্ধতিতে শুধুমাত্র আইসিডিএস কর্মী, ad-hoc ভিত্তিতে কাজ করা চিকিৎসক , হাসপাতালে দৈনন্দিন রোগীদের খাওয়া, অক্সিজেন সরবরাহ খরচ এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ স্কিম এর আওতায় থাকা কর্মীদের চিকিৎসার অগ্রিম খর চের বিল মেটানোর ক্ষেত্রেই ছাড় দেওয়া হবে।
অর্থ সচিবের এই নতুন নির্দেশিকা মাথায় হাত পড়েছে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্তাদের। তারা বলছেন সরকারি নির্দেশ মত দপ্তরের এর যাবতীয় কাজকর্ম অনলাইনে চালু করা হলেও কর্মী ঘাটতি সহ বিভিন্ন কারণে কিছু ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। সে ক্ষেত্রে পুরনো পদ্ধতিতে বিল জমা দেওয়ার যে রীতি এতদিন চালু ছিল তার ফলে কোন কারণে অনলাইনে বিল জমা না করতে পারলেও অসুবিধা হতো না। কিন্তু নতুন নির্দেশিকা বহু ক্ষেত্র ছাড় থেকে বাদ পড়ায় অস্থায়ী কর্মীদের বেতন ভাতার যোগান তো বটেই এমনকি দৈনন্দিন অফিস পরিচালনার খরচ যোগানো মুশকিল হয়ে যাবে বলে তারা মনে করছেন। বেতন ও ভাতা আটকে গেলে সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়বেন রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত বহু সংখ্যক অস্থায়ী কর্মী।তাই অর্থ সচিবকে এই নির্দেশিকা পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছেন তারা।