জনপ্রতিনিধি ‘কোটা’য় আর হবে না কোনও চাকরি! স্বজনপোষণ রুখতে বিলম্বিত বোধোদয় পুর দফতরের!

জনপ্রতিনিধি ‘কোটা’য় আর হবে না কোনও চাকরি! স্বজনপোষণ রুখতে বিলম্বিত বোধোদয় পুর দফতরের!

কলকাতা: নজরে নির্বাচন৷ বাংলা ভোটের আগে দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি তুলতে নয়া উদ্যোগ ১২৫টি পুরসভা ও কর্পোরেশনে৷ সরকারি চাকরিতে এতদিন যে স্বজনপোষণ হয়ে আছে, তা কার্যত স্বীকার করে নিয়ে এবার ভুল শুধরে নেওয়ার মরিয়া চেষ্টা শাসক শিবিরে৷ নির্বাচনের আগে কর্মী নিয়োগকে কেন্দ্র করে যাঁতে কোনও কেলেঙ্কারির অভিযোগ বিরোধীরা তুলতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে এবার কোপ পড়তে চলেছে জনপ্রতিনিধিদের পরিবারে দেরার সরকারি চাকরি পাওয়া সুযোগ৷

ভোটের আগে সরকারি চারকির নিয়োগে যাতে কোনও ভাবেই স্বজনপোষণের অভিযোগ না ওঠে, তা নিশ্চিত করতে রীতিমতো নিয়োগে অনুমোদনকারী সংস্থাকে দিয়েই ‘ছাঁকনি’র কাজ করাতে চাইছে রাজ্য সরকার৷ পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের তরফে কড়া নির্দেশে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাজ্যের ১২৫টি পুরনিগম ও পুরসভার কোনওটিতেই এখন থেকে আর মেয়র থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান, পুর পরিষদের সদস্য কিংবা কাউন্সিলারের আত্মীয়রা কেউ চাকরি পাবেন না৷ বিষয়টি নিশ্চিত করতে ডিরেক্টরেট অব লোকাল বডিজকে বলা হয়েছে৷ কিন্তু, হতাৎ কেন এই নির্দেশ? বিরোধীদের প্রশ্ন, তাহলে কি পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর স্বীকার করে নিচ্ছে, একদিন নিয়োগের ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধা স্বজনপোষণ করে আসছিলেন? যদিও, এই অভিযোগ দীর্ঘ৷

সম্প্রতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠেছে  চুঁচুড়া পুরসভায়৷ পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে গোটা প্যানেল বাতিল করে দিয়েছিল পুর দফতর৷ এই ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে নবান্ন৷ গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ করতে তুলতে সংশ্লিষ্ট দফতরের নির্দেশ ঘিরেও প্রশ্ন তুলতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা৷ নির্দেশে সাফ জানিয়ে দেওয়া দেওয়া হয়েছে, পুরসভা বা পুরনিগমে কোনও জনপ্রতিনিধির পরিবার, আত্মীয়স্বজন আর চাকরি পাবেন না৷ নাম থেকে থাকে, সেই প্যানেল বাতিল হবে৷ শূন্যপদ সৃষ্টি সহ কর্মী সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ডিএলবিদের উপর৷ স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কোনও ক্ষেত্রেই রাজ্যের পুরসভাগুলিতে স্বজনপোষণ করা চলবে না৷ 

সংবাদমাধ্যমে রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, জনপ্রতিনিধির যদি তাঁদের আত্মীয়-স্বজনদের নিয়োগ করেন, তাহলে মানুষের মধ্যে খারাপ ধারণা তৈরি হয়৷ ফলে, এখন থেকে সিলেকশন কমিটিতে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের আত্মীয়রা চাকরি পাবেন না৷ মেয়রথেকে শুরু করে চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলারের বাড়ির লোকজন চাকরি পেলে বা প্যানেলে নাম থাকলে, তা বাতিল হয়ে যাবে বলেও জানিয়েছেন পুরমন্ত্রী৷ 

একাধিক পুরসভায় নেতাদের ছেলে, ভাই, ভাইপো, পুত্রবধূই নন, দূরসম্পর্কের আত্মীয়ও চাকরি পেয়েছেন৷ বহাল তবিয়তে চাকরিও করছেন, সঙ্গে দলও৷ এই অভিযোগ নতুন নয়৷ অনেক কাউন্সিলার আবার নিজের পদ ছেড়ে পুরসভার চাকরিতেও যোগ দিয়েছেন৷ আর তাতেই বাদ পড়েছে সাধারণ চাকরিপ্রার্থীরা৷ বঞ্চিত প্রার্থীদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে চূড়ান্ত ক্ষোভ৷ এবার সেই ক্ষোভ মেটাতে স্বজনপোষণের বিরুদ্ধে নয়া নির্দেশ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ৷ যদিও, আগেই নবান্নের তরফে তৃতীয় দফায় জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগামী বছর মার্চ পর্যন্ত কোনও নিয়োগ হবে না, নিয়োগের জন্য প্রয়োজন অর্থ দফতরের অনুমতি৷ এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন আগেই প্রকাশ করেছে আজ বিকেল ডট কম৷ এবার এই পরিস্থিতিতে আদৌও পুরসভাগুলিতে নিয়োগ তো, প্রশ্ন চাকরিপ্রার্থীদের অন্দরে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two + 9 =