কলকাতা: সদ্য দাবি মিটিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা৷ যোগ্যতা আনুযায়ী বেতন বৃদ্ধির দাবি না মিলটেও গ্রেড-পে বৃদ্ধির ঘোষণায় আপাতত সন্তুষ্ট প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ৷ প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতট জট কাটতে না কাটতেই এবার সর্বভারতীয় বেতন কাঠামো টিজিএ স্কেলের দাবিতে রাজপথে নামলেন বৃহত্তর গ্র্যাজুয়েট টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের কয়েক হাজার শিক্ষক৷ এবার শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়ে ঐক্যবন্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার উপর সওয়াল করলেন শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী৷
শুক্রবার গ্র্যাজুয়েট টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের আন্দোলন মঞ্চে দাঁড়িয়ে কিংকরবাবু বলেন, ‘‘শিক্ষকদের এত স্তর৷ আমাদের রাজ্যে প্রতিটি স্তরের শিক্ষকদের চূড়ান্ত সমস্যা রয়েছে৷ পার্শ্ব শিক্ষক, প্রাথমিক শিক্ষক, এসএসকে, এমএসকে, কম্পিউটার শিক্ষকরা বঞ্চিত৷ তারা তাদের জায়গা থেকে আন্দোলন সংগঠিত করেছেন৷ সেই আন্দোলন ন্যায্য দাবিতে হলে আমরা তাঁদের পাশে গিয়ে দাঁড়াবো৷ ফলে আপনারা যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন আমরা আগামী দিনেও আপনাদের আন্দোলনের পাশে থাকব৷’’
তাঁর পরামর্শ, ‘‘একটা কথাই বলে রাখি৷ এই একটা মিছিল বা একটা সমাবেশ নয় এই সরকারকে কিন্তু টলানো যাবে না৷ আগামী দিনে বৃহৎ আন্দোলন প্রয়োজন৷ আমাদের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই৷ কে কোন স্কেল পান, তা নিয়ে বিভেদ প্রয়োজন নেই৷ আমরা সকলেই শিক্ষক৷ শিক্ষক সত্ত্বা নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে৷ প্রত্যেকে প্রত্যেকের পাশে দাঁড়াতে হবে আমাদের৷ কারণ আমরা শিক্ষক৷ আমরা আলাদা আলাদা কেউ নয়৷ যেখানেই বঞ্চনা, সেখানেই আমার মাথা তুলে তাদের পাশে দাঁড়াবো৷’’
রাজ্য সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘আজ গোটা পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষকদের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত৷ লোকসভা ভোটের আগে নিরাপত্তার দাবিতে যে আন্দোলন হয়েছিল, আপনারা সবাই সমর্থন করেছিলেন৷ সবাইকে নিয়ে আন্দোলন হয়েছিল৷ সেই ঐক্যবন্ধ আন্দোলন শাসক ও নির্বাচন কমিশনকে বাধ্য করা হয়েছিল, মাথা নোয়াতে৷ আর আপনারাই পারবেন, ন্যায্য আন্দোলনে দাবি আদায় করতে৷ ঐক্যবন্ধ আন্দোলন হলে সাফল্য আসবে৷ ফলে, আমাদের তীব্র আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে৷’’
শিক্ষকদের মর্যাদা আজ মিটিতে মিশেছে, প্রতিবাদে জারি বিদ্রোহ
শিক্ষকদের মর্যাদা আজ মিটিতে মিশেছে, প্রতিবাদে জারি বিদ্রোহ
Gepostet von Aaj Bikel আজ বিকেল am Freitag, 30. August 2019
STEA-এর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার বলেন, “BGTA-এর আন্দোলন দল-মত নির্বিশেষে সংগঠিত হয়েছে৷ কিন্তু সংগঠিত শিক্ষকদের এই আন্দোলনে কোনও রাজনৈতিক দল যাতে কোনও ভাবেই প্রভাবিত করতে না পারে সে ব্যাপারে সকলকে খেয়াল রাখতে হবে৷ দাবি যেহেতু যথার্থ তাই ঐক্যবদ্ধ ধারাবাহিক আন্দোলনের মাধ্যমেই একদিন দাবি আদায় হবেই৷ শিক্ষা ও শিক্ষকদের স্বার্থে যে কোনও আন্দোলনে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থকে দূরে রেখে দীর্ঘদিন ধরে STEA আন্দোলন পরিচালনা করে আসছে৷ তাই এই আন্দোলনকে আমরা কুর্ণিশ জানাই৷’’
অনিমেষবাবু আরও বলেন, ‘‘আগামী ৬ সেপ্টেম্বর পাশ গ্র্যাজুয়েট টিচারদের TGT স্কেল, D.El.Ed ডিগ্রিধারীদের ইনক্রিমেন্ট প্রদানের অর্ডার, আবেদনের ভিত্তিতে বদলি চালু, গণতান্ত্রিক শিক্ষক আন্দোলনে পুলিশি জুলুম বন্ধ, প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ ফেল চালু, B.Ed. জনিত কারণে লস্ট ইনক্রিমেন্টের এরিয়ার প্রদান সহ বিভিন্ন দাবিতে আমরা সুবোধ মল্লিক স্কয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত বিশাল মিছিল ও শিক্ষামন্ত্রী ও প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির কাছে ডেপুটেশনে যাব৷ ফলে দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের শিক্ষকদের কাছে আমরা এই মিছিলে শামিল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি৷’’
বৃহত্তর গ্র্যাজুয়েট টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে আজ রাজা সুবোধ মল্লিক স্কয়ারে বিশাল জয়ামেত করেন কয়েক হাজার শিক্ষক৷ ইতিমধ্যেই রাজা সুবোধ মল্লিক স্কয়ারে ভিড় জমেত শুরু করেন সকাল থেকে৷ বৃহত্তর গ্র্যাজুয়েট টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, টিজিটি স্কেল অনুযায়ী গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকদের বেতন কাঠামো যা হওয়ার কথা, তা তুলনায় অনেক কম পান বাংলার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা৷ পে-ব্রান্ড ৯ হাজার থেকে ৪০ হাজার ও গ্রেড-পে ৪ হাজার ৬০০ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও এখন বাংলার গ্র্যাজুয়েট শিক্ষক পান, পে-ব্রান্ড ৭ হাজার ১০০ থেকে ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা৷ সঙ্গে গ্রেড-পে ৪ হাজার ১০০ টাকা৷
এবিষয়ে বৃহত্তর গ্র্যাজুয়েট টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক সৌরেন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এনসিটিই নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষকদের দু’টি ভাগে বেতন দেওয়া হয়৷ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ও ট্রেনড গ্র্যাজুয়েট৷ মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের নির্ধারিত পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ও গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকদের সর্বভারতীয় বেতন কাঠামোর তুলনায় অনেক কম৷ এই নিয়ে বারংবার দরবার করা হলেও কোনও সমাধান হয়নি৷ আর তার জেরে আজ পথে নামেন তাঁরা৷ এদিনের এই সভায় হাজার শিক্ষক অন্দোলনে অংশ নেন৷