কলকাতা: প্যানেলে নাম আছে৷ কিন্তু, জোটেনি চাকরি৷ সুযোগ সুবিধা চলে যাচ্ছে অন্যদের হাতে। সব দেখেও চোখ বুজে থাকছে সরকার। এই পরিস্থিতিতে টানা ২৫ দিন অনশনের মাধ্যমে নিজেদের দাবি আদায়ের চেষ্টা করে চলেছেন প্রার্থীরা৷ টানা আন্দোলন চালাতে গিয়ে এখনও পর্যন্ত ৬০ জন চাকরিপ্রার্থী অসুস্থ হয়েছে পড়েছে৷ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অনশনে বসে ডেঙ্গু, রক্তআমাশা, গর্ভপাতের পর এবার মারণ রোগের মুখোমুখি চাকরি-প্রার্থীদের একাংশ৷ একদিকে, যখন চাকরির দাবিতে টানা অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন SSC-র চাকরিপ্রার্থীরা, ঠিক তখন বাংলার কর্মসংস্থান ইস্যুতে নয়া তথ্য পেশ করল তৃণমূল৷
২২ মার্চ, তৃণমূলের নিজস্ব ওয়েবসাইটে ‘কর্মসংস্থানে দেশের সেরা বাংলা’ বলে একটি প্রতিবেদন পেশ করা হয়েছে৷ প্রতিবেদনে বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরে বাংলাকে দেশের সেরা বলে উল্লেখ করেছে তৃণমূল৷ প্ররাশিত প্রতিবেদনে তৃণমূল সরকারের সাফল্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, ‘‘রাজ্যে বেকারত্বের হার কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ৷ ১০০ দিনের কাজে শ্রমদিবস সৃষ্টিতে দেশের মধ্যে বাংলা প্রথম। সাড়ে ৭ বছরে ১৯১ কোটিরও বেশি শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে৷ প্রতিটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থান বৃদ্ধি। সাড়ে ৭ বছরে প্রায় ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান৷ ‘উৎকর্ষ বাংলা’য় প্রতি বছর প্রায় ৬ লক্ষ যুবক-যুবতীকে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ। এদের বেশীরভাগই স্ব স্ব ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ পেয়েছেন প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার যুবক-যুবতীকে ‘যুবশ্রী প্রকল্পে’র সাহায্য৷ ‘যুবশ্রী ২ অর্পণ’ প্রকল্পে প্রতি বছর ৫০ হাজার যুবক-যুবতীকে ব্যবসার জন্য ১ লক্ষ টাকা করে সাহায্য৷ কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে সারা রাজ্যে ৫২৮টি ‘কর্মতীর্থ’৷
অন্যদিকে, টানা অনশন চালিয়ে SSC-র অনশন মঞ্চে বাসা বেঁধেছে মারণ রোগ৷ ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের সদস্য ডক্টর অনির্বাণ দত্ত শুক্রবার অনশন মঞ্চে গিয়েছিলেন চিকিৎসক হিসেবে খোঁজ নিতে। তিনি জানিয়েছেন, আন্দোলনকারী মহিলাদের শৌচালয় সংক্রান্ত সমস্যা তীব্র। ইতিমধ্যেই অনেকের শরীর বাসা বেঁধেছে ক্ষতিকর ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন। কারও কারও বুকেও বাসা বেঁধেছে ইনফেকশন। অনেকের চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। মহিলা-অনশনকারীদের অনেকেই রক্তাল্পতায় ভুগছেন। কোনও কোনও অনশনকারীর রক্তচাপ ভীষণ কম।
এসএসসি-র প্রার্থীদের অনশন আজ ২৫ দিনে পড়ল। অনেকেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বৃষ্টিতে ভিজে জ্বরেও ভুগছেন, মশার কামড়ে তাঁদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। শনিবার সকালেই অনশনমঞ্চে এসে চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গে দেখা করেছেন সিপিএম নেতা বিমান বসু, তাঁকে দেখেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন প্রার্থীদের অভিভাবকরা। তাঁদের দাবি, শিক্ষামন্ত্রীকে নয় মুখ্যমন্ত্রীকে গোটা বিষয়টি জানান বিমানবাবু, দিদিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনা হল আর তিনিই আমাদের ছেলেমেয়েদের দেখছেন না। এখনও যদি সচেতন না হন তাহলে আমরাই বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাব।
শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহার ইতিমধ্যে অনশন মঞ্চ থেকে ঘুরে গিয়েছেন, কবি শঙ্কঘোষ রাজ্যের ভাবি শিক্ষকদের দূরাবস্থার কথা শুনে কেঁদে ফেলেছেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে আলোচনার আশ্বাসও দিয়েছেন। অনশনকারীদের উদ্দেশ্যে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের যুগ্মসম্পাদক কীংকর অধিকারী বলেন, “অনশন মঞ্চে বিভিন্ন সংগঠন আসছে এবং সহানুভূতি জানিয়ে চলে যাচ্ছে।এ দিয়ে দাবি আদায় হবে না।এই আন্দোলনকে জয়ের দৌড় গোড়ায় পৌঁছাতে হলে দলমত নির্বিশেষে সমস্ত সংগঠনকে আহ্বান জানিয়ে বৃহৎ আন্দোলনের কর্মসূচি স্থির করতে হবে। সারা রাজ্যে সমস্ত স্কুলগুলির শূন্যপদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে।এই দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে ওয়েটিং লিস্টে থাকা সমস্ত এসএসসি চাকরি প্রার্থীরা শিক্ষকতার কাজে যোগ দিতে পারবেন।”
এই আবেদনে অনশনকারীরা আশ্বস্ত হয়েছেন, তাঁরা নিজেরা আলোচনা করে বিষয়টি স্থির করবেন বলে জানিয়েছেন।এদিন অনশন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সম্পাদক মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য অনামিকা চক্রবর্তী, সুলগ্না পাল, অফিস সম্পাদক অয়ন পাল। উপস্থিত ছিলেন রহতপুর হাই মাদ্রাসার লড়াকু প্রধান শিক্ষক শহিদুর রহমান, বিশিষ্ট কবি মন্দাক্রান্তা সেন, সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।