কলকাতা: ঢাকঢোল পিটিয়ে আগেই চালু হয়ে গিয়েছে ষষ্ঠ বেতন কমিশন৷ বেশ খানিকটা বেড়েছে সরকারি কর্মচারীদের বেতন৷ বিধি অনুযায়ী চলতি মাস থেকে আরও এক দফায় ৩ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পাবেন সরকারি কর্মচারীরা৷ কিন্তু ষষ্ঠ বেতন ও রোপা বিধি চালু হলে গেলেও এখনও মেলেনি মহার্ঘ ভাতা৷ এবার করোনা আবহে সরকারি কর্মচারীদের বহু প্রত্যাশিত মহার্ঘ ভাতা সংক্রান্ত মামলার রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে এবার নির্দেশ দিল ওয়েস্টবেঙ্গল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালে৷
মহার্ঘ ভাতা মামলায় ফের রাজ্য ট্রাইব্যুনালে বড়সড় ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার৷ এক ধাক্কায় উড়ে গেল রাজ্যের মহার্ঘভাতা রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি৷ রাজ্য স্টেট ট্রাইব্যুনালের তরফে আগের নির্দেশ বহাল রাখার হয়েছে৷ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাজ্যে পুনর্বিবেচনার রিভিউ পিটিশন মানা যাবে না৷ রাজ্যের রিভিউ পিটিশন খারি করে জানানো হয়েছে, রাজ্য সরকারকে দিতেই হবে কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা৷ দীর্ঘ মামলার গেরোয় থমকে রয়েছে মহার্ঘভাতা৷ কলকাতা হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায় ঘোষণার পর তা পুনর্বিবেচনা করতে আবেদন জানিয়েছে রাজ্য৷ রাজ্যে বিরুদ্ধে পাল্টা আদালত অবমাননার মামলাও দায়ের করেছে রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠন৷ মহার্ঘ ভাতা মামলাসংক্রান্ত জোড়া মামলায় আজ নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য ট্রাইব্যুনাল৷
মামলা প্রসঙ্গে আইনজীবী সরদার আমজাদ আলি জানিয়েছেন, ‘‘ট্রাইব্যুনাল একথা মনে করেছেন, তাঁদের রায়ের লেখা হয়েছে, ২৬ জুলাই ২০১৯-এর পর যদি কোনও উচ্চ আদালত কোন রায় দিয়ে থাকে, রায় পুনর্বিবেচনা করার আইন যা আছে, তাতে ২৬ জুলাই ২০১৯-এর পর কোনও রায় আদালত দিয়ে থাকে, তাহলে তা পুনর্বিবেচনা করার এক্তিয়ার আমাদের (স্যাট) নেই৷ এই কথা বলে রাজ্য সরকারের আবেদন খারিজ করে দেয়৷ এবং রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতার যে রায় ছিল, সেই রায়কে দেখে রিভিউ অ্যাপ্লিকেশন চূড়ান্ত রায়ের খারিজ করে দিয়েছে৷’’
চূড়ান্ত রায়ে স্যাটের তরফে জানানো হয়েছিব, আগামী (সেপ্টম্বর) তিন মাসের মধ্যে বকেয়া মহার্ঘ ভাতা দেয়ার বিষয়ে নীতি নির্ধারণ করতে হবে রাজ্যকে৷ ৬ মাসের মাধ্যে ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালু হওয়ার আগে মেটাতে হবে বকেয়া৷ কিন্তু তা করা হয়নি৷ এরপর অক্টোবর মাসে রিভিউ পিটিশন দাখিল করে রাজ্য৷ নিয়োগ অনুযায়ী এক মাসের মধ্যে রিভিউ পিটিশন দাখিল করতে হয়৷ কিন্তু, তা হয়নি৷ আদালতে সেই মামলা গ্রহণ করা হলেও আজ তা খারিজ করে দেয় স্যাট৷ মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকারের তরফে দিল্লি আদালতের একটি রায় তুলে ধরে জানানো হয়, করোনা বে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা আপাতত স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে৷ ফলে এক্ষেত্রে যেন তাই করা হোক৷ কিন্তু, সেই দাবি দাবি গ্রহণযোগ্য হয়নি স্যাটে৷ জানানো হয়, মূল রায় আগেই দেওয়া হয়েছে৷ তা নিয়ে অনেক শুনানিও হয়ে গিয়েছে৷ ফলে, রায় ঘোষণার পর কোনও মামলার বিষয় গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না৷ এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের কোনও বক্তব্য থাকে তাহলে তারা উচ্চ আদালতে যেতে পারে৷ গত জুলাই মাসে যে রায় দেওয়া হয়েছিল, সেই রায় পুনর্বহাল করেছে স্যাট৷ একইসঙ্গে আজ রায় পুনর্বিবেচনা করার যে আগে জানানো হয়েছিল, তাও খারিজ হয়ে গিয়েছে৷ ফলে এই মুহূর্তে কলকাতা হাইকোর্টে অথবা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া আর কোনও বিকল্প পথ রাজ্য সরকারের হাতে নেই বলে মনে করছেন সরকারি কর্মচারী মহলের একাংশ৷
আদালত সূত্রে খবর, আজ ওয়েস্টবেঙ্গল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাঘ ও প্রশাসনিক সদস্য সুবেশ দাসের বেঞ্চে আজ দুপুরে কর্মচারীদের পক্ষে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ মামলার ইতিহাস বলছে, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্য ট্রাইবুনাল ও কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়৷ মামলা দায়ের হয় ৫০ শতাংশ মহার্ঘভাতা চেয়ে৷ কনফেডারেশন অফ গভমেন্ট এমপ্লয়িজ সংগঠনের তরফে রাজ্য ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়৷ এখন সেই মামলার হাইকোর্ট হয়ে স্যাটে যায়৷ তা আজ খারিজ হয়ে গিয়েছে৷
মহার্ঘ ভাতা সরকারি কর্মচারীদের অধিকার নয়, আগেই রায় ঘোষণা করেছিল রাজ্য ট্রাইবুনাল৷ সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হয়েছিল মামলা৷ রাজ্যের আর্জি খারিজ করে দিয়েছিল হাইকোর্ট৷ হাইকোর্টের তরফে ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করে জানানো হয়েছিল, সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালু হওয়ার আগেই মিঠে দিতে হবে৷ তিন মাসের মধ্যে নীতি নির্ধারণ করতে হবে৷
সরকারি কর্মচারীদের অভিযোগ, পয়লা জানুয়ারি থেকে ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালু হয়ে গেলেও মহার্ঘ ভাতা নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি রাজ্য সরকার৷ উল্টে রায় পুনর্বিবেচনা করার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন জানিয়েছে রাজ্য৷ হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগ তুলে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করেছে কর্মচারী সংগঠন৷ এই নিয়ে চলছে মামলা৷ আজ সেই মামলার নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷