কলকাতা: বেকাতত্বের যন্ত্রণা বুকে নিয়ে আরও একটি বঙ্গাব্দ কাটিয়ে দিলেন বাংলার কয়েক লক্ষ শিক্ষিত কর্মহীন যুবক-যুবতী৷ ভোটের বাজারে কর্মসংস্থান প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়িলেও সেই আকাল চাকির বাজারে৷ দেশে-বিদেশের একাধিক পরিসংখ্যানে তার স্পষ্ট ইঙ্গিতও পাওয়া গিয়েছে৷ বাংলার বেকারত্ব যে দিনে দিনে লাফিয়ে বাড়ছে তা রিপোর্ট আকারে আগেই জানিয়েছে কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রক৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, বাংলায় একলক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে৷ ভোটের বাজারে তথ্য পরিসংখ্যান নিয়ে শাসক-বিরোধী শিবিরে টানাপোরেন চললেও স্কুল সার্ভিস কমিশনের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে বেশ কিছু সুবখবর৷ উচ্চ প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগে একাধিক ভাল খবরও শোনা যাচ্ছে৷
সূত্রে খবর, নির্বাচনী বিধিনিষেধ খতিয়ে দেখে খুবর শীঘ্রই বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে চলেছে কচ্ছপের গতিতে এগিয়ে যাওয়া স্কুল সার্ভিস কমিশন৷ উচ্চ প্রাথমিকে তৃতীয় দফার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ওয়েটিং তালিকায় থাকা চাকরিপ্রার্থীদের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আপডেট৷
জানা গিয়েছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আপার প্রাইমারির তৃতীয় দফার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে এই মাসেই৷ তবে, নতুন করে কাউন্সেলিংয়ের বিজ্ঞপ্তি দিতে গেলে বিধি ভঙ্গের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে কমিশনের৷ অন্যদিকে, নবম-দশমে চতুর্থ কাউন্সেলিং প্রক্রিয়াও এই মাসে শুরু করার পরিকল্পনা করছে৷ আপার প্রাইমারি তৃতীয় দফার নিয়োগ শেষ হওয়ার পর খুব সম্ভবত জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে৷ নবম-দশমে জয়েনিং নোটিসও খবর শীঘ্রই প্রকাশিত হতে পারে বলে খবর৷
অন্যদিকে, SSC-র ওয়েটিং লিস্টে থাকা অধিকাংশ চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগ সমস্যা মেটাতে বড়সড় উদ্যোগ নিল কমিশন৷ গত মঙ্গলবার বিকাশভবনে চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে পাঁচ জনের কমিটির বৈঠক হয়৷
ওই কমিটির অন্যতম সদস্য এবং কমিশনের চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার বলেন, ‘আইনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে যতটা সম্ভব ওয়েটিং লিস্টে থাকা প্রার্থীদের নিয়োগের ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ওয়েটিং লিস্টে থাকা প্রার্থীদের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে৷’ তবে, এদিনের বৈঠকে কোনও অনশনকারীদেক ডাকা হয়নি৷ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পর প্রার্থীদের ডাকা হবে বলে তিনি জানান৷
ওয়েটিংলিস্টে থাকা এসএসএসি চাকরিপ্রার্থীরা চাকরির দাবিতে টানা প্রায় এক মাস অনশন চালিয়ে গিয়েছেন৷ তাঁদের দাবি-দাওয়া নিয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়৷ সেই কমিটির কাছে প্রার্থীরা তাঁদের দাবি লিখিত ভাবে জানান৷
স্কুল সার্ভিস কমিশনের আন্দোলনরত প্রার্থীদের জন্য চাকরির বন্দোবস্ত করছে সরকার। তবে তা ভিন্ন পথে। মূলত চেপে রাখা বা আন রিপোর্টেড শূন্যপদে আন্দোলনকারী এসএসি প্রার্থীদের নিয়োগ করা যায় কি না তা খথিয়ে দেখা হচ্ছে। এই মর্মেচাকরি দিতে শূন্যপদও খুঁজতে শুরু করেছে সরকার। বিষয়টি ইতিবাচক হলেও এনিয়ে আইনি জটিলতায় পড়তে হতে পারে সরকারকে। তবে এসব দিকে কান না দিয়েই সরকারের তরফে ইতিমধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেই কমিটিই শূন্যপদ খোঁজার কাজ শুরু করেছে।
বলা বাহুল্য, বেশ কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় কমিশন এসএসসির আঞ্চলিক অফিসগুলি থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে। এরফলে সেখানকার যাবতীয় কর্মপদ্ধতি কেন্দ্রীয় অফিস হস্তান্তর করেছে। সেই সময় কোনও কারণ বসত বেশকিছু শূন্যপদের তালিকা আঞ্চলিক অফিসগুলি থেকে কেন্দ্রীয় কমিশনের হাতে এসে পৌঁছায়নি। এখন আন্দোলনকারীদের চাকরি দিতে সেই আনরিপোর্টেড শূন্যপদের সন্ধান শুরু করেছে রাজ্য। একই সঙ্গে বিশেষ বদলি-সহ যে চেপে রাখা শূন্যপদের তালিকা রয়েছে সেগুলিও এক্ষেত্রে কাজে লাগানো হতে পারে।
এদিকে গোটা বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশার অন্ত নেই। কেননা, প্রথম কাউন্সেলিংয়ের পর যাঁরা চাকরি পেয়ে গিয়েছেন তাঁদের অনেকেরই পোস্টিং বাড়ির থেকে অনেক দূরে। এদিকে এই চেপে রাখা পদে যাঁরা চাকরি পাচ্ছেন তাতে দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগই নিজের এলাকায় সুযোগ পাচ্ছেন। এসব দেখে প্রথম কাউন্সেলিংয়ে চাকরি পাওয়া প্রার্থী হয়তো অবমাননার অভিয়োগ তুলে মামলা করতে পারেন। সাধারণত একই নিয়মে এসএসসি-র নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে থাকে। এভাবে শুধু আন্দোলনকারীের ঠান্ডা করতে নিয়ম বহির্ভূত কাজ হলে, অন্য চাকরি প্রার্থীরা অথম চাকরি পেয়ে যাওয়া কোনও ক্যান্ডিডেট কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। তাতে সুখ দূরে থাকে স্বস্তিও কাছ ঘেঁষবে না তা বলাই বাহুল্য।