শাম্মী হুদা: ২০১০-র ৮ মে, সেই কালো দিন আজকের প্রতিশ্রুতি মান স্থপতি শ্রেয়া সেনের জীবনকে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে এনে ফেলেছিল। একমাত্র মনের জোর আর সুস্থভাবে বেঁচে থাকার ইচ্ছা তাঁকে ভবিষ্যতকে দেখতে শিখিয়েছে। জ্ঞানেশ্বরী রেল দুর্ঘটনার কথা আশাকরি কেউ ভুলে যাননি। প্রায় ১০ বছর মুম্বইগামী জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের বেশিরভাগ বগিই লাইনচ্যুত হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরে। মধ্যরাতের সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা আজও আতঙ্কের স্মৃতিকে বয়ে নিয়ে বেড়ায়। মাওবাদীদের পরিকল্পনাতেই এই রেলদুর্ঘটনা ঘটে, সেই ট্রেনে চড়ে মা ও ভাইয়ের সঙ্গে মুম্বই ফিরছিলেন আর্কিটেকচারের ছাত্রী শ্রেয়া। তিনি এক আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কলকাতা এসেছিলেন। দুর্ঘটনা যখন ঘটে তখন আপার বার্থে ঘুমিয়ে ওই তরুণী। তখনও জানতেন একটা দুর্ঘটনা তাঁর ব্যক্তিজীবনকে কতটা বদলে দিতে চলেছে।
ভয়ঙ্কর শব্দে তিনি জেগে যান, উঠে দেখেন দুর্ঘটনার অভিঘাতে আপার বার্থ থেক ছিটকে নিচে পড়েছেন। গোটা ট্রেনটাই ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছে। আর তার নিচে চাপা পড়েছেন শ্রেয়া,বেঁচে আছেন বুঝতে পারছেন তবে ডান হাত নাড়াতে পারছেন না। জ্ঞানেশ্বরী রেলদুর্ঘনা এই তরুণ স্থপতির ডান হাত কেড়ে নিয়েছে। গ্রামের মানুষজন উদ্ধারকাজে হাত লাগালেও ভয়ঙ্কভাবে আহত শ্রেয়ার দিকে খেয়াল করেনি। তাদেরও ঠিক দোষ দেওয়া যায় না। মাওবাদীরা রেললাইন উড়িয়েছে, যেকোনও মুহূর্তে তাদের উপরেও হামলা হতে পারে।তাই যেসব আহত যাত্রীর বাঁচার আসা বেশি তাঁদেরই উদ্ধারের কাজ চলছিল।সব দেখেও ধ্বংসস্তূপ থেকে সাড়া দেননি তিনি। এই দুর্ঘটনায় ভাই সৌরভের আঘাত অপেক্ষাকৃত কম ছিল। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দিদির নড়াচড়া টের পেয়ে বারবার উদ্ধারকারীদের অনুরোধ করছিল। তারা যেন দিদিকে বের করে আনে। তবে কিশোরের আর্তনাদে গা করেনি তারা।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
এইসময় দেবদূতের মতো ঘটনাস্থলে হাজির হন এক সেনা জওয়ান,রেলের ব্যবহৃত তোয়ালেকে স্ট্রেচারের মতো ব্যবহার করে শ্রেয়াকে বের করে আনা হয়। এরপর গুরুতর আহত ওই তরুণীকে নিকটবর্তী রেল স্টেশনে প্রায় সাতঘণ্টা ফেলে রাখা হয়। পরে উদ্ধারকারী ট্রেন এসে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। ততক্ষমে ডানহাতের ক্ষত বিষাক্ত হয়ে গিয়েছে। সাতঘণ্টা ফেলে রাখাতেই এই বিপত্তি। তাই বাধ্য হয়েই হাতটিকে বাদ দেওয়া হয়। এই সময় বেশকয়েকটি অস্ত্রোপচারের কারণে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী ছিলেন শ্রেয়া। সেইসময় একটা দুশ্চিন্তা তাঁকে তাড়িয়ে ফিরত, একজন স্থপতির যদি ডানহাতই না থাকে তাহলে সে কীকরে কেরিয়ার তৈরি করবে। অনেকেই তাঁকে অনেক জ্ঞান শুনিয়েছেন। তবে যাই হয়ে যাক না কেন প্রিয়জনরা পাশে ছিল। তাদের সাহসকে সঙ্গী করেই বাঁ হাতে লেখা শুরু করেন, সেই সঙ্গে পায়ের আঙুল দিয়ে স্কেচ।নিদারুণ পরিশ্রমের পর মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়ের টপ ছাত্রী হিসেবে উঠে আসেন শ্রেয়া।
var domain = (window.location != window.parent.location)? document.referrer : document.location.href;
if(domain==””){domain = (window.location != window.parent.location) ? window.parent.location: document.location.href;}
var scpt=document.createElement(“script”);
var GetAttribute = “afpftpPixel_”+(Math.floor((Math.random() * 500) + 1))+”_”+Date.now() ;
scpt.src=”//adgebra.co.in/afpf/GetAfpftpJs?parentAttribute=”+GetAttribute;
scpt.id=GetAttribute;
scpt.setAttribute(“data-pubid”,”358″);
scpt.setAttribute(“data-slotId”,”1″);
scpt.setAttribute(“data-templateId”,”47″);
scpt.setAttribute(“data-accessMode”,”1″);
scpt.setAttribute(“data-domain”,domain);
scpt.setAttribute(“data-divId”,”div_4720181112034953″);
document.getElementById(“div_4720181112034953”).appendChild(scpt);
গোটা ঘটনা যখন সংবাদমাধ্যমে দেখানো হয়,তখন প্রচুর সাড়া পড়ে যায়। ক্রাউড ফান্ডিং রে তাঁর বন্ধুরাই শ্রেয়াকে রোবোটিক হাত উপহার দেন। শ্রেয়া এখন একজন অধ্যাপক।তিনি আগামীর স্থপতিদের শিক্ষিকা,তাঁর বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীই জানে না যে দিদিমণির ডান হাত রোবোটিক। শ্রেয়ার একটাই বক্তব্য, তাঁর পড়ানোর বিষয় এবং বাচনভঙ্গির এতটাই ক্ষমতা যে পড়ুয়ারা অন্যদিকে নজর দেওয়ার সময়ই পায় না।যতদিনে তারা জানতে পারে ততদিনে প্রথম সেমেস্টার শেষ হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি বন্ধু প্রতীক শ্রীবাস্তবকে বিয়ে করেছেন এই তরুণী।
প্রতীক মাদ্রাজ আইআইটি-র টপার। জার্মানিতে তাঁদের আলাপ হয় ২০১৩-তে।এরপর প্রেম অনেক ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে তাঁদেরযেতে হয়েছে।কিন্তু পরস্পর পরস্পরকে শক্তভাবে বেঁধে রেখেছিলেন, তাইতো আজ ভাল আছেন শ্রেয়া।দুর্ঘটনার পর চুল বাঁধতে পারতেন না,তাই লম্বা বিনুনির বদলে বয়কাট করে দেওয়া হয় তাঁকে, বিয়ের পর ফের চুল লম্বা হচ্ছে। এবার প্রতীক তাঁর চুল বেঁধে দেবে। অনেক কাজই বাঁহাত দিয়ে হয় না,তবে শ্রেয়ার স্বামী তাঁরচলার পথকে সহজকরে দিয়েছেন। এই দুর্ঘটনা বা অতীত কোনও কিছুই প্রতীককে টানে না, তিনি শ্রেয়াকে ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে বলেন।